ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্বাসকষ্ট না কমলেও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না খালেদা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

শ্বাসকষ্ট না কমলেও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না খালেদা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শ্বাসকষ্ট কমছে না খালেদা জিয়ার। শ্বাসকষ্ট ছাড়াও তিনি কাশি, পায়ে ব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন। শনিবার রাত থেকে গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ির দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করতে গিয়ে ঘুমের সমস্যা ও সোমবার পিপার স্প্রের প্রতিক্রিয়ায় তিনি অসুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে ৩ দিন ধরে অসুস্থ থাকার পরও তিনি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। বরং বুধবার দিনভর বিভিন্ন জনের সঙ্গে সাক্ষাত দিয়েছেন, কথাবার্তা বলেছেন। যদিও তিনি আদালতে হাজিরা দিতে যাননি। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সরকার বিরোধী আন্দোলন সফল করার স্বার্থেই তিনি গুলশান কার্যালয় থেকে হাসপাতাল কিংবা বাসায় ফিরে যাচ্ছেন না। আবার দলের কেউ কেউ বলছে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে বলেই তিনি সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন না। তবে সুস্থতা কামনা করে তিনি দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন। জানা যায় তিন বেলাই তিনি বাসার খাবার খাচ্ছেন। শ্বাসকষ্টে ভুগছেন খালেদা জিয়া-ডাঃ সিরাজ ॥ আগের ২ দিনের মতো বুধবারও দফায় দফায় গুলশান কার্যালয়ে ডাক্তার ডেকে এনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ওষুধ সেবনের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট নিরসনে তাকে অক্সিজেনের সিলিন্ডার থেকে নেবুলাইজার দেয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করে এবং সোয়া ৫টায় খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা শেষে বাইরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (পিজি হাসপাতাল) বোন এ্যান্ড জয়েন্ট স্পেশালিস্ট ও সার্জন প্রফেসর ডাঃ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অনেক অসুস্থ। তিনি এখনও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এবং তাঁর চোখ দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর পানি পড়ছে। এক প্রশ্নের জবাবে ডাঃ সিরাজ উদ্দিন বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। তবে হাসপাতালে নেয়া হবে কিনা তা বলতে পারবেন যারা তার মেডিক্যাল বোর্ডে আছেন তাঁরা। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া পুরোপুরি বিশ্রামে আছেন। পিপার স্প্রের কারণে তাঁর শাসকষ্ট হচ্ছে। আন্দোলন প্রসঙ্গে কোন কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে তেমন কোন কথা হয়নি। তবে তাঁকে বার বার দেখতে না গিয়ে সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় থাকতে বলেছেন। খালেদা জিয়া অসুস্থ হলেও ভেঙ্গে পড়েননি- প্রফেসর ইউসুফ হায়দার ॥ দুপুরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে তার গুলশান কার্যালয়ে যান বিএনপিপন্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)-এর সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে বেলা আড়াইটায় বাইরে এসে প্রফেসর ইউসুফ হায়দার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েননি। তিনি মানসিকভাবে শক্ত তবে খুব বেশি কথা বলতে পারছেন না। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। আমরা ইউট্যাবের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের মাত্র ছয়জনকে কার্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নয়। তাহলে আমাদের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যদের দেখা করতে দেয়া হলো না কেন? তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া অবিলম্বে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার অক্ষুণœ রাখারও আহ্বান জানান তিনি। প্রফেসর ইউসুফ হায়দারের সঙ্গে আরও ছিলেন অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান, অধ্যাপক ড. আজিজ, অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, ড. মোঃ খোরশেদ আলম খান ও ড. তাহমিনা আখতার টপি। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য পুলিশই দায়ী- মাহফুজ উল্লাহ ॥ বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গুলশান কার্যালয়ে যান বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহফুজ উল্লাহ। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে বিকেল পৌনে ৩টায় বাইরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য পুলিশই দায়ী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও আন্দোলনে মনোবল অনড় থাকার কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে অসুস্থ থাকার কারণে খালেদা জিয়া বেশি কথা বলতে পারেননি। তাঁর অসুস্থতা দেশ ও দেশের জনগণের উৎকণ্ঠার কারণ। তাঁর এ অসুস্থতার জন্য আমরা বিচলিত বোধ করছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীর এ অবস্থা দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের কর্মকা- চলতে থাকলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। বাসার খাবারই খাচ্ছেন খালেদা জিয়া ॥ শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিট থেকে গুলশান কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ থাকলেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিয়মিত বাসার খাবারই খাচ্ছেন। তবে তাঁর সঙ্গে থাকা মহিলা দলের নেতাকর্মীসহ অন্যরা হোটেল থেকে কিনে আনা খাবার খাচ্ছেন। খালেদা জিয়ার জন্য প্রতিদিন সকালের নাস্তা আসে নিজের বাসা থেকে। আর দুপুর ও রাতের খাবার আসে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বাসা থেকে। শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা প্রতিদিনই একবার এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার জন্য সকালের নাস্তায় থাকে পাউরুটি, কলা, ডিম ও ফলের জুস। আর দুপুর ও রাতের খাবারের তালিকায় থাকে সাদা ভাতের সঙ্গে মাছের ঝোলের পাশাপাশি সবজি, লাল শাক, করলা ভাজি ও ডাল। শনিবার রাত থেকেই গুলশান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় নিজের কক্ষে শুয়ে-বসে সময় কাটান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। মাঝে মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ অন্য নেত্রীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে কাটছে বেশিরভাগ সময়। বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেলসহ ওই কার্যালয়ে অবস্থানরত কয়েক নেতা নিয়মিত খালেদা জিয়াকে সারাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করছেন। তবে রাতে ঘুমানোর সময় তাঁর সঙ্গে কাউকে থাকতে দেয়া হয় না। নিজের চেম্বারের পাশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠক কক্ষে পাতা খাটে ঘুমিয়ে রাত কাটান তিনি। শনিবার রাতে কার্যালয়ে আটকা পড়ার পরই বাসা থেকে সেখানে বিছানার চাদর, লেপ-তোষক ও কম্বল নেয়া হয়েছিল। এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের প্রধান গেটে তালা লাগানো থাকলেও পকেট গেট দিয়ে লোকজন যাতায়াত করে। তাঁর অফিসের সামনে পুলিশ প্রহরা কিছুটা শিথিল করা হলেও জলকামান ও কয়েকটি পুলিশভ্যান দাঁড় করিয়ে ৮৬ নম্বর সড়কের ২ পাশে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে।
×