ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ষষ্ঠ দল এবং আসর শুরুর তারিখ নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছিল, তার সমাধান হয়েছে অবশেষে। ষষ্ঠ দল হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং আসর শুরু হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি থেকে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনই আসর শুরুর তারিখটি। এ সম্পর্কে সালাউদ্দিন বলেন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড চাচ্ছিল যে ১৬ জানুয়ারি টুর্নামেন্টটি শুরু হোক। তবে বাহরাইনের এশিয়ান গেমসে খেলা থাকার ফলে ২৯ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টটি। তবে তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার ফলে বাহরাইনের জাতীয় দল অংশ নিচ্ছে না, তাই তারা অলিম্পিক দল পাঠাবে। গোল্ডকাপের ফাইনাল খেলাটি অনুষ্ঠিত হবে ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায়। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই টুর্নামেন্টটির ফরমেট ঠিক করে ফেলা হয়েছে। স্বাগতিক বাংলাদেশের কোচ হিসেবে আসছেন দলটির সাবেক ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ! দেশের খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই শুরু হবে বহুল আলোচিত এ আসরটি। এ আসরটির সময় আর দল চূড়ান্তের জন্য বাফুফেকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৯ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসির) বার্ষিক সাধারণ সভা পর্যন্ত। ষষ্ঠ বিদেশী দল, টুর্নামেন্টের সময় আর ফরমেটসহ অনেক কিছুই চূড়ান্ত হয়েছে সেখানে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এবং সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল আসর। ১৯৯৭ সালে প্রথম এবং ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়বার অনুষ্ঠিত হয়েছিল জাতির জনকের নামের এ টুর্নামেন্ট। তৃতীয় আসরের জন্য অপেক্ষা করতে হলো সুদীর্ঘ ১৫ বছর! ছয় জাতির এ টুর্নামেন্ট হবে দুই গ্রুপে। বাফুফের প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশের গ্রুপের খেলা হবে সিলেটে। ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ আর জাপান অনুর্ধ-২১ দলের প্রীতি ম্যাচে দর্শক ঢল দেখে সে পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে বাফুফে। এখন বাংলাদেশের খেলা হবে দুই ভেন্যুতেই। টুর্নামেন্টে মোট ম্যাচ হবে ৯টি। ৫টি হবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে, আর ৪টি সিলেটে। ২৯, ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তিনটি ম্যাচ হওয়ার পর একদিন বিরতি দিয়ে বাকি তিনটি গ্রুপ ম্যাচ হবে সিলেটে ২, ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি। ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম সেমিফাইনাল হবে সিলেটে, ৬ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সেমিফাইনাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ৮ ফেব্রুয়ারি হবে ফাইনাল। প্রথমে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সময়সূচী ধরা হয়েছিল ১৬ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের ওই সময়টাই ছিল পছন্দের। কিন্তু টুর্নামেন্ট পেছানোর দাবি ছিল বাহরাইনের। শেষ পর্যন্ত এএফএসি সভাপতির দেশের মন রক্ষা করতেই ১৩ দিন পিছিয়ে দেয়া হলো বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। টুর্নামেন্ট পেছানোয় অবশ্য নাখোশ হয়েছে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। তবে ষষ্ঠ দল শ্রীলঙ্কার সময় নিয়ে তেমন কোন মতামত ছিল না। ফক্স চ্যানেলে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ॥ কেবল বাংলাদেশই নয়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ম্যাচ দেখা যাবে এশিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায়। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল নাইনের কাছ থেকে সম্প্রচার স্বত্ব কিনে নিয়েছে ফক্স চ্যানেল। তারা মূলত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ম্যাচগুলোই সরাসরি সম্প্রচার করবে। তাছাড়া টুর্নামেন্টের ধারাভাষ্য দেয়ার জন্য বিদেশী ভাষ্যকারদেরও আনা হবে। বাংলার সঙ্গে ইংরেজীর ধারা বিবরণী শোনা যাবে বলে জানিয়েছেন চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমান বাপ্পী। উল্লেখ্য, এর আগে এএফসি মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ এবং জাতীয় ফুটবল দলের কয়েকটি প্রীতি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করেছিল চ্যানেল নাইন। টুর্নামেন্টের পৃষ্ঠপোষক চ্যানেল নাইন ইতোমধ্যেই চুক্তি অনুযায়ী বাফুফেকে প্রথম কিস্তির টাকা দিয়েছে। স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ চলছে ॥ বঙ্গবন্ধু কাপের জন্য এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয় ঢাকা ও সিলেটের ভেন্যু। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে এবং বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট থাকলেও পর্যাপ্ত আলোর অভাব। এ বিষয়ে অবশ্য দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে বাফুফে। মাঠের সংস্কার কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে বাফুফের একটি প্রতিনিধি দল স্টেডিয়ামগুলোতে পরিদর্শ করেছে। জানা গেছে, ভেন্যুর সংস্কারের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সিলেট স্টেডিয়ামের ক্রিকেট পিচ ইতোমধ্যেই তুলে ফেলা হয়েছে। আবু নাইম সোহাগ বলেন, মাঠগুলো যেহেতু এনএসসির, সেহেতু মাঠ ঠিক করার ব্যাপারে তাদেরও কিছু দায়িত্ব পালন করা উচিত। উল্লেখ্য, দুই স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের কম আলো বিষয়ক সমস্যা সমাধানের জন্য এনএসসি প্রয়োজনীয় অর্থ চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। সেই টাকা সোমবার দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। টাকার পরিমাণ হচ্ছে ৩৯ কোটি। এদিকে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের কাজও এগিয়েছে অনেকদূর। এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম বলেন, মাঠের কাজ চলছে। পিচ তুলে সেখানে নতুন ঘাস লাগিয়েছি। পুরো মাঠে প্রায় ৬ ইঞ্চি করে পলিমাটি দিয়ে তার ওপর ঘাস লাগানো হয়েছে। খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুম নিয়েও কোন সমস্যা নেই। আমাদের ড্রেসিংরুম মানসম্পন্ন। ক্রিকেট বোর্ড এটি করে দিয়েছিল। ভিআইপি গ্যালারি সংস্কার করা হচ্ছে। ভিআইপি গ্যালারি হবে ৫০ আসনের। সেখানে আমাদের ২৫ জন এবং ফিফার জন্য ২৫ জন বসবে। এখন শুধু বাকি ফ্লাডলাইটের কাজ। আমাদের যে ফ্লাডলাইটের আলো আছে সেটি ৬০০ লাক্স, কিন্তু ফুটবল ম্যাচ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রয়োজন ১২০০ লাক্স সেটি নিয়েই কাজ চলছে। প্রথমে ফ্লাডলাইট এবং স্টেডিয়াম সংস্কার খাতে প্রায় দুই কোটি টাকার মতো বাজেট ধরা হলেও এখন সেটি কমিয়ে প্রায় ১ কোটির মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে বলে একটি সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অনুশীলন ভেন্যু ॥ টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বাহরাইন বাদে বাকি সব দেশই তাদের জাতীয় দল পাঠাবে। তাদের কাছে ইতোমধ্যেই বাফুফে বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেÑ তাদের দলবহর হবে ৩০ জনের (২৩ খেলোয়াড় এবং ৭ অফিসিয়াল)। চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যেই বাহরাইন ও সিঙ্গাপুরের কাছে টুর্নামেন্টের বাইলজের খসড়া পাঠিয়ে দিয়েছে বাফুফে। এ ছাড়া ঢাকায় দলগুলোর অনুশীলনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চারটি মাঠ চেয়েছে বাফুফে। এর মধ্যে ২টিতে অনুশীলন হবে এবং একটি প্রস্তুত বা বিকল্প প্র্যাকটিস ভেন্যু হিসেবে থাকবে। এগুলো হলোÑ বনানী আর্মি স্টেডিয়াম, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ এবং শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডের নিজস্ব মাঠ। পক্ষান্তরে সিলেট ভেন্যুতে সিলেট ফুটবল একাডেমিসহ মোট ৩টি অনুশীলন মাঠ নেয়ার পরিকল্পনা করছে বাফুফে।
×