ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মঙ্গাজয়ী কৃষকের হাসি কেড়ে নিয়েছে অবরোধ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

মঙ্গাজয়ী কৃষকের হাসি কেড়ে নিয়েছে অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ স্বাবলম্বীতে পরিনত হওয়া মঙ্গা জয়ের মাইলফলক উত্তরের কৃষকদের মাথায় বাজ পড়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা লাগাতার অবরোধ কৃষকের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। কৃষি ও কৃষক এবং কায়িক শ্রমিকদের ঘামে পরিনত হওয়া কৃষি বিপ্লবকে থমকে দেয়ার পাঁয়তারা করছে বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। সচেতন মহল বলছেন, বর্তমান সরকারের উত্তরাঞ্চলের গ্রামাঞ্চলের মঙ্গা নিরসনে দীর্ঘ কয়েক বছরের সাফল্যকে ম্লান করার অপচেষ্টা করছে বিরোধী রাজনীতির লাগাতার অবরোধ। অথচ মঙ্গা জয়ে জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করতে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর করতে কত না পরিকল্পনা করতে হয়েছিল বর্তমান সরকারকে। উত্তরের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে কৃষি বিপ্লবে। এক সময় কর্মহীন ও মঙ্গাপীড়িত মানুষের মুখোছবি ভেসে বেড়াত এ অঞ্চলে। এখন সেই চিত্র নেই। এতে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকরাও ভাগ্য ফিরিয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। ধান, পাট, গমসহ সবজি চাষ গ্রামীণ অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নানা শ্রমজীবী মানুষের। কৃষি শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক ও ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ী প্রতিদিন নগদ আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু বিএনপির লাগাতার অবরোধে পাল্টে গেছে দেশের সবজি বাজারের চিত্র। রীতিমতো শনির দশা লেগেছে এ ব্যবসায়। শীতকালীন সবজির এ ভরা মৌসুমে যখন কৃষকের মুখে থাকবে হাসি, সে সময় শুধুই হতাশা। টানা অবরোধের কারণে সবজির মোকামগুলোতে ক্রেতা নেই। দাম না পাওয়ায় অনেক চাষী ক্ষেত থেকে সবজি তুলছেন না। ফলে হাজার হাজার একর জমির সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবজি চাষী ও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রতিদিন পাইকাররা ট্রাক নিয়ে আসে এসব এলাকায়। এখান থেকে সবজি কিনে তারা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়। অবরোধের কারণে এসব সবজি কোথাও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কৃষক ও সবজি ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, কৃষক যদি তার কষ্টার্জিত ফসলের নায্যমূল্য না পায় তাহলে এর বিরূপ প্রভাব পুরো অর্থনীতিতেই পড়বে। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে। অবরোধের গত ৭ দিনে উত্তরের আট জেলায় প্রায় আট কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এক ব্যাংক কর্মকর্র্তা বললেন অর্থনীতি নিয়ে কোন রাজনীতি হতে পারে না। এ ব্যাপারটি আমাদের নেতৃবৃন্দকে বুঝতে হবে। এদিকে চাষীরা পানির দরে সবজি বিক্রি করলেও হাটবাজারে উল্টো চিত্র। সবজির দাম চড়া। অবরোধের কারণে ব্যবসায়ীরা মোকাম থেকে সবজি আনতে না পারায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। উত্তরের রংপুর ও দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলের আট জেলায় এবার সবজির বাম্পার ফলন হলেও টানা অবরোধের কারণে ন্যায্য দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। বড় বড় হাটবাজারে নেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আড়তদারদের উপস্থিতি। ফলে বেগুন, মুলা, টমেটো, শিম, বরবটি, মটরসুটি, শসা, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্ষীরাসহ বিভিন্ন জাতের সবজি গড়াগড়ি যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে বিশাল ধরনের সবজি বিকিকিনি হচ্ছে না। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে সবজি নিয়ে আসা কৃষকরা পানির দামে স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রি করে লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছেন।
×