ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খোলা আকাশের নিচে পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১০ জানুয়ারি ২০১৫

খোলা আকাশের নিচে পরীক্ষা

কালিদাস রায়, নাটোর থেকে ॥ সারি বদ্ধভাবে মাটির দিকে মাথা নামিয়ে এক মনে উত্তরপত্রে লিখে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ রৌদ্রের তাপ সহ্য করতে না পেরে এক হাত দিয়ে মাথার উপরে ছাতা ধরে অন্য হাত দিয়ে লিখে চলেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় তারা যেন সারিবদ্ধভাবে শরীরচর্চা নিয়ে ব্যস্ত। একটু ফিরে তাকানোর ফুসরত কারও নেই। এভাবেই খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বসে পরীক্ষা দিল নাটোরের সিংড়া উপজেলার জোড়মলিকা নিংগইন উচ্চ বিদ্যালয়ের আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ ও বেঞ্চ স্বল্পতার কারণে বিদ্যালয়ের মডেল টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ের খোলা মাঠকেই শ্রেণীকক্ষ মনে করে পরীক্ষা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। জীবন যুদ্ধে নামার আগাম প্রশিক্ষণের চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে। এই ধরনের প্রশিক্ষণ হয়ত শিক্ষার্থীদের আরও বলীয়ান ও শক্তিমান করে তুলতে সক্ষম। শিক্ষার্থীদের এমন কঠোর অনুশীলন আমাদের স্মৃতিটাকে ৩০ বছর পেছনে নিয়ে যায়। যখন কাদা-পানি, ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় নিয়ে, গামছা পরে এক হাতে বই আর জামা-প্যান্ট ধরে অন্য হাতের সাহায্যে সাতার কেটে জলাশয় পার হয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করত শিক্ষার্থীরা। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে জোড়মলিকা নিংগইন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়ার চিত্র দেখে সেদিনের স্মৃতি অনায়াসে মনে পড়ে যায়। সামনেই তাদেরকে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। অথচ কনকনে ঠা-া বাতাস মেশানো রুƒক্ষ আবহাওয়ায় মাটিতে বসে পরীক্ষা দেয়ায় শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে অসুস্থতার শিকার হতে পারে। এতে তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এ অবস্থা শুধু এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বিদ্যালয়ের অন্যান্য ক্লাসের জন্য প্রযোজ্য বটে। ঠা-া আবহাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বসে পরীক্ষা দেয়ায় শিক্ষার্থীদের কম দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। বৃহস্পতিবার সকালে এ বিদ্যালয়ের মাঠে এভাবেই পরীক্ষা দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। জানা গেছে, এলাকার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার স্বার্থে ১৯৬৭ সালে জোড়মলিকা নিংগইন উচ্চ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ১০ কক্ষবিশিষ্ট ভবনটি বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ, শ্রেণীকক্ষ ও কমনরুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলান হয় না। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ শতাধিক। আর একারণেই খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে বাধ্য হন শিক্ষকরা। একই অবস্থা চলছে পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে। শ্রেণীকক্ষ ও বেঞ্চের সংকটের কারণে এবার ২০১৫ সালের ৪১ এসএসসি পরীক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বসে মডেল টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নিতে দেখা গেছে। প্রতিবছর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভোগও বাড়ছে সমান তালে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে না প্রয়োজনীয় শ্রেণীকক্ষ ও বেঞ্চের সংখ্যা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রেণীকক্ষ ও বেঞ্চ না থাকার দরুন নিতান্ত বাধ্য হয়েই বিদ্যালয় মাঠে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হয়।
×