ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারে ড্রপআউট ৪২ শতাংশের বেশি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারে ড্রপআউট ৪২ শতাংশের বেশি

নিখিল মানখিন ॥ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর ড্রপআউটের উচ্চ হার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ড্রপআউটের হার এখনও ৪২.২ শতাংশ। ১৭.৬ শতাংশ দম্পতির মধ্যে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। আর পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষের এখন যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু অসচেতনতা ও পদ্ধতি উপকরণের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে অনেক দম্পতির বেশিসংখ্যক সন্তান নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। কিশোরী অবস্থায় সন্তান ধারণের জন্য দারিদ্র্য ও অশিক্ষাকে দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিসংখ্যানে পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বৃদ্ধির চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। তবে প্রত্যাশিত হারে নয়। অধিদফতর জানায়, ১৯৭৫ সাল থকে প্রতিবছর পরিবার পরিকল্পনা ব্যবহারকারীর সংখ্যা গড়ে ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৫০ সালে ১ কোটি ছিল। তা ২শ’ বছর পর ১৯৫১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ২ কোটি ৩ লাখ হয়। এই জনসংখ্যা ৪ কোটি ২০ লাখ হয় ৯০ বছরে (১৯৪১ সালে)। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে ৯৭৯ জন। বর্তমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল উর্ধগামী। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করলেও তা ছিল পূর্বের বৃদ্ধির তুলনায় একেবারেই উদ্বেগজনক। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর জানায়, পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ১৯৭৫ সালের ৭.৭ শতাংশ থেকে ২০১০ সালে ৬১.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার সন্তোষজনক হারে বাড়েনি। ১৭.৬ শতাংশ দম্পতির মধ্যে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অপূর্ণ চাহিদার ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত মহিলাদের মধ্যেই অপূর্ণ চাহিদার হার সবচেয়ে বেশি। এ হার ১৯.৮ শতাংশ। এ বয়সীদের মধ্যে মাত্র ৩৭.৬ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশের ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়। আর বিবাহিতদের মধ্যে কিশোরী অবস্থাতেই গর্ভধারণ করেন শতকরা ৬৪ দশমিক ৩ ভাগ। এই হিসেবে দেশের ১৬ মিলিয়ন কিশোরী প্রতিবছর সন্তান জন্ম দেয়। শহরের তুলনায় গ্রামে কিশোরী অবস্থায় মা হওয়ার প্রবণতা বেশি। রাজশাহী বিভাগে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি শতকরা ৩২ দশমিক ৮ ভাগ এবং সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯ দশমিক ৭ ভাগ। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ১৬ মিলিয়ন কিশোরী প্রতিবছর সন্তান জন্ম দেয়, যাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনেরই ইতোমধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের জনসংখ্যার শতকরা ২৩ ভাগই ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরী। যাদের মধ্যে আবার ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয় ৬৬ শতাংশের। এসব কিশোরীর আবার এক-তৃতীয়াংশ এবং ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সে তিন-চতুর্থাংশ কিশোরী সন্তান ধারণ করে। স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণের হারও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। শতকরা ৫ দশমিক ৭ ভাগ স্থায়ী এবং ৮ দশমিক ৬ ভাগ দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের পদ্ধতি গ্রহণের হার এখনও অনেক কম। শতকরা ৫ দশমিক ২ ভাগ পুরুষ স্থায়ী এবং অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিবছর পরিবার পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পেছনে সরকার ও বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু ব্যয়ের তুলনায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম কাজ দেখাতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফলতার মুখ দেখছে না পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়ে গেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আগের মতো সেবা দিচ্ছেন না মাঠকর্মীরা। প্রচারও দুর্বল হয়ে পড়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শীঘ্রই দেশে জনসংখ্যার বিষ্ফোরণ ঘটবে এবং জাতীয় জীবনে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর দাবি করে, বাল্যবিবাহ কিশোরীদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়। কিশোরীদের জোর করে বা প্রতারণা করে যৌনমিলনে বাধ্য করা হয়। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে বেশির ভাগ কিশোরীর মধ্যেই যৌন শিক্ষা-সম্পর্কিত কোন ধারণা নেই এবং তারা নিজের পছন্দমতো সময়ে গর্ভধারণ করতে পারে না।
×