ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অমিত শাহ্র ফোন ও মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের ভুয়া বিবৃতি ফাঁসে সরকার অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে

সরকারের ওপর বিদেশী চাপ নেই, উল্টো নাখোশ বিএনপির সহিংসতায়

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

সরকারের ওপর বিদেশী চাপ  নেই, উল্টো নাখোশ বিএনপির সহিংসতায়

তৌহিদুর রহমান ॥ বিএনপি থেকে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচী চললেও সরকারের ওপর কোন বিদেশী চাপ নেই। বর্তমান সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে বিএনপির চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচী দেশী-বিদেশী কূটনীতিকদের প্রভাবিত করতে পারেনি। সে কারণে কোন বিদেশী রাষ্ট্র চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোন উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। এছাড়া ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর টেলিফোন ও মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতির ভুয়া ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সরকার এখন অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে। বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বিএনপি থেকে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হয়। বিএনপির দেয়া রাজনৈতিক কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে বিদেশী কূটনীতিকরা সরকারের ওপর কোন চাপ সৃষ্টি করেনি। এমনকি ঢাকায় কোন বিদেশী মিশন থেকেও এ বিষয়ে কোন বক্তব্য আসেনি। সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশী-বিদেশী কূটনীতিকরা সরব ছিলেন। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা প্রভৃতি দেশের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। এক বছর পরে সেই নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিএনপি থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচী দেয়া হলেও বিদেশীদের কোন সাড়া মেলেনি। তবে চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘিরে বিএনপির পক্ষ থেকে বিদেশী কূটনীতিকদের তাদের পক্ষে টানার চেষ্টা করলেও সেটা সফল হয়নি। তবে সরকারকে দেশী-বিদেশী চাপে ফেলতে বিএনপি মিথ্যার আশ্রয় নেয়। তারই অংশ হিসেবে বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ভারতের বিজেপি নেতা টেলিফোন করেছে বলে এমন খবর প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরেকটি মিথ্যা খবর প্রচার করা হয়। সে খবরে বলা হয়, মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা বিবৃতি দিয়ে বেগম জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই খবর দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশের ফলে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি অনেকটাই এগিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীরাও উদ্দীপ্ত হন। সারা দেশের নেতাকর্মীকে বোঝানো হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন বিদেশী গোষ্ঠী বিএনপির চলমান আন্দোলনের পাশে রয়েছে। অপরদিকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর টেলিফোন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের দেয়া বিবৃতি নিয়ে সরকার অনেকটাই চাপের মুখে পড়ে। তবে দুটি ঘটনাই যে মিথ্যা, তা একদিনের ব্যবধানে প্রকাশ হয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কোন টেলিফোন করেননি। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরাও যৌথভাবে কোন বিবৃতি দেয়নি। এই ঘটনা প্রকাশের পরে সরকারের সামনে এখন কোন বিদেশী চাপ নেই। সূত্র জানায়, গত বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ঢাকায় বেশ কয়েকজন মিশনপ্রধান সে সময় সরব ছিলেন। বিশেষ করে সে সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজেনা, কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা ছিলেন অনেকটাই সরব। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তারা মন্তব্য করে আসছিলেন। তবে এক বছরের ব্যবধানে এই তিন কূটনীতিকই ঢাকা থেকে বিদায় নিয়েছেন। সে কারণে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসব দেশের কূটনীতিকরা এখন অনেকটাই নীরবতা পালন করছেন। সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতামুক্ত আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন বিদেশী কূটনীতিকরা। রাজনৈতিক সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিএনপির প্রতি তারা বার বার আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি বিদেশী কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে অন্তত দু’বছরের মধ্যে বিএনপি যেন কোন আন্দোলনে না যায়, সে বিষয়েও অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তবে নির্বাচনের এক বছর যেতে না যেতেই বিএনপি পুনরায় সংঘাতপূর্ণ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। বিদেশী কূটনীতিকদের পরামর্শ না মেনে তারা আবারও টানা অবরোধ কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি ও ভাংচুরের ঘটনাও ঘটছে। এসব নিয়ে অনেক বিদেশী কূটনীতিকই এখন বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে কোন ধরনের সহিংসতা ও সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচীর পথ পরিহারের আহ্বান জানান। এছাড়া ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বৃহস্পতিবার বলেছেন, ৫ জানুয়ারি ঘিরে সারাদেশে যে সহিংসতার সংস্কৃতি আবারও শুরু হয়েছে তা দেশের জন্য মোটেই কাম্য নয়। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সহিংসতা উত্তরণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ঘিরে প্রতি পাঁচ বছর পরপর বাংলাদেশে যে সহিংসতার রাজনীতি ফিরে আসে তা এদেশের অর্থনীতির জন্য মোটেই শুভ নয়। অন্যসব বন্ধু রাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের এ সংস্কৃতির বিলোপ চায়। সূত্র জানায়, দশম জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারের ওপর বিদেশী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কোন চাপ নেই। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকেও সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি হয়নি। সে কারণে টানা অবরোধ চললেও সরকার অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
×