ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুড়িগ্রামে চারা গজায়নি ॥ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিক্রেতারা

আলু চাষে নিঃস্ব কৃষক

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

আলু চাষে নিঃস্ব কৃষক

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে ॥ জেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানির আলু বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন বহু কৃষক। এসব বীজ জমিতে রোপণের পর পচে গেছে। চারা গজায়নি। আবার কোথাও কোথাও গজালেও পাতা কুকড়ে থমকে গেছে গাছের বৃদ্ধি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণের জন্য ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে দোকানে ধর্ণা দিচ্ছে। পালিয়ে বেড়াছেন কয়েক বিক্রেতা। মৌসুমের শুরুতে বীজের চড়া দাম ও সঙ্কটের কারণে বীজ নকল হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অবশ্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ক্ষেত পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, বীজে সমস্যা থাকার সম্ভাবনা কম। বরং রোপন প্রক্রিয়ায় কোথাও গোলমাল থাকায় এমনটি ঘটেছে। সরেজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শিবরাম, সন্ন্যাসী, গয়ারী, প্রতাপ, রাজারহাট উপজেলার রামসিং, দিনোবাজারসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে মূলত বিএডিসির বীজ নিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে বহু কৃষক। সন্ন্যাসী গ্রামের কৃষক সাইদুল জানান, ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ২ একর জমি বর্গা নিয়ে আলুর আবাদ করেছেন, ৪০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা কার্ডিনাল জাতের বীজ কিনেছেন কাঁঠালবাড়ির বিএডিসির ডিলার আব্দুল জলিলের কাছে। কিন্তু বীজ রোপণের পর চারা না গজায় মাটি খুঁড়ে দেখতে পান আলুর খ-াংশ পচে গেছে। একই গ্রামের আব্দুল হামিদের ৬০ শতক, আজাদ আলীর ৮০ শতক, রমজান আলীর ২৫ শতক, মোজাম্মেল হকের ৫৫ শতক জমিতে আলুর আবাদ করলেও সকলের একই অবস্থা হয়েছে। এসব জমির বেশিরভাগই ফাঁকা পড়ে আছে। শিবরাম গ্রামের মাহবুব আলীর ৮০ শতক, দিনোবাজারের রমজান আলী ও আলম মিয়া ৩ একর জমিতে বিএডিসির বীজ রোপণ করার পর চারা না গজায় ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে দিয়েছেন জমি। কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘বিএডিসির ৩৯ বস্তা আলু বীজ কনছি। অর্ধেক আলু পচে গেছে। জমি দেখলে তা বোঝা যায়।’ কৃষকরা জানান, এসব বীজের ক্ষতিপূরণ না দিলে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়বে। এ রকম অবস্থা হয়েছে অনেক কৃষকের। বেসরকারী কোম্পানি রিসার্চ এগ্রো প্রাইভেট লিমিটেডের বীজ নিয়ে একই সমস্যা হওয়ায় শিবরাম গ্রামের আসাদুজ্জামান ৫ একর জমিতে চাষ দিয়ে আবার অন্য বীজ রোপণ করেছেন। কৃষকরা জানান, জমিতে আলু বীজ রোপণের সময়ই একর প্রতি গড়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। এ সময় বীজের এই অবস্থা হওয়ায় তারা পথে বসার উপক্রম হয়েছেন। বিএডিসি কর্র্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অবহিত করা হলে তারা জানিয়েছে বীজে নয় জমি তৈরি ও রোপণ প্রক্রিয়ায় কোথাও সমস্যা আছে। একই বীজ আগে পরে লাগানোর পর কোন সমস্যা হয়নি। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণেও এমন ঘঠনা ঘটেতে পারে বলে তার ধারণা। বেসরকারী কোম্পানি রিসার্চ এগ্রো লিমিটেডের পরিবেশক আমিনুর রহমান মানিক জানান, তিনি এ বছর ৬৪ মে. টন বীজ বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে প্রথম দিকে রোপণ করা কয়েক টন আলুর বীজ গজায়নি। তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক শওকত আলী সরকার জানিয়েছেন, কিছু মাঠ পরিদর্শন করে তারা বুঝতে পেরেছেন বীজে নয়, হয়ত জমি নির্বাচন ও রোপণ প্রক্রিয়ায় কোথাও সমস্যা হয়েছে। তার পরেও বিষয়টি বিএডিসিকে জানানো হবে। কুড়িগ্রাম বিএডিসির সহকারী পরিচালক মাশেয়ুল হক মামুন জানান, তিনি কৃষকদের কাছ থেকে চারা না গজানোর কোন অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন।
×