ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় চলছে চোরাগোপ্তা হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় চলছে চোরাগোপ্তা হামলা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ গত বছরের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে চালানো জেলাগুলোতে আবারও সংঘবদ্ধ তা-বের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের। সাময়িক সে পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় পরিকল্পনাকারীদের নির্দেশে সারাদেশে চলছে চোরাগোপ্তা হামলা। তা-ব চালানো সেই জেলাগুলোসহ বর্তমানে একুশ জেলায় পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। আরও ৩৫ জেলায় বিজিবি মোতায়েনের প্রক্রিয়া চলছে। জেলাগুলোতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি তালিকা অনুযায়ী নাশকতাকারী, তাদের ইন্ধনদাতা ও অর্থদাতাদের গ্রেফতারের অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানে স্বেচ্ছায় অংশ নিচ্ছেন স্থ’ানীয় জনগণ ও থানাভিত্তিক গঠিত কমিউনিটি পুলিশের বাছাই করা সদস্যরা। শুক্রবার গভীররাত থেকে শনিবার পর্যন্ত চলমান অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে শতাধিক। ভোটের বিষয়ে নির্বাচনের আগে কথা বলায় এবং ভোট দিতে যাওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত-শিবির দেশের হিন্দু অধ্যুষিত জেলাগুলোতে ভয়াবহ তা-ব চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় শত শত হিন্দু বাড়িঘর, দোকানপাট আর উপাসনালয়ের মতো পবিত্র স্থান। যুদ্ধক্ষেত্রের মতো ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় জেলাগুলোতে। সবচেয়ে বেশি তা-ব চালানো হয় যশোর, সাতক্ষীরা, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, কক্সবাজারের হিন্দু পাড়াগুলোতে। এসব জেলায় প্রভাব থাকার সুযোগে তা-ব চালায় বিএনপি-জামায়াত-শিবির। অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল ওই হামলায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ আর আর্থিক সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত উপাসনালয়, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর দোকানপাট নতুন করে নির্মাণ করে দেয় বিজিবি। এমন ঘটনার পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিজিবির উর্ধতন সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে বাড়িঘর নির্মাণ করে দেয়ার পর থেকেই চরম ক্ষুব্ধ বিএনপি-জামায়াত-শিবির। তারা আবারও জেলাগুলোতে নির্মিত বাড়িঘর, দোকানপাট, উপাসনালয়ে তা-ব চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। তারা সুযোগ খুঁজছিল। রাজনৈতিক ঢামাঢোলের সুযোগে সরকারবিরোধীরা আবারও তা-ব চালানোর পরিকল্পনা করছিল। বিষয়টি বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মন্ত্রিসভার রদবদলের পর গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শন শেষে সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তালিকা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা-বের শিকার হওয়া জেলাগুলোতে নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিশেষ তালিকা তৈরির কথাও বলা হয়। নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরির পাশাপাশি গ্রেফতারের জন্য তাগাদাও দেন প্রধানমন্ত্রী। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিনে দেশে ভয়াবহ নাশকতাসহ সরকারবিরোধী কঠোর কর্মসূচী ঘোষণার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছিল ২০ দলীয় জোট। নাশকতার প্রথম টার্গেট ছিল হিন্দু জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত জেলাগুলো। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যেসব জেলায় তা-ব চালানো হয়েছিল, সেসব জেলাই ছিল প্রথম টার্গেট। পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় তা-ব চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ আর আর্থিক সহায়তায় বিজিবির তৈরি করে দেয়া ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, দোকানপাট আর উপাসনালয়গুলো। তা-ব চালানোর আগাম তথ্যের ভিত্তিতে চলতি বছরের প্রথম দিন থেকেই জেলাগুলোতে রেডএলার্ট জারি করা হয়। সতর্কাবস্থার কারণে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের তা-ব চালানোর পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় সারাদেশে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। হামলাকারীদের গ্রেফতারে গত ৬ জানুয়ারি থেকেই সারাদেশে যৌথ অভিযান চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর তৈরি করা নাশকতাকারীসহ সদ্য আত্মপ্রকাশ করার চোরাগোপ্তা হামলাকারীদের তালিকা অনুযায়ী অভিযান চলছে। অভিযানে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিজিবির পাশাপাশি স্বেচ্ছায় স্থানীয় জনগণসহ থানাভিত্তিক গঠিত কমিউনিটি পুলিশের বাছাই করা সদস্যরা অংশ নিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ পিলখানায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে বোমাবাজদের প্রয়োজনে গুলি করতেই দ্বিধা করা হবে না। যতদিন প্রয়োজন ততদিন মাঠে থাকবে বিজিবি। গত ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারকে সহায়তা করতে মাঠে রয়েছে বিজিবি। দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে বিজিবি নিয়মিত টহল দিচ্ছে। একুশ জেলায় পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি টহল দিচ্ছে। অবরোধের মধ্যে রাতে মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলেও বিজিবি সহায়তা করছে। হাজার হাজার যানবাহনকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সহায়তা করছে বিজিবি। একুশ জেলায় বিজিবি টহল দিচ্ছে। প্রতিদিন ৮০ থেকে ৮৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকছে। আরও ৩৫ জেলায় বিজিবি মোতায়েনের প্রক্রিয়া চলছে। এজন্য ৭০ থেকে ৭৫ প্লাটুন বিজিবি প্রস্তুত আছে। বিজিবি অন্তত অর্ধলাখ যানবাহন দেশের বিভিন্ন জেলায় নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহম্মেদ বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও র‌্যাবকে বিজিবি প্রয়োজনীয় সহায়তা করছে। তালিকা মোতাবেক চলমান যৌথ অভিযানে পুলিশ ও র‌্যাবকে সহায়তা করে যাচ্ছে বিজিবি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে যেসব জেলায় ব্যাপক তা-ব চালিয়ে বাড়িঘর, দোকানপাট, উপাসনালয় গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, সেসব জেলায় বিশেষ নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখছে। তাদের সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে না। নাশকতাকারীদের প্রতিহত করতে পুলিশ সব ধরনের প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেবে। সরকারের তরফ থেকেই নাশকতার ক্ষেত্রে জিরো ট্রলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, হরতাল, অবরোধের নামে সারাদেশে চলমান নাশকতায় শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
×