ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমিন আমিন ॥ তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির আখেরি মোনাজাত

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

আমিন আমিন ॥ তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির আখেরি মোনাজাত

ফিরোজ মান্না/মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে ॥ টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কণ্ঠে আমিন আল্লাহুমা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হলো বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে পানাহ্ ভিক্ষা করছিলেন মুসল্লিরা। ক্ষমা লাভের আশায় লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা ভোর থেকেই। বহু মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনা করা হয় তবলীগ জামাতের ৫০তম বিশ্ব এজতেমায়। এদিকে বিএনপি-জামায়াতের রক্তচক্ষু মুসল্লিদের ওপর থেকে কোনভাবেই সরছে না। একদিকে অবরোধ দিয়ে মুসল্লিদের আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার বাড়ি ফেরার পথটিও কঠিনভাবে আটকানোর জন্য গাজীপুরে আজ সোমবার হরতাল ডেকেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এমন নিষ্ঠুর আচরণে তবলীগ জামাতের মুসল্লিরা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। মুসল্লিরা বলছেন, অবরোধে শত ভোগান্তি নিয়ে বিশ্ব এজতেমায় এসেছিলাম। ভেবেছিলাম বাড়ি ফেরার পথ হবে নির্বিঘœ। কিন্তু সেই পথে আবার কাটা বিছিয়ে দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। হরতাল ডেকে আটকে দিয়েছে মুসল্লিদের। এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোন ধর্ম বিশ্বাস নেই। আছে ধর্ম ব্যবসা। তাই তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এমন ভোগন্তি দিচ্ছে। মুখে ধর্মের বুলি আর কাজে বিধর্মী কাজ করছে। বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও যদি বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ থাকে তাহলে এজতেমায় মুসল্লির সংখ্যা অনেক কম হবে। বিশ্ব তবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লীর হজরত মাওলানা সা’দ আহমেদ মোনাজাত পরিচালনা করেন। তিনি বেলা ১১টা ১৬ মিনিট থেকে মোনাজাত শুরু করেন এবং তা চলে ৩১ মিনিট, অর্থাৎ বেলা ১১টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত। মোনাজাত শুরু হতেই পুরো এলাকাজুড়ে নেমে আসে পিন পতন নীরবতা। খানিক পর পর শুধু ভেসে আসে আমিন, ছুম্মা আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন। অনুতপ্ত মানুষের কান্নার আওয়াজে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে পানাহ ভিক্ষা করছিলেন তাঁরা। ক্ষমা লাভের আশায় লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা ভোর থেকেই। বহু মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনার মধ্য দিয়ে তবলীগ জামাতের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে রবিবার। গতকাল প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে সংশিষ্ট সূত্রের ধারণা। গত শুক্রবার (৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছিল বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বের এজতেমা হবে ১৬ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার ভোর রাত থেকেই টঙ্গীর এজতেমা অভিমুখে শুরু হয় মানুষের ঢল। টঙ্গীর পথে শনিবার মধ্যরাত থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোটরগাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মোনাজাতে অংশ নিতে চারদিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি হেঁটেই এজতেমাস্থলে পৌঁছেন। সকাল ৮টার আগেই এজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হলে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলিতে অবস্থান নেন। এজতেমাস্থলে পৌঁছতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোনাজাতের জন্য পুরানো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষ আর মানুষ । শেষ দিনে বয়ানকারী ॥ রবিবার আখেরী মোনাজাতের দিন বাদ ফজর থেকে মোনাজাতের আগ পর্যন্ত ভারতের মাওলানা সা’দ আহমেদ তবলীগের গুরুত্ব তুলে ধরে হেদায়তি মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান করেন। তা বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশ তবলীগের মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম ও কাকরাইল মসজিদের ঈমাম হাফেজ মাওলানা জোবায়ের। এ সময় এজতেমাস্থলে আগতরা বিভিন্ন অবস্থান নিয়ে সেসব বয়ান শুনেন। হেদায়তী বয়ান ॥ হেদায়তী বয়ানে ভারতের মাওলানা সা’দ বলেন, ইসলামে নামাজের স্থান মানুষের দেহের মাথার মতো। নামাজ হলো আল্লাহর হুকুম। আল্লাহর হুকুম পুরা হলে তার ওয়াদা পূরণ হয়ে যায়। যার দীলে আল্লাহর এক্কিন পয়দা হবে, সে আল্লাহর হুকুমকে অগ্রাধিকার দেবে। নামাজের ফজিলত বান্দা তখনই পাবে, যখন কেউ রাসুলের (সা) মতো করে নামাজ পড়ে। ভালো মউত তাদেরই হবে, যারা আল্লাহর হুকুম ও রাসুলের (সা) হুকুমমতো চলে। দ্বীনের ঘরে বসে ইবাদতের চেয়ে বাইরে মেহনত করে ইবাদত বন্দিগী করা অনেক ফজিলত। আল্লাহ তার বান্দাদের দ্বীনের কাজে রাস্তায় বের হতে হুকুম দিয়েছেন। সকলকে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার কথা বলেছেন। আর এ দাওয়াতের জন্য তালিম নিতে হবে। মহল্লায় মহল্লায় মসজিদে বসে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে পরামর্শ করতে হবে। এতে শত্রুও বন্ধু হয়ে যেতে পারে। যিনি এখলাছের সাথে দ্বীনের কাজ করবেন তিনিই কামিয়াব হবেন। আল্লাহকে খুশি করার জন্য কাজ করলে জীবনে সফলতা আসে। সবচেয়ে বড় আমল হলো দ্বীনের কাজে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া। দুনিয়ার মাল সম্পদ আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। দুনিয়া দুনিয়ার জায়গায় থাকবে। আখিরাতে দুনিয়ার কোন সম্পদ কাজে লাগবে না। শুধু দ্বীন ও আমলই কাজে লাগবে। আল্লাহ সব সময় ডাকছেন বান্দারা তাঁর কাছে কিছু চাইবে। আল্লাহ বান্দাদের দেয়ার জন্য সব সময় তাঁকে ডাকার অপেক্ষায় থাকেন। কখন বান্দা তাঁর কাছে চাইবেন। যেমনটি ভিক্ষুক না পাওয়া পর্যন্ত চাইতেই থাকেন। বয়ানে আরও বলা হয়, দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতের প্রতি আমাদের বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে। দুনিয়ার জিন্দিগীর চেয়ে আখেরাতের জিন্দিগী হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী। আমাদের ওপর বৃষ্টির ফোঁটার মতো পেরেশানি ধেয়ে আসছে। এ পেরেশানি থেকে রক্ষার জন্য আমাদের ঈমানি শক্তিকে আরও মজবুত করতে হবে। ধাবিত হতে হবে আখেরাতের দীর্ঘ জিন্দিগীর দিকে। আল্লাহর কাছে কান্না-কাটি করে নিজের কৃতকর্মের অনুশোচনার মাধ্যমে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। চোখের পানি ফেলে মোনাজাত করতে হবে। মোনাজাত কবুল হলেই আমরা পাপমুক্ত হব। দুনিয়া ও আখেরাতে ফিরে আসবে শান্তি। বিদেশী মেহমান ॥ এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্তত ৮০টি দেশের তবলীগ জামাতের প্রায় ১৫ হাজার বিদেশী মেহমান এবারের এজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশী মেহমান আগমন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তবলীগের কাজে বের হওয়ার জন্য এবার এজতেমা স্থলে প্রথম পর্বে প্রায় ৬ হাজার জামাত তৈরি হয়েছে বলে এজতেমার আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। আগামী ১৫Ñ২০ দিনের মধ্যে এসব জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে তবলীগ সূত্র । ভিআইপিদের মোনাজাতে অংশগ্রহণ ॥ বিশ্ব এজতেমার মূল আকর্ষণ হচ্ছে আখেরী মোনাজাত। প্রতিবারের মতো এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী পরিষদের বিভিন্ন সদস্যবর্গ, সাংসদসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গুলশানে নিজের কার্যালয়ে টেলিভিশনের সামনে বসে সরাসরি সম্প্রচার দেখে মোনাজাতে অংশ নেন। এদিকে বিশ্ব এজতেমায় আগত লাখো লাখো মুসল্লির সঙ্গে এজতেমা ময়দানের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নুরুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। এছাড়াও আখেরী মোনাজাতে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ শরিক হন। এছাড়া পদস্থ সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দল-মত, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন। টেলিভিশন-মুঠোফোন ও ওয়্যারলেস সেটে মোনাজাত ॥ এজতেমা মাঠে না এসেও মোনাজাতের সময় হাত তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। টঙ্গীর এজতেমাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদের মাইকে আখেরী মোনাজাত সম্প্রচার করা হয়। এখানে অর্ধ লক্ষাধিক নারী পুরুষ ঈদগাহ মাঠে এবং পার্শ্ববর্তী সড়কে ও ভবনগুলোতে জড়ো হয়ে মোনাজাতে অংশ নেন। ইজতেমায় আরও চার মুসল্লির মৃত্যু ॥ রবিবার দুপুর পর্যন্ত টঙ্গীর তুরাগ তীরে আসা মুসল্লিদের মধ্যে মোট ১০ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শনিবার রাত সোয়া ১১টায় মারা যান চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার ভোলারদাড়ি এলাকার মকবুল হোসেন (৭৫), একই রাত ১২টার দিকে শ্বাসকষ্টে সিলেটের জকিগঞ্জ থানার কাদিরপুর এলাকার সাদেকুর রহমান (২০), রাত ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানার সুবলপুরের তোয়াজ্জেল হোসেন (৫০) ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার হরিচাদপুর এলাকার আব্দুস সোবাহান (৭০) মারা গেছেন বলে এজতেমায় পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক মোঃ মমিন মিয়া চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন। এর আগে এবারের বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে এসে আরও ছয় জন মারা যান। মোনাজাত শেষে যানজট ॥ মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া মানুষ একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করেন। এতে টঙ্গীর আশপাশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় জনজট ও যানজট। ফলে আবারও হেঁটে রওনা দেয় মুসল্লিরা। আর হাঁটা মুসল্লিদের চাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসল্লিদের যানবাহন রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থাকে এজতেমা মাঠের আশপাশের এলাকায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত ॥ গত তিন দিনে জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত এজতেমাস্থলের আশপাশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিশুদ্ধ খাদ্যদ্রব্য আইন, সিটি কর্পোরেশন আইন ও দ-বিধিতে মোট ১৩টি মামলা এবং ৪৭ হাজার টাকা জরিমানা ও অর্ধশতাধিক দোকানপাট উচ্ছেদ করেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ॥ টঙ্গী হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে হাসপাতাল ও ৩টি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে গত তিন দিনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় ৮ হাজার জন মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগজনিত রোগে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। এছাড়া আশপাশের বিভিন্ন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে আরও কয়েক হাজার মুসল্লিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রথম পর্বে ১০ হাজার জামাত তৈরি ॥ বিভিন্ন দেশে তবলীগের কাজে বের হতে এবার এজতেমা স্থলে প্রথম পর্বে প্রায় ১০ হাজার জামাত তৈরি হয়েছে বলে এজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। এসব জামাতে কেউ কেউ তিন চিল্লা, এমনকি আজীবন চিল্লার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। আগামী ১৫-২০ দিনে মধ্যে এসব জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে সূত্র জানায়। র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল ॥ এজতেমা চলাকালে গত কয়েকদিন ধরে র‌্যাবের নদী পথে স্পীডবোর্ড ও আকাশ পথে হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত ছিল। এছাড়া এবার গাজীপুর জেলা পুলিশ ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে কর্মকর্তাসহ ফোর্স এবং সারাদেশ থেকে র‌্যাব ইউনিটের কর্মকর্তাসহ ফোর্স এজতেমাস্থলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রায় ১২ হাজার সদস্য নিয়োজিত ছিল। মোনাজাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ ॥ আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মহিলা মুসল্লিও আগের দিন রাত থেকে এজতেমা ময়দানের আশপাশে, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাদে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন। মিডিয়ার জন্য ফ্রি ওয়াই ফাই ॥ বিশ্ব এজতেমার সংবাদ কাভারেজের সুবিধার্থে টঙ্গীর শহীদ আহসান উলাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে পুলিশের কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি এবার মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। গাজীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মিডিয়া কর্মীদের জন্য ফ্রি ওয়াই ফাই-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাজীপুর পুলিশ সুপার মোঃ হারুন অর রশিদ জানান, সংবাদ সংগ্রহে আসা সংবাদকর্মীদের জন্য একটি মিডিয়া সেন্টার ও সেখানে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের (ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন) ব্যবস্থা করা হয়েছে এ বছর। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৩৩টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নিবেন ॥ এবারের দুইপর্বের এজতেমায় অংশ নেয়ার জন্য পুরো এজতেমা ময়দানকে জেলাওয়ারি নির্দিষ্ট খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রথমপর্বে ৩১টি জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বিশাল চটের প্যান্ডেলের অভ্যন্তরে ৪০টি খিত্তায় অবস্থান নেন। ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এজতেমার দ্বিতীয়পর্বে বাকি ৩৩টি জেলার মুসল্লিরা ৩৯টি খিত্তায় অবস্থান নিবেন। খিত্তা অনুযায়ী এসব জেলা হচ্ছে খিত্তা নং-১ (নারায়ণগঞ্জ-১), খিত্তা নং-২ (নারায়ণগঞ্জ-২), খিত্তা নং-৩ (ঢাকা-১, হালকা-৩০১Ñ৩২৫), খিত্তা নং-৪ (ঢাকা-২, হালকা-৬০১Ñ৬৩৯), খিত্তা নং-৫ (কক্সবাজার), খিত্তা নং-৬ (মানিকগঞ্জ), খিত্তা নং-৭ (পিরোজপুর), খিত্তা নং-৮ (পটুয়াখালী), খিত্তা নং ৯ (১) (টাঙ্গাইল-ক), খিত্তা নং ৯ (২) (টাঙ্গাইল-খ), খিত্তা নং-১০ (১) (জামালপুর-ক), খিত্তা নং-১০ (২) (জামালপুর-খ), খিত্তা নং-১১ (বরিশাল), খিত্তা নং ১২ (নেত্রকোনা), খিত্তা নং-১৩ (কুমিল্লা), খিত্তা নং-১৪ (মেহেরপুর), খিত্তা নং-১৫ (ঝিনাইদহ), খিত্তা নং-১৬ (ময়মনসিংহ-১), খিত্তা নং-১৭ (ময়মনসিংহ-২), খিত্তা নং-১৮ (ময়মনসিংহ-৩), খিত্তা নং-১৯ (লক্ষ্মীপুর), খিত্তা নং-২০ (বি.বাড়ীয়া), খিত্তা নং-২১ (কুড়িগ্রাম), খিত্তা নং-২২ (নোয়াখালী), খিত্তা নং-২৩ (নীলফামারি), খিত্তা নং-২৪ (ঠাকুরগাঁও), খিত্তা নং-২৫ (পঞ্চগড়), খিত্তা নং-২৬ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), খিত্তা নং-২৭ (বগুড়া), খিত্তা নং-২৮ (পাবনা), খিত্তা নং-২৯ (নওগাঁ), খিত্তা নং-৩০ (মুন্সিগঞ্জ-১), খিত্তা নং-৩১ (মুন্সীগঞ্জ-২), খিত্তা নং-৩২ (মাদারীপুর), খিত্তা নং-৩৩ (গোপালগঞ্জ), খিত্তা নং-৩৪ (সাতক্ষীরা), খিত্তা নং-৩৫ (মাগুরা), খিত্তা নং-৩৬ (খুলনা), খিত্তা নং-৩৭ (সুনামগঞ্জ), খিত্তা নং-৩৮ (মৌলভীবাজার), ৩৯ (কুষ্টিয়া)। এজতেমার ইতিহাস ॥ এজতেমার আয়োজকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯১০ সালে ভারতের মাওলানা ইলিয়াস (রা.) তবলীগ জামাতের প্রচলন শুরু করেন মাওয়াত এলাকা থেকে। একটানা ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ তবলীগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর একমাত্র ছেলে মাওলানা মোঃ ইউসুফ তবলীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তবলীগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ বছর টঙ্গীতে ৪৯তম বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে তবলীগের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদে। এর পর ১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় এজতেমা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে। পরবর্তীতে এজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্দিরগঞ্জে। এসব এজতেমা তখন সীমিত আকারে অনুষ্ঠিত হতো বলে সেগুলো তখনও বিশ্ব এজতেমার মর্যাদা লাভ করেনি। ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর রেল স্টেশনের পাশে পাগাড় নামক স্থানে অনুষ্ঠিত এজতেমায় সর্বপ্রথম বাংলাদেশ ছাড়াও বিদেশী বেশ কয়েকটি দেশের মুসল্লিগণ অংশগ্রহণ করেন। ফলে এটি সে বছর থেকেই বিশ্ব এজতেমার মর্যাদা লাভ করে। সে বছর টঙ্গীর পাগাড়ে এজতেমা বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে সেখানে এজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের স্থান সংকুলান অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে। ফলে পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে এজতেমা অনুষ্ঠিত হয় টঙ্গীর কহরদরিয়া বা তুরাগ নদীর পূর্ব তীরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে। বিশাল পরিসরের এ খোলা ভূমি ছিল রাজউজের হুকুম দখলকৃত জমি। এরপর থেকে টঙ্গীর পাগাড়ের এক বছর নিয়ে ও তুরাগের পাড়ে ১৬০ একর জায়গায় ১৯৬৭ সাল থেকে দীর্ঘ ৪৯ বছর যাবৎ বিশ্ব এজতেমা একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। একই স্থানে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষে এবার ৪র্থ বারের মতো ৪৯তম বিশ্ব এজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উল্লেখ্য ১৯৯৬ সালে একই বছর দুইবার বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
×