ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে খাতা পুনঃনিরীক্ষণের নামে প্রতারণা

জেএসসিতে পরীক্ষকের অনিয়মে খেসারত দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

জেএসসিতে পরীক্ষকের অনিয়মে খেসারত দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় পরীক্ষকদের অনিয়ম, দুর্নীতি আর চরম অবহেলার কারণে খাতায় উত্তরের মানদ- ঠিক নেই, যোগফলে ভুল, সঠিক উত্তরের নম্বর না দেয়া ও নম্বরপত্রে নম্বর না তোলাসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর আশার আলো নিভে যাবে। শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে চলছে প্রতারণা। প্রশ্ন উঠেছে, কেন খাতা পরীক্ষণ না করে পুনঃ নিরীক্ষণ করা হবে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, খাতা পরীক্ষণ দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিষয়ভিত্তিক খাতা পরীক্ষণ বাদ দিয়ে পুনঃ নিরীক্ষণের নামে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে চলছে প্রতারণা। ফলে শিক্ষার্থীর মানদ- সঠিক বিবেচনা না করে খাতায় মনগড়া নম্বর দিয়ে ফল প্রকাশ করায় বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর জেএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। আগামী ১৭ জানুয়ারি খাতা পুনঃ নিরীক্ষণ করবেন শতাধিক শিক্ষক। আর ফল প্রকাশিত হবে আগামী ৩০ জানুুয়ারি। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, একদিনে প্রায় ৭ হাজার ৭০৬টি বিষয়ের খাতা পুনঃ নিরীক্ষণ সম্ভব নয়। কারণ, খাতার ভেতরে থাকা প্রশ্ন উত্তরে যদি নম্বর প্রদানে ভুল থাকে তা খতিয়ে দেখা সম্ভব নয়। ফলে পরীক্ষণ করা হয় টেবুলেশন শীটের যোগফল ও খাতায় প্রদত্ত মানের ত্রুটি-বিচ্যুতি। এছাড়া যারা খাতা পরীক্ষণের সঙ্গে জড়িত তাদের অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে যেসব শিক্ষক চাকরি পেয়েছেন তাদের পক্ষে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর খাতা পরীক্ষণ করা অনেকটা দুষ্কর। এমন অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা প্রশ্নোত্তরের মানদ- বোঝেন, কিন্তু নম্বর প্রদানে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারছেন না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আরও অভিযোগ রয়েছে, ফল ঘোষণার পর খাতা পুনঃ পরীক্ষণের আবেদন করা হলে ব্যাপক হারে ফলে পরিবর্তন আসছে। এছাড়াও পুনঃ পরীক্ষণের নামে টেলিটক অপারেটরের মোবাইল থেকে এসএমএসের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক ফি আদায় করে পরীক্ষণে প্রতারণা শুরু করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কারণ, পুনঃ পরীক্ষণের সময় খাতা পুনরায় পর্যবেক্ষণ না করে শুধু যোগফলে ভুল, সঠিক উত্তরের নম্বর না দেয়া ও নম্বরপত্রে নম্বর না তোলা ইত্যাদি যাচাই করা হবে। এতে অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। ফলে অভিভাবকরা ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, সরকার এ ধরনের পরীক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রতিবছর ভাল শিক্ষার্থীর ফল যেমন বিপর্যয়ের শিকার তেমনি অনেক শিক্ষার্থীর ফলে অকৃতকার্যের কালিমা চলে আসছে ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। খাতা পুনঃ নিরীক্ষণ বিষয়ে আরও অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষ কখনই খাতার মান বা খাতার ভেতরে উত্তর অনুযায়ী প্রাপ্ত নম্বর যাচাই-বাছাই করছে না। বরং পুনঃ নিরীক্ষণের নামে প্রতারণা শুরু করেছে। ফলে প্রতারণার শিকার হয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না একমাত্র দুর্নীতিবাজ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন শিক্ষকদের প্রকৃতভাবে খাতা পরীক্ষণ না করায়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ বা গোল্ডেন জিপিএ না পাওয়ার ফলে মেড্যিাল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষায় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে। যদি খাতা পুনঃ নিরীক্ষণ না-ই হয় তাহলে কেন সরকারের দোহাই দিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক খাতার বিপরীতে পুনঃ নিরীক্ষণ ফি বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার খাতা পর্যবেক্ষণ না করে যদি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অধীনে থাকা কম্পিউটার বিভাগ কর্তৃক তৈরিকৃত টেবুলেশন শীট পরীক্ষা করে তাহলে খাতার ভুল কিছুতেই বের করা সম্ভব হবে না। কারণ, কম্পিউটার বিভাগে নিয়োজিত অদক্ষ অপারেটরের বিচক্ষণতার অভাবে ভুল তথ্যটিই ডাটা আকারে লিপিবদ্ধ হচ্ছে। ফলে অদক্ষ শিক্ষক কর্তৃক উত্তরপত্রের বিভিন্ন মান যোগফলে ভুল যেমন রয়ে গেছে তেমনি মানসম্মত উত্তর অনুযায়ী যদি অদক্ষ শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর না দিয়ে থাকেন তাও যাচাই-বাছাইয়ের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এতে অদক্ষ শিক্ষক বা পরীক্ষকের দায়িত্বহীনতার কারণে নিভে যাচ্ছে অসংখ্য শিক্ষার্থীর আশার আলো। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, শতাধিক শিক্ষক দিয়ে এবার খাতা পুনঃ নিরীক্ষণ করা হবে। কিন্তু অদক্ষ শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর খাতা পরীক্ষণ ও বিপর্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঐসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে শোকজসহ কয়েক বছরের জন্য খাতা পরীক্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়।
×