ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মামলা তুলে নেয়ার চাপ

ফতোয়াবাজির শিকার নাজমার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

ফতোয়াবাজির শিকার নাজমার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ সদর উপজেলার নরসিংসার গ্রামে ফতোয়াবাজির শিকার নাজমা বেগমের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার রাত প্রায় ১০টায় দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে একটি ঘর পুড়ে গেছে। পরে স্থানীয় লোকজন আগুন আয়ত্তে আনে। এদিকে, ফতোয়ার শিকার নাজমা তার পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে শহরে চলে এসেছে। তার স্বামীকে সন্ত্রাসীরা মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তাদের নিয়োগ দেয়া মসজিদের ইমামকে বিদায় করে দিয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সন্ত্রাসী মামলা শেষ না করায় তাকে নানা হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তালশহর গ্রামের নাজমা বেগম (৪৫) কিশোরী থাকা অবস্থায় আশির দশকের প্রথম ভাগে বিয়ে হয় সদর উপজেলার নরসিংসা গ্রামের আব্দুল করিমের সঙ্গে। বিয়ের পর ভালই চলছিল সংসার। কিশোরী নাজমার একে একে দুটি পুত্র হয়। এরপর থেকে নানা কারণে তার উপর চলতে থাকে অমানষিক নির্যাতন। এ অবস্থায় স্বামীর বাড়িতে টিকতে না পেরে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয় নাজমা। ’৮৮ সালে ১৯ জুন স্বামী তাকে তালাক দেয়। এরই মাঝে ছেলে দুটি বড় হয়। এক পর্যায়ে বিদেশ যাবার জন্য উদ্যোগ নেয়। এ সুযোগে স্বামী আব্দুল করিম নাজমাকে নিয়ে আবার সংসার করার ফন্দি আঁটে। নাজমা রাজি না থাকলেও সমাজ সংসারের চিন্তা করে রাজি হয়। এরপর ২০০১ সালে ছেলেদের চাপে পিতা আব্দুল করিম নরসিংদীর এক মাওলানার মাধ্যমে নতুন করে বিয়ে পরিয়ে ঘর-সংসার শুরু করেন। এরপর কেটে যায় একযুগ। স্থানীয় একটি মহল তাদের একযুগের ঘর-সংসারকে অবৈধ আখ্যা দেয়। গত বছল এক গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে তাকে একঘরে করে রাখা হয়। স্থানীয় ফতোয়াবাজরা ঘোষণা দেয় তাঁর বিয়ে বৈধ নয়। ১৪ বছর অবৈধ সংসার করার জন্য তিরস্কার বরা হয়। কাফফারা (জরিমানা) হিসেবে স্বামী-স্ত্রীকে ১০ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। তবে স্ত্রীকে জরিমানা করা হয় একলাখ টাকা এবং তাকে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়। সালিশের রায় উপেক্ষা করলে আরও ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও জুতাপেটার নির্দেশ দেয়া হয়। এর পর থেকে শুরু হয় একের পর এক অত্যাচার। জনকন্ঠকে নাজমার পুত্র শ্যামল জানায়, জীবন বাঁচাতে মাকে নিয়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছি। বাড়ি থাকা সত্ত্বেও সেখানে থাকতে পারছি না। এখন ভাড়া থাকতে হবে। বাবাকে সন্ত্রাসীরা মারধর করে। গ্রাম্য সরদার মাতব্বররা চাচ্ছে মামলা তুলে নিতে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার ফরিদ মিয়া বলেন, তার একটি ঘর রাতে পুড়ে গেছে। সদর এএসপি সার্কেল তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, আমরা খবর পেয়েছি। ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×