নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৭ জানুয়ারি ॥ স্বামীর চাপে এক মা তার গর্ভের নবজাতক সন্তানকে বাঁশঝাড়ে ফেলে দিয়ে আবার ঘটনাচক্রে নিজ কোলে ফিরে পেয়ে আনন্দাশ্রু ঝরিয়ে এলাকাবাসীর দেয়া নাম ফালানী নামে ডাকলেন। সেই থেকে মেয়ে শিশুটির নাম ফালানী। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার পৌর শহরের সিংগাআটা গ্রামে। বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। শনিবার তা প্রকাশ পেয়ে যায়।
জানা যায়, ধনবাড়ি পৌর শহরের সিংগাআটা গ্রামের কাঠমিস্ত্রি বলরাম সূত্রধরের প্রথম স্ত্রী সন্তান হওয়ার সময় মারা যান। দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন বলরাম। সেই ঘরে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে এক মেয়ে প্রতিবন্ধী। সে স্ত্রীও মারা গেলে তৃতীয়বারের মতো আবার বিয়ে করেন বলরাম। সে ঘরে এক ছেলে। ছেলের বয়স এক বছর হতে না হতেই তৃতীয় স্ত্রী আরতী রানী সূত্রধর আবার সন্তান সম্ভবা হন। বাচ্চা হলে তোকে বাঁচিয়ে রাখব না বলে স্বামী বলরাম আরতীকে ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। পাশাপাশি স্বামী বলরাম সূত্রধর গোপনে আরতীর পেটের বাচ্চাটাকে নষ্ট করার চেষ্টা চালান। কিন্তু সব চেষ্টা তার ব্যর্থ হয়। এদিকে আস্তে আস্তে সন্তান হওয়ার দিন ঘনিয়ে আসে। গত ৮ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে সন্তান হওয়ার ব্যথা শুরু হলে একই গ্রামের পাশের বাড়ির ইব্রাহীমের বাঁশঝাড়ে গিয়ে জীবিত কন্যা সন্তান জন্ম দেন আরতী। স্বামীর হুমকির কথা মনে করে জীবিত সন্তানটিকে বাঁশঝাড়ে গাছের লতা-পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে চলে আসেন। ওই দিন বিকেলে জঙ্গলে বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনে পাশের বাড়ির ইব্রাহীমের স্ত্রী বাঁশঝাড়ে গিয়ে দেখেন ওই নবজাতককে। শিশুটিকে দেখে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে দৌড়ে আসেন। তন্মধ্যে বলরামের বড় বোন শিশুটিকে তার ছোট ভাইয়ের বলে দাবি করে এবং বাড়িতে নিয়ে নবজাতককে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। শিশুকে ফিরে পেয়ে বলরামের স্ত্রী কেঁদে কেঁদে বলেন, এ ঘটনা আমিই করেছি। এ আমার সন্তান, আমার ফালানী। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ধনবাড়ী পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর আবদুল মজিদ মিন্টু ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ সরকারসহ অনেকেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, শিশুটি জীবিত ও সুস্থ আছে এবং এলাকাবাসী তার নাম রেখেছেন ‘ফালানী রানী সূত্রধর’।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: