ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবারের আখেরি মোনাজাত

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

এবারের আখেরি মোনাজাত

‘এজতেমা’র আভিধানিক অর্থ সমাবেশ। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হলো শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্মবাণী প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে নৈতিক উৎকর্ষ সাধন ও আত্মশুদ্ধি অর্জন। জঙ্গীবাদ, ধর্মান্ধতা, কূপম-ূকতা, মৌলবাদ, অশান্তি, হানাহানির বিপরীতে এই সমাবেশ বিশ্বমানবতার শান্তি, সম্প্রীতি ও কল্যাণ কামনা করে। সেইসঙ্গে অন্তরের পরিশুদ্ধি লাভের জন্য প্রার্থনা করে। টঙ্গীর অদূরে তুরাগ নদের তীরে এই এজতেমায় প্রতিবছর বিশ্ব মুসলিমের সমাবেশ ঘটে। পবিত্র হজের পর মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশটি শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। আজ রবিবার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব। তিনদিন বিরতির পর আবার ১৬ জানুয়ারি হবে দ্বিতীয় পর্ব। এবারের এজতেমা আয়োজন ও অংশগ্রহণে নানান বিপত্তি এসেছে। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোট তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে এ সমাবেশে বেশ কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। তারা সারাদেশে অবরোধ ডেকে এজতেমায় অংশ নিতে বাধা দিয়েছে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে। সামান্য ছাড়টুকুও দেয়নি। পথে পথে হামলা চালিয়েছে। রেলপথেও বিঘœ সৃষ্টি করেছে। তবু লাখো মানুষ সেসব উপেক্ষা করে এজতেমায় অংশ নিচ্ছে। অথচ এই রাজনৈতিক দলগুলোই ‘ইসলাম’কে ব্যবহার করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চালিয়ে আসছে শুধু নয়, ধর্মের নামে মানুষ হত্যাও অব্যাহত রেখেছে। আখেরি মোনাজাতে মোনাফেকদের পতন ও ধ্বংসের জন্যও প্রার্থনা করা হবে। শুক্রবার প্রথম দিন ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে এজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন জুমার নামাজ পড়তে সেখানে আশপাশ এলাকা থেকে বহু মুসল্লি যোগ দেয় অবরোধ উপেক্ষা করে। আজ আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে সারাদেশ থেকে আরও অনেকে এ সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন ‘অবরোধ’ নামক প্রতিবন্ধকতাকে প্রতিরোধ করেই। ১৯৬৬ সালে তুরাগ নদের তীরে এজতেমা শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যায়ক্রমে এই সমাবেশে দেশ-বিদেশের মুসলমানের অংশগ্রহণ এবং এর আকার বৃদ্ধি ইসলামের বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের অনন্য দিকটি তুলে ধরছে। তাই বিশ্বব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে এজতেমার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবী ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই এজতেমায় অংশ নিয়ে থাকেন। তিনিই মুসল্লিদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছেন ও নিরাপত্তার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। এজতেমায় যাঁরা অংশ নেন, তাঁরা মূলত জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, হানাহানির বিপরীতে শান্তির বাণীই প্রচার করে আসছেন। অবরোধের মতো বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও এজতেমা যথাযথভাবে সম্পন্ন হতে পারছেÑ এটাই শান্তিকামী মানুষের প্রাপ্তি।
×