ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে স্বর্ণ চোরাচালান নেপথ্যে প্রবাসী সিন্ডিকেট!

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫

চট্টগ্রামে স্বর্ণ চোরাচালান নেপথ্যে প্রবাসী সিন্ডিকেট!

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে স্বর্ণের চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রবাসী সিন্ডিকেট। প্রবাসীদের মাধ্যমেই চট্টগ্রামে সোনার চালান আসছে। এসব সোনার কালেকশন চলছে চট্টগ্রামের হাজারী লেনকেন্দ্রিক স্বর্ণের ব্যবসায়ী বা মহাজনদের কাছে। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রলোভনে এমনকি এয়ারলাইন্সের ‘গো-ব্যাক’ টিকেটের মাধ্যমে খুচরা স্বর্ণের বার চট্টগ্রামে আসছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানে গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে সিএমপির কোতোয়ালি থানার অভিযানে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ৬৫টি সোনার বার উদ্ধারের পর রহস্য উদঘাটন হতে শুরু করেছে। গ্রেফতারকৃত দুলাল ও পরিতোষকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনায় আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বা আগামী রবিবার আদালতে শুনানী শেষে ও রিমান্ড মঞ্জুরের ভিত্তিতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ১৩ জানুয়ারি রাত ৮টা হতে স্পেশাল ডিউটি চলাকালীন সময়ে রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে সিনেমা প্যালেস বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসআই মফিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম নাশকতা বন্ধে যাত্রীবাহী নাইট কোচে অভিযান চালায়। অবরোধ চলাকালীন বিশেষ নিরাপত্তা ডিউটি তখন চলছিল নন্দন কানন সংলগ্ন পুরাতন টেলিগ্রাফ রোডে। একটি প্রাইভেটকার রাত সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ টিমকে দেখে গাড়িটি হঠাৎ টেলিগ্রাফ রোডে ঢালু জায়গায় নির্জন স্থানে দাঁড়িয়ে যায়। এমনকি গাড়ির সব লাইট নিভিয়ে দেয়া হয়। তবে দীর্ঘ সময় গাড়ি থেকে কোন যাত্রী এমনকি চালকও নামেনি। ফলে পুলিশের সন্দেহ হয়। সন্দেহজনকভাবে পুলিশ গাড়িটিকে পর্যবেক্ষণ করে। পরে পরিস্থিতি বেসামাল হওয়ায় ড্রাইভার ও পেছনের সিটে থাকা অপর ব্যক্তি দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পলায়নের চেষ্টা করে। এ সময় আটক আসামিদ্বয়ের দেহ তল্লাশি করা হয়। অবশেষে দুলাল ধরের (৩৬) কোমরে বিশেষভাবে তৈরি কাপড়ের ২টি বেল্টের ভেতর থেকে ৪৪টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। আবার গাড়িচালক পরিতোষ দে’র (৩৩) কোমরে একই পদ্ধতিতে কাপড়ের বেল্টে ২১টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। তাদের সঙ্গে থাকা (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৭-৩০৪৯) নম্বরের গাড়িটি জব্দ করা হয়। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে, তারা উভয়ে কোতোয়ালি থানাধীন হাজারীগলির মিতালী মার্কেটের ২য় তলার নারায়ণ কুমার চৌধুরীর দোকানের কর্মচারী ও ড্রাইভার। আসামি দুলাল ধর নারায়ণ কুমার চৌধুরীর দোকানের কর্মচারী এবং পরিতোষ দে গাড়ির ড্রাইভার। উদ্ধার ও জব্দকৃত স্বর্ণের বারগুলোর মালিক নারায়ণ কুমার চৌধুরী। নারায়ণের নির্দেশ অনুযায়ী জব্দকৃত স্বর্ণের বারগুলো তারা বহন করছিল। গাড়ি নিয়ে টেলিগ্রাফ রোড থেকে নারায়ণ কুমার চৌধুরীকে গাড়িতে উঠানোর জন্য রওনা দেয়। স্বর্ণের বারের বৈধ কোন কাগজপত্র তাদের কাছে ছিল না। আটক আসামিরা আরও জানায়, এসব স্বর্ণের মালিক নারায়ণ কুমার চৌধুরী (৪৮)। হাজারীলেনের মিতালী মার্কেটের ২য় তলায় নারায়ণের দোকান। প্রবাসীদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে চোরাচালানির মাধ্যমে স্বর্ণের বার আনায়ন করে অলঙ্কার তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা করে আসছে এবং উল্লেখিত উদ্ধার ও জব্দকৃত ৬৫টি স্বর্ণের বার চোরাইপথে বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। চোরাচালানের মাধ্যমে আনয়কৃত বর্ণিত স্বর্ণের বারগুলো ঢাকায় নেয়ার কথা ছিল। এর আগেও নারায়ণ কুমার চৌধুরীসহ একইভাবে তারা স্বর্ণের বার ঢাকা নিয়েছে। আরও জানা গেছে, প্রতিটি ১০ ভরি ওজনে ৬৫টি বারের ওজন মোট ৬৫০ ভরি, যার বাজার মূল্য প্রায় ওজনের ৬৫টি স্বর্ণের বার আনায়ন করিয়া দখলে রাখিয়া ঞযব ঝঢ়বপরধষ চড়বিৎ অপঃ, ১৯৭৪ ঝবপঃরড়হ ২৫ ই(১) (ন) অনুযায়ী অপরাধ। এগুলো প্রতিটি চতুর্ভূজ আকৃতির। এর মধ্যে ৫৭টি স্বর্ণের বারে খোদাই করে ইংরেজিতে ঈজঊউওঞ ঝটওঝঝঊ-১০ ঞঙখঅঝ ৯৯৯.০ লেখা রয়েছে। এবং ৮টি স্বর্ণের বারে খোদাই করা অখ ঊঞওঐঅউ উটইঅও-টঅঊ ১০ ঞঙখঅ, ৯৯৯.০, লেখা রয়েছে। প্রতিটি স্বর্ণের বারের ওজন ১০ ভরি হিসেবে মোট ৬৫০ ভরি, এসবের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে সিএমপির দক্ষিণ জোনের সহকারী কমিশনার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে আনা গেলে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের তথ্য পাওয়া যাবে।
×