ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর দুই শতাধিক স্পটে আওয়ামী লীগের ব্যাপক শো-ডাউন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

রাজধানীর দুই শতাধিক স্পটে আওয়ামী লীগের ব্যাপক শো-ডাউন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন সোমবার রাজপথ ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। গণতন্ত্রের বিজয় দিবসের এই দিনটিতে নিষেধাজ্ঞা মেনেই নগরীর অলিগলিসহ দুই শতাধিক স্থানে দিনভর ব্যাপক শো-ডাউন ও সতর্ক অবস্থানে থেকে বিজয়োৎসব পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসংখ্য সংগঠন। ঢাকা মহানগর মেট্টোপলিটন পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে মহানগরীর ১৬টি স্পটে নির্ধারিত সভা-সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রা স্থগিত করলেও বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নীরব সতর্ক প্রহরায় ছিল দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী। কোথাও নীরব মানববন্ধন, কোথাও ফুটপাতে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়ে কার্যত রাজপথ দখলে রেখেছিল তাঁরা। নগরীর দু’তিনটি স্থানে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা ঝটিকা মিছিল বের করে ককটেলবাজি ও ভাংচুরের চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়ায় তারা এক মিনিটও দাঁড়াতে পারেনি, পালাতে বাধ্য হয়। গণতন্ত্রের বিজয় উৎসব উপলক্ষে নগরীর প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে অবস্থান কর্মসূচীতে দিনভর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া দেশাত্মবোধক গান মাইকে বাজানো হয়। তবে আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নগরীর কোথাও পূর্বনির্ধারিত সভা-সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেনি আওয়ামী লীগ। সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি নেতাদের কোথাও দেখা যায় না। তারা গর্তে ঢুকে পড়েছে। আর খালেদা জিয়া এমন একজন নেত্রী যিনি একাই আন্দোলনের ডাক দেন, নিজে একাই মাঠে নামেন। ওনার নেতাকর্মীরা ওনার ডাকে মাঠে নামে না। খালেদা জিয়াকে ‘অসহায় নেত্রী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্দোলনের মাঠে কাউকে না পেয়ে ওই নিজেই বলেন, নিজেই মাঠে নামবো। কী অসহায় আজকে খালেদা জিয়া, কি অসহায় নেত্রী উনি। এমন অসহায়ত্ব নিয়ে উনি কীভাবে আন্দোলনের ডাক দেন সে ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় এই মুখপাত্র। দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীর ঘোষণায় রবিবার বিকাল ৫টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ডিএমপি। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীতে জনমনে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। রবিবার রাতে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের এক জরুরি সভা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পুলিশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে না। তাদের কর্মসূচী পরবর্তীতে পালিত হবে। এদিকে, সোমবার সকাল থেকেই রাজপথে নেমে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে অবস্থানের পাশাপাশি নগরীতে মটর শোভযাত্রাসহ মহড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের অনেককে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উল্লাস করতেও দেখা গেছে। সরকারবিরোধীরা যাতে রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্যই পুরো নগরীজুড়েই সতর্কবলয় গড়ে তুলেছিল শাসক দলটি। সোমবার সকাল থেকে কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, কাকরাইল, মিরপুর ১০ নম্বর, প্রেসক্লাব, পল্টন মোড়, হাই কোর্ট এলাকা, পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড়, শাহবাগ, গুলশান, পূরবী সিনেমা হলের সামনে, শ্যামপুর-জুরাইন রেলগেট, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী মাঠ, বাড্ডা-রামপুরা পেট্রোল পাম্প, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোড, মিরপুর-১ (গোলচত্ত্বর), লালবাগ, গুলশান, সূত্রাপুর, তেজগাঁও, হাতিরপুল, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোড, সাইন্সল্যাব, সেন্ট্রাল রোড, সবুজবাগ-খিলগাঁও, উত্তরা, কামরাঙ্গীর চর, মোহাম্মদপুর, কাফরুল, শাহবাগ, মৎস্যভবন, কামরাইল, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ বিভিন্ন প্রবেশমুখ ও জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দুই শতাধিক স্থানে রাস্তার পাশে ছোট ছোট দলে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। কোথাও মানববন্ধন, কোথাও সারিবদ্ধভাবে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আবার কোথাও রাস্তার পাশে চেয়ার পেতে দলটির শত শত নেতাকর্মীদের সর্ত অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়। অনেকস্থানে নিরব বিজয় র‌্যালীও করে সরকার সমর্থকরা। মোহাম্মদ নাসিমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নগরীর বিভিন্নস্থান পরিদর্শন শেষে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় বসে রাজধানীর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। আ’লীগের সংবাদ সম্মেলন ॥ পরে সন্ধ্যায় ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘পরাজিত নেত্রীর আর্তনাদ’ উল্লেখ করে বলেন, নেতাকর্মীহীন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অসহায় হয়ে পড়েছেন। বিএনপি নেত্রীকে আন্দোলনের ডাক দিয়ে নিজেকেই মাঠে নামতে হয়। তাঁর ডাকে তার নেতাকর্মীরাও মাঠে নামে না। খালেদা জিয়া আজ অসহায় হয়ে গেছেন। তাকে একাই মাঠে নামতে হয়। বিএনপি নেতারা গর্তে ঢুকে পড়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের কোথাও দেখা যায় না। তাঁরা গর্তে ঢুকে পড়েছেন। খালেদা জিয়া ডাকলেন, নামলেন কিন্তু নেতারা নামলেন না। উনি একাই থাকলেন। কি অসহায় খালেদা জিয়া! কর্মী নাই, নেতা নাই। তিনি বলেন, আমরাও আন্দোলন করেছি। আন্দোলন করতে হলে ব্যারিকেড ভেঙ্গেই আন্দোলন করতে হয়। ‘নিরাপত্তার অজুহাতে বন্দী করে রাখা হয়েছে’ খালেদা জিয়ার এমন অভিযোগের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কেউ তাঁকে বাধা দেয়নি। খালেদা জিয়াকে আমরা কেউ বন্দী করিনি। তিনি নিজেই নিজেকে বন্দীর নাটক করেছেন। তবে তাঁর বাসায় ও কার্যালয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। খালেদা জিয়া নিজের নিরাপত্তার জন্য নিজেই থানায় লিখিত আবেদন করেছিলেন। তাই তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
×