ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভুয়া বিবৃতি পাঠানো দুই উপদেষ্টাকে বাদ দিল বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫

ভুয়া বিবৃতি পাঠানো দুই উপদেষ্টাকে বাদ দিল বিএনপি

মাহফুজুর রহমান, নিউইয়র্ক থেকে ॥ ছয় প্রভাবশালী মার্কিন সিনেটরের স্বাক্ষর জাল করে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভুয়া বিবৃতি দেয়ার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দুই বৈদেশিক উপদেষ্টাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় ১৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এই তথ্য জানান। একই সঙ্গে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, এই বিবৃতি জালিয়াতির সঙ্গে সরকারের যোগসাজশ থাকতে পারে। গত ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার দুই বৈদেশিক উপদেষ্টা ড. মুজিবুর রহমান এবং জাহিদ এফ সর্দার রাজনৈতিক ফায়দা পাওয়ার উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন এ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর এলিয়ট এল এঙ্গেল, এডওয়ার্ড আর রয়েস, স্টিভ শ্যাবট, জোশেফ ক্রাউলি, জর্জ হোল্ডিং এবং কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং-এর স্বাক্ষর জাল করে একটি বিবৃতি তৈরি করেন। বিবৃতিতে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা, মিডিয়াতে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নের নিন্দা জানানো হয়। দেশ-বিদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে বিবৃতিটি প্রকাশের পরদিনই প্রমাণ হয় এটা ছিল ভুয়া বিবৃতি। ৮ জানুয়ারি ফরেন এ্যাফেয়ার্স কমিটির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয় ‘এটি একটি প্রতারণামূলক বিবৃতি।’ এ নিয়ে বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশে ১৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রুহুল কবীর রিজভি স্বাক্ষরিত এক পত্রে দুই উপদেষ্টাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সাদেক হোসেন খোকা সাংবাদিক সম্মেলনে অব্যাহতিপত্র পড়ে শোনান। তিনি বলেন, এই দুই উপদেষ্টা সরকারের কোন পক্ষের সঙ্গে মিলেমিশে বিএনপিকে বেকায়দার ফেলার জন্য জাল স্বাক্ষর করে বিবৃতি প্রকাশ করে থাকতে পারে। এ নিয়ে আরও তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে তাদের দল থেকেও বহিষ্কার করা হবে। উল্লেখ্য, জাহিদ এফ সর্দার যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোন কমিটির সদস্য না হয়েও চেয়ারপার্সনের বৈদেশিক উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তবে তিনি গত ৯ বছরে প্রতারণার দায়ে ২৭ বার গ্রেফতার হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে। আর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অপর উপদেষ্টা ড. মুজিবুর রহমান চিকিৎসা সেবার নামে জালিয়াতি করার অপরাধে ১০ বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। সাদেক হোসেন খোকা তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, সীমান্ত প্রহরার দায়িত্বে থাকা বিজিবি দিয়ে বিরোধীদলকে দমনের কাজে লাগানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশপাশি আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররাও বসে নেই। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার নিন্দা জানিয়ে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, দেশের গণমাধ্যমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মত প্রকাশের অধিকার এখন নেই বললেই চলে। সরকারী দল সমাবেশ করছে অথচ বিরোধী দলকে করতে দেয়া হচ্ছে না। সরকার তাদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন দমনের জন্য নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন খোকা। দুই উপদেষ্টাকে অব্যাহতি দেয়া হলেও এই ভুয়া বিবৃতি প্রকাশের বিষয়টিকে রহস্যজনক আখ্যায়িত করে খোকা বলেন, যে মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র বার বার বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিচ্ছে সেই সময় এ ধরনের একটি বিবৃতি সরকারের কূটকৌশলের অংশ ছাড়া আর কিছুই না। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৭ নবেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত পত্রে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিশেষ উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া হয় তাদের। তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতাদের বাড়িতে একের পর এক বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দলে দলে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাদের রিমান্ডে নিয়ে চালানো হচ্ছে নির্মম নির্যাতন। সরকারের এমন পাশবিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রাম গড়ে উঠেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি শহর, বন্দর, গ্রাম এমনকি প্রত্যন্ত পাড়া-মহল্লায়ও আপামর জনতার প্রতিরোধ-সংগ্রামের ক্রমবর্ধমান তীব্রতায় নড়ে উঠেছে স্বৈরশাসকের ভিত। আর তাতেই দিশাহারা হয়ে সরকার অত্যাচার- নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকদের বিভ্রান্ত করতে নানা রকম কূটকৌশলেরও আশ্রয় গ্রহণ করছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে বিরামহীন অপপ্রচারে লিপ্ত। পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খোকা বলেন, দীর্ঘসময় সপরিবারে নিউইয়র্কে অবস্থানের কারণও ব্যাখা করে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে এই দূর দেশে অবস্থানের কারণে জাতির এই কঠিন দুঃসময়ে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে সশরীরে অংশ নিতে না পারায় বেদনায় আমি প্রতি মুহূর্তে দগ্ধ হচ্ছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি পালিয়ে থাকিনি। আমি ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছি। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এমন কোন আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল না যেখানে আমি অংশগ্রহণ করিনি। রাজপথে গুলিকে আমি ভয় করিনি। এখন দেশে থাকার মতো শারীরিক অবস্থা থাকলে আমি অবশ্যই দেশে থাকতাম। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও খালেদা জিয়ার ফোনালাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে খোকা বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সভাপতির সঙ্গে তার দলনেত্রী খালেদা জিয়ার টেলিফোন আলাপ হয়েছিল। খালেদার সঙ্গে কথা হয়নি বলে অমিত শাহর যে বক্তব্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এসেছে তা ‘আসল অমিত শাহর’ কথা নয় বলে দাবি করেছেন বিএনপির এই ভাইস-চেয়ারম্যান। তিনি আরও বলেন, দেশের যে দুটো গণমাধ্যমে (৭১ টিভি, চ্যানেল ২৪) অমিত শাহর যে বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে, সেটা আসল অমিত শাহর কথা নয়। ‘এই ঘটনা যদি মিথ্যা হতো তাহলে বিজেপির পক্ষ থেকেই কোন বিবৃতি প্রদান করা হতো।’ সাদেক হোসেন খোকার আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিবদমান গ্রুপের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান জিল্লু, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, ড. শওকত আলী, আবু সাঈদ আহমেদ, আতিকুল হক আহাদ এবং সাদেক হোসেন খোকার ব্যক্তিগত সচিব সিদ্দিকুর রহমান মান্না।
×