ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চার কোটি শিশুর ॥ হাসি কেড়ে নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

চার কোটি শিশুর ॥ হাসি কেড়ে নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত

সমুদ্র হক ॥ নতুন পাঠ্য বইয়ের ঘ্রাণে কোমলমতি শিশুদের মনে আনন্দের যে ঢেউ উঠেছিল তা কেড়ে নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ৪ কোটিরও বেশি শিশু ইংরেজী নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পেয়ে অম্লান হাসি নিয়ে ঘরে ফেরে। এরা যখন স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় তখনই বিএনপি জামায়াত টানা অরবোধ ও হরতাল ডেকে শিশুদের ভীতিকর অবস্থায় ফেলে ঘরবন্দী করেছে। প্রতিদিন শিশুরা অপেক্ষা করে এই বুঝি স্কুল খুলে দফতরী ঘণ্টা দেবে, এসেমব্লি হবে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে নিজ নিজ ক্লাসে বসে নতুন শ্রেণীর পাঠ শুরু করবে। তা আর হয় না। বছরের শুরুতেই রাজনীতিকরা শিশুদের শিক্ষার টুটি চেপে ধরেছে। যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছে তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যত বন্ধ হয়ে আছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি টেনশনে আছে মাধ্যমিক পরীক্ষার শিক্ষার্থীরা। যে পাবলিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে। শিক্ষার্থী অভিভাবক স্কুলের শিক্ষক এমন কি যে রাজনীতিকদের সন্তান মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে তারাও দারুণ উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি যতটা নিচ্ছে তারচেয়ে বেশি শঙ্কা নিয়ে টিভির খবর দেখে। সংবাদপত্র পাঠ করে জানার চেষ্টা করে ঠিকমতো ও সময়মতো পরীক্ষা হবে তো! ভালভাবে পরীক্ষা দিতে পারবে তো! পরীক্ষার আগে এই সময়টাতে স্কুলের টিচার ও কোচিং টিচাররা শিক্ষার্থীদের রিভিশন করে পাঠ দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। তাতেও ভাটা পড়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না রিভিশনের ক্লাসগুলো কিভাবে করাবে! এদিকে সময়ও গড়িয়ে যাচ্ছে। অভিভাবকরাও অজানা আতঙ্কে সন্তানদের স্কুলে ও কোচিং সেন্টারে পাঠাতে পারছে না। রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা কোথায় কিভাবে ওতপেতে আছে তা কেউ জানে না। কোথায় তখন ককটেল বোমা ছুড়বে তা কেউ জানে না। এইসব দুর্বৃত্ত ভাড়ায় নাশকতার কাজ করে। তারা ভাবে না কে শিশু কে শিক্ষার্থী। রাজনীতিকরা এমনই যে কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না। শিশু মানুষ মানবতা শিক্ষা তাদের কাছে কিছুই নয়। ক্ষমতাই তাদের কাছে আগে। দেশের মানুষ তাদের ভালবাসলো না ঘৃণা করল তা থোড়াই কেয়ার করে এইসব রাজনীতিকরা। বিশ্বে উন্নত দেশে শিশুদের কথা আগে ভাবা হয়। এমনও বলা হয় শিশু কোন দেশের তা বড় কথা নয়, গোটা বিশ্বই শিশুদের। বাংলাদেশে রাজনীতিকদের ক্যাডাররা শিশুদের ওপরও বোমা ছুঁড়ে দেয়। পাকিস্তানের পেশোয়ারের একটি স্কুলে কিভাবে ইসলামী মিলিট্যান্টরা বোমা মেরে কোমলমতি শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে তা বিশ্ববাসী দেখে ঘৃণা ও ক্ষোভে স্তব্ধ হয়েছে। বাংলাদেশে যে বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলন করছে তারাও পাকিস্তান প্রেমে একেবারে বুঁদ হয়ে থাকে। এই দুই রাজনৈতিক দলের কাছে কিভাবে ভাল কিছু আশা করা যায়! কিছুদিন আগেও পাকিস্তানপ্রেমী বিএনপি ভারতের কথা শুনলে নাক সিটকাতো। বক্তৃতায় ভারতকে যে কতভাবে গালাগালি করেছে তার হিসাব নেই। ভারতের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে নরেন্দ্রনাথ মোদি যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন বিএনপি ও জামায়াত তো একেবারে আহ্লাদে আটখানা। ছড়িয়ে দেয়া হলো, ভাইয়া তারেক নরেন্দ্র কাকাবাবুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের আর কয় দিন। এবার নামল বলে। ওই সময় এমনও বলাবলি হয় দিল্লীতে যে লাড্ডু বানানো হচ্ছে তা বিএনপির জন্য ঢাকা ও বগুড়াতেও পাঠানো হবে। তারপর যা হলো তা দিল্লীর লাড্ডুর প্রবাদের মতো ‘যো খায়েগা ও পাস্তায়েগা যো নাহি খায়া উ ভি পাস্তায়গা’। বিএনপির অবস্থা হলো পরেরটা। এবার সেই বিজেপির নেতার সঙ্গে এমন এক মিথ্যা গল্প ছুঁড়ল তারেক ভাইয়া যা শুনে দেশের মানুষই আক্ষরিক অর্থে ‘থ’ বনে গেল। মার্কিন সিনেটরদের নিয়েও একটা ভুয়া গল্প ফেঁদে প্রচার করা হলো। তাও ধরা পড়ে গেল। তথ্য প্রযুক্তির সুপার ডুপার হাইওয়ের দিনে বিএনপি দেশের মানুষকে এতটাই বোকা ভাবল যে শেষ পর্যন্ত নিজেরাই সেরা বোকা বনে গেল। এই বিষয়ে গ্রামের এক শিক্ষিতজনের কথা মূর্খেরাই মূর্খের মতো কাজ করে। এই মূর্খরা কি লেখাপড়া শিক্ষার কিছু বোঝে। বর্তমানে দেশের শিক্ষিতের হার যখন বেড়ে যাচ্ছে তখন বিএনপি জামায়াত তালেবানদের মতো শিক্ষার ওপরই আঘাত করছে। নতুন বছরে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যখন নতুন পাঠ নিয়ে এগিয়ে যাবে তখনই তারা অবরোধ হরতাল ডেকে কার্যত শিক্ষার ওপরই কুঠারাঘাত করছে।
×