ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের শিশু মৃত্যু রোধে অগ্রগতি শিক্ষণীয় ॥ বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশের শিশু মৃত্যু রোধে অগ্রগতি শিক্ষণীয় ॥ বিশ্বব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যু হারে শিক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে। গত ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত ডেমোস্টিফাইং দ্য সাইন্স অব ডেলিভারি : লানিং ফ্রোম হাউ বাংলাদেশ রিডিউস চাইল্ড মর্টালিটি-শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের একটি ফিচারে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে কিভাবে এটি অর্জনে ব্র্যাক ভূমিকা রেখেছে। বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ১৮০ জন, সেটি কমে ২০১১ সালে দাঁড়িয়েছে ৫৩ জনে। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন বিশ্বের অন্যতম এনজিও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ। এ সময় কিভাবে সন্তান জন্মের সময় সঠিক সেবা পৌঁছে দেয়া গেলে অতি দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য কমানো, জীবন বাঁচানো এবং সমৃদ্ধি দেয়া সম্ভব এবং সেই সঙ্গে এর সঙ্গে তাদের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব আনা যায় সে সব বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্র্যাক ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সে সময় শিশু মৃত্যুর বিষয়টি ছিল উদ্বেগজনক। ডায়রিয়া ছিল শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। সেই সময় ব্র্যাক শিশুদের রক্ষায় ডায়রিয়া প্রতিরোধে ওর‌্যাল রিহাইড্রেশন থেরাপি (ওআরটি) শুরু করে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওআরটি ব্যবহারকারী দেশ। সেই সঙ্গে শিশুদের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রেও সাফল্য লাভ করেছে বাংলাদেশ। ফলে ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ১৮০ জন, সেটি কমে ২০১১ সালে দাঁড়িয়েছে ৫৩ জনে। বলা হয়েছে, ওর‌্যাল রিহাইড্রেশন থেরাপি (ওআরটি) তৈরি করতে একজন মায়ের প্রয়োজন হয় গরম পানি, চিনি এবং লবণ, যা তাদের রান্না ঘরেই থাকে। এটি একটি সহজ সমাধান। কিন্তু এটি প্রথম দিকে মায়েদের কাছে চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। পরবর্তীতে তাঁরা শিখেছে কিভাবে স্যালাইন সমস্যার সমাধান করা যায় এবং তাদের অসুস্থ সন্তানদের কার্যকরভাবে খাওয়ানো যায়। ব্র্যাক এক্ষেত্রে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ দেয়। তারা দরজায় দরজায় গিয়ে মায়েদের শিখিয়ে দেয় কিভাবে ওআরটি তৈরির করতে হয় এবং খাওয়াতে হয়। গ্রামের অশিক্ষিত মায়েদের সাতটি সাধারণ পয়েন্ট শিখিয়ে দেয় স্বাস্থ্যকর্মীরা। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আধা লিটার ফুটানো পানি, তিন আঙ্গুলের এক চিমটি লবণ এবং এক মুষ্টি গুড় মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ব্র্যাক সব সময় গুরুত্ব দেয় শক্তিশালী তদারকি, মান এবং জবাবদিহিতার বিষয়গুলো। ব্র্যাকের প্রতিনিধিরা পর্যায়ক্রমে দশ শতাংশ বাড়িতে তদারকি করে থাকেন। এ সময় যদি মায়েরা ওআরটির সাতটি পয়েন্ট সঠিকভাবে বলতে পারেন তাহলেই স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রতিবাড়ির জন্য দশ টাকা করে দেয়া হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রথমবার তদারকির সময় যদি দেখা যায় ৬ শতাংশ পরিবার সঠিকভাবে ওআরটি সম্পর্কে বলতে পারে না। তাহলে ধরে নেয়া হয় ওই স্বাস্থ্যকর্মী সফল নয়। তখন ব্র্যাকের পক্ষ থেকে আবার তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া তিনি ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে তুলে ধরেন। ফজলে হাসান আবেদ বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়কালে বলেন, বাংলাদেশ দেখিয়েছে কিভাবে সাধারণ সমাধানের মাধ্যমে ওআরটি করা যায়। এটি বিশ্বব্যাপী যেকোন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য মডেল হতে পারে।
×