ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ারদের ভুল বার্তা দেয়া হচ্ছে ;###;লক্ষ্যমাত্রা পূরণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা

হরতাল অবরোধ ॥ বহির্বিশ্বে গার্মেন্টস নিয়ে দেশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্ট

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

হরতাল অবরোধ ॥ বহির্বিশ্বে গার্মেন্টস নিয়ে দেশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্ট

এম শাহজাহান ॥ অবরোধ-হরতালের কারণে বহির্বিশ্বে ফের ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে গার্মেন্টস খাত। এতে ভিশন ’২১ সামনে রেখে ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩ দিনের অবরোধ ও হরতালের কারণে এ শিল্পের প্রায় ৯৭৫ কোটি টাকার নিট ক্ষতি হয়েছে। ফলে গার্মেন্টস খাত নিয়ে যে রোডম্যাপ করা হয়েছে তা ওই সময়ের মধ্যে কতটুকু বাস্তবায়ন হবে এ নিয়েও সংশয় রয়েছে উদ্যোক্তাদের। এজন্য চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করে রফতানিকারকরা বলছেন, অর্থনীতির স্বার্থে বিএনপি নেত্রীকে হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মকা- পরিহার করে বিকল্প কর্মসূচী নির্ধারণ করতে হবে। তারা বলছেন, রাজনৈতিক এই কর্মসূচীর কারণে বিদেশী ক্রেতারা এখন আর বাংলাদেশে আসছে না। তাদের সঙ্গে দেখা করতে সিঙ্গাপুর, ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া যেতে হচ্ছে। এতে এই শিল্পের ইমেজ সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠছে। অথচ রফতানি শিল্পের অগ্রগতি সবর্দা ইতিবাচক ভাবমমূর্তির ওপর নির্ভর করে। এদিকে পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের হরতাল-অবরোধের কারণে এয়ারফ্রেইট, ডিসকাউন্ট, ক্যানসেলেশন, ডেফার্ড পেমেন্টের শিকার এ শিল্পের উদ্যোক্তারা প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, হরতাল-অবরোধে প্রথম ছয়দিনে ৪৫০ কোটি টাকার নিট ক্ষতি হয়েছে যা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৯৭৫ কোটি টাকায়। টাকার অঙ্কে বছরে ২ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকার পোশাক রফতানি হচ্ছে। সেই হিসেবে একদিনের অবরোধ ও হরতালে ৬৭৫ কোটি টাকার পোশাক রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়। আর প্রতিদিন এ শিল্পের প্রকৃত উৎপাদনের মূল্যমান হচ্ছে প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা। হরতাল-অবরোধের কারণে ৫০ শতাংশ বিঘিœত হলেও প্রতিদিন উৎপাদন ব্যাহত হয় ২১৫ কোটি টাকার। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পোশাক শিল্প কঠিন ইমেজ সঙ্কটের মধ্যে পড়ে গেছে। গুণগত মান ধরে রাখা এবং সময়মতো পণ্য সরবরাহের পরও শুধু রাজনৈতিক কারণে পোশাক শিল্প খাত কঠিন সময় পার করছে। আমাদের ব্যবসা হারানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, গত ২০১৩ সালে এয়ারপোর্ট থেকে ক্রেতারা অর্ডার না দিয়ে ফিরে যেতেন। আর এখন তারা আসছেনই না। আমাদেরকেই সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড কিংবা ভারতে গিয়ে তাদের সঙ্গে নেগোশিয়েট করতে হচ্ছে। জানা গেছে, সমুদ্রপথেই তৈরি পোশাক রফতানি করা হয়ে থাকে। তবে এখন হরতাল-অবরোধের কারণে এয়ারফ্রেইট করা হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া পুলিশী পাহারায় এখন পণ্য পরিবহন হলেও ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের ভাড়া আগের চেয়ে ৪০-৪৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক ট্রাকমালিকই নিরাপত্তার অজুহাতে পণ্য নিয়ে যেতে চাচ্ছেন না। ফলে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পেতেও সমস্যা হচ্ছে। বস্ত্র খাতের কাঁচামালের (তুলা) প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। পুলিশ পাহারায় সীমিত পরিসরে এসব কাঁচামাল আনা যাচ্ছে। তবে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কারখানায় সময়মতো কাঁচামাল আনতে না পারায় বস্ত্র উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিকমতো করতে পারছেন না তারা। সূত্র মতে, পোশাক শিল্পের ঈর্ষণীয় সাফল্য ব্যর্থ করে দিতে বাংলাদেশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের অবকাঠামো সম্পর্কে ক্রেতাদের (বায়ার) ভুল বার্তা দেয়া হচ্ছে। ক্রেতা ও বিদেশী ভোক্তাদের কাছে নেতিবাচক ধারণা দিতে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঘন ঘন শ্রম অসন্তোষ, শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যাকা-সহ বিভিন্ন বিষয় ফোকাশ করতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু প্রভাবশালী প্রচার মাধ্যম জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ শিল্পের মালিকরা দাবি করছেন, পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ এক নম্বরে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু এ খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। ষড়যন্ত্র উৎপাটন করে শিল্পের চাকা সচল রাখা সম্ভব হলে মেড ইন বাংলাদেশ খ্যাত তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বে প্রথমস্থান অর্জন করতে সক্ষম হবে।
×