ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানুষ হত্যা, গাড়ি পোড়ানো বন্ধ করুন ॥ এরশাদ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

মানুষ হত্যা, গাড়ি পোড়ানো বন্ধ করুন ॥ এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া এটা কোন্ ধরনের রাজনীতি? মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। ক্ষমতায় যেতে আর কত লাশের প্রয়োজন আপনার? তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ভাগ্য পরিবর্তনের নামে মানুষ হত্যা, এটা কোন রাজনীতি হতে পারে না। শনিবার কাকরাইলস্থ জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সহিংসতা জ্বালাও-পোড়াও দমন-নিপীড়নের’ বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টি এ সমাবেশের আয়োজন করেছে। সমাবেশে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘মানুষকে পুড়িকে পুড়িয়ে মারার কারণ কি? আপনি না নারী? শুনেছি নারীর মন কোমল হয়। মানুষের জন্য কি আপনার একটুও সহানুভূতি হয়না। ক্ষমতা এত বড় জিনিস? মানুষ ও মানবতাবোধ ভুলে যাবেন। তা হতে পারে না।’ বিশ্ব এজতেমার সময়ও অবরোধ প্রত্যাহার না করায় বিএনপির সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, ‘আপনারা সব সময় ধর্ম ধর্ম করেন। কিন্তু ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাতে জানেন না। বিশ্ব এজতেমায় অবরোধ তুললেন না। কি ধরনের মুসলমান আপনারা। জানতাম রাজনীতিবিদদের মানুষ শ্রদ্ধা করত। এসব কারণে মানুষ এখন আর নেতাদের শ্রদ্ধা করবে না। ভাগ্য পরিবর্তনের নামে মানুষ হত্যা করছেন এটা কোন্ ধরনের রাজনীতি। রাজনৈতিক সহিংসতার নামে যাদের হত্যা করা হচ্ছে তারা তো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। এরা সবাই সাধারণ মানুষ। তবে কেন তাদের টার্গেট করে হত্যা করছেন?’ তিনি বলেন, পুড়িয়ে মারার রাজনীতি জাতীয় পার্টি করে না। একটি দল মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করবে; আমরা তা চেয়ে চেয়ে দেখতে পারি না। এর বিহিত দরকার। দেশ ধ্বংস হচ্ছে। কারখানা বন্ধ হচ্ছে। থেমে যাচ্ছে পণ্য উৎপাদন। জাতি আজ মহাদুর্যোগে উপনীত হয়েছেÑ এমন মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, আইলা ও সুনামির চেয়ে মানুষের সৃষ্টি দুর্যোগ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। দুর্যোগের নামে সহিংসতা, বর্বরতা, হিংস্রতা চলছে। মানুষের রক্ত নিয়ে হোলিখেলা কবে বন্ধ হবে জানি না। হত্যা, বোমাবাজিসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের জন্য কারও কোন সমবেদনা নেই। সহমর্মিতা নেই। আমরা সবাই যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যেতে চাই। এটা কেমন রাজনীতি। মানুষ মেরে ক্ষমতায় যাওয়া যায় না, হয়ত এ কথা সবাই আমরা ভুলে গেছি। ক্ষমতায় যেতে হলে প্রয়োজন মানুষকে ভালবাসা। বিএনপিকে উদ্দেশ করে এরশাদ বলেন, ভালবাসা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান না আপনি। ক্ষমতায় যেতে আর কত লাশের প্রয়োজন আপনার। কত মানুষ মারতে চান। কত লাশ হলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে আমরা জানি না। তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলমান সহিংসতার প্রতিবাদে আপনারা রাস্তায় নেমে আসুন। পাড়া মহল্লা, রাস্তায় প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। প্রতিবাদ করুন। ওদের ঘৃণা করুন। ঘরে বসে থেকে অন্যায় সহ্য করতে পারি না। মানুষকে হত্যা করা সবচেয়ে বড় অপরাধ। আমরা এমন রাজনীতি চাই না। জনস্বার্থের রাজনীতি চাই। তিনি বলেন, সহিংস রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে নতুন রাজনীতির ধারা সূচনা করতে হবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, আমি হুঁশিয়ার করে বলতে চাই-গাড়ি পোড়াবেন না। মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে বোমাবাজি থামান। সন্ত্রাসী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করুন। মানুষকে মারতে তরুণদের হাতে অস্ত্র বোমা তুলে দেবেন না। তরুণ সমাজকে স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ করে দিন। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে এরশাদ বলেন, আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনুন। দেশের উন্নয়ন হবে। সংঘাত কমবে। নাশকতা হবে না। তিনি বলেন, আমি রক্তপাত চাইনি বলেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়েছিলাম। তখন দেশে এ রকম অরাজকতা হয়নি। এখন আপনারা রাজনীতির নামে জনগণকে কি দেখাতে চান। তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা সবাই জাতীয় পার্টির পতাকাতলে আসুন। বড় দুই দলের রাজনীতি করার কোন অধিকার থাকতে পারে না। চিরকালের জন্য এই দুই দলকে পরিত্যাগ করুন। তাদের সঙ্গে শান্তিকামী মানুষের সম্পর্ক থাকতে পারে না। জনগণই যদি সকল ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে তাহলে তাদের পুড়িয়ে মারেন কি করে? এমন প্রশ্ন রেখে সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ বলেন, জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। মানুষ পুতুল নয়। মানুষকে ভালবাসতে শিখুন। সম্মান করুন। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সবাইকে এক হয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলাম। সবাই মিলে আলোচনায় বসলে শান্তির পথ হয়ত বের করা যেত। কিন্তু রাজনীতির নামে এখন যা হচ্ছে এতে গোটা জাতি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঘৃণা করছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অপরাজনীতি থেকে মুক্তি চায়। জাতীয় পার্টিও চায় তাদের থেকে মুক্তি। এরশাদ বলেন, সকল রাজনৈতিক দল মিলে সেমিনার করলে হয়ত রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণ করার সমাধান বের হতো। আমার এমন প্রস্তাবে কেউ সাড়া দেয়নি। শেষ পর্যন্ত চলমান সমাধানে হয়ত একসঙ্গে বসতে হবে। এছাড়া সামনে হয়ত আর কোন বিকল্প নেই। চলমান রাজনৈতিক বর্বরতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অবরোধ আর হরতালের কারণে শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে। কৃষকের মাথায় হাত। তারা কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারছে না। কৃষকের কষ্টে উৎপাদিত ফসল এখন নষ্ট হচ্ছে। উৎপাদন থেমে গেছে। অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাস জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া এটা কোন্ ধরনের রাজনীতি। সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ আরও বলেন, সরকারের দায়িত্ব জান ও মালের নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু সরকার এতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৫ জন মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। দিনমজুরের ঘরে কোন খাবার নেই। অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, এমএ হান্নান, সুনীল শুভ রায় প্রমুখ।
×