ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধার চরাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত ॥ বাল্যবিয়ের শিকার

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

গাইবান্ধার চরাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত ॥ বাল্যবিয়ের শিকার

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা থেকে ॥ গাইবান্ধার অবহেলিত চরাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এছাড়া তারা অপুষ্টি ও খাদ্য সংকটের কারণেও তাদের স্বাভাবিক জীবনাচারণ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া মেয়ে শিশুদের বাল্য বিয়ের প্রবণতাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই চরে সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা বেসরকারী পর্যায়ের কোন চিকিৎসা কেন্দ্র ও চিকিৎসক না থাকায় শিশুদের নানা দুরারোগ্য রোগে ভুগে কষ্ট পেতে হয়। উপজেলা সদর নয়তো জেলা সদরের চিকিৎসা কেন্দ্রে অসুস্থ শিশুদের নিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। উল্লেখ্য, জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী বেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ১০৪টি চরাঞ্চলের শিশু-কিশোরদের বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের কালাসোনার চরের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এ চরের মোট জনগোষ্ঠী ৫ হাজার ৪০ জনের মধ্য হতদরিদ্র ও দরিদ্র কৃষক পরিবার হচ্ছে ৫শ’ ৩৮। এসব দরিদ্র পরিবারের বিদ্যালয় যাওয়ার উপযোগী ১ হাজার ৮শ’ শিশুর মধ্যে অধিকাংশ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষারও সুযোগ পাচ্ছে না। অনেক শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও অভাবের তাড়নায় তাদের লেখাপড়া শেষ করতে পারে না। মাঝপথেই ঝরে পড়ে। এ চরে একটি সরকারী এবং একটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাব। এছাড়া শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত থাকে না। আবার উপস্থিত থাকলেও দায়সারাভাবে পাঠদানের কাজ সম্পন্ন করেন। সর্বোপরি বিদ্যালয় দু’টিতে শিক্ষা সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয় যেতে আগ্রহী হয় না। সীমাহীন দারিদ্র্য কালাসোনার চরের শিশুদের স্কুলে যাওয়ার বয়সে সংসারের চাহিদা পূরণে নানা কাজে নিয়োজিত হতে হয়। পরিবারের জ্বালানি সংকট মেটাতে নদীতে ভেসে আসা চরে আটকা পড়া খড়ি কুড়ানো, পানি আনা, চাষাবাদ ও মাছ ধরার কাজে সহায়তা দিয়ে এখানকার শিশুরা পরিবারের দু’বেলা খাবার যোগাতে শিশুশ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য হয়। ফলে স্কুলে নামমাত্র ভর্তি হলেও চরের শিশুরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে বা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায় না। এছাড়া নিয়মিত স্কুলগামী শিশুদের দারিদ্র্যক্লিষ্ট পরিবারগুলোতে পারিবারিক পর্যায়ে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় তাদের লেখাপড়ায় কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হচ্ছে না। তদুপরি ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যেই চরাঞ্চলের মেয়ে শিশুদের বিয়ে দেয়া হচ্ছে। অভিভাবকরা এখনও মনে করেন মেয়েদের বেশি বয়স হলে তাদের বিয়ে দিতে সমস্যা হয়। এ কারণে শিশু এবং মাতৃ মৃত্যুহারও চরাঞ্চলে বাড়ছে। এ ব্যাপারে নদী তীরে খড়ি কুড়ানোরত কালাসোনার চরে শুকতারা (৮), দুলালী (৯) এবং তাসলিমা (৮) জানায়, তারা স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে পরিবারের অভাবের কারণে তাদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও স্কুল ছাড়তে হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন নদী তীরে এসে ভেসে আসা জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে আসতে হয় তাদের। কারণ জ্বালানি কাঠ না হলে তাদের রান্না হবে না। এভাবে নানা কাজের জন্য ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা নিয়মিত স্কুল যেতে পারে না। তদুপরি বিনোদনের কোন সুযোগ না থাকায় শ্রমে নিয়োজিত শিশুরা অমানবিক পরিবেশে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
×