ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হরতাল ডেকে সহিংসতা করে কোন লাভ হবে না ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১ জানুয়ারি ২০১৫

হরতাল ডেকে সহিংসতা করে কোন লাভ হবে না ॥ তোফায়েল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারী এজেন্টরা হরতালে গাড়িতে বোমা মেরে আগুন ধরিয়েছে বিএনপি মহাসচিবের এ দাবির সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিরোধীদলের ডাকা হরতালে সরকারের এজেন্টরা বোমা মারতে যাবে কেন? সরকারী এজেন্টরা যদি বোমা মেরে থাকে তাহলে সেই এজেন্টদের নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তোফায়েল আহমেদ বলেন, হরতালে কারও কোন লাভ হয় না। সোমবারের হরতালে বিরোধীদলের শিক্ষা হয়েছে। তাই ধারণা করা যায় জানুয়ারিতে তারা আর কোন হরতাল দেবে না। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের নামে হরতাল ডেকে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কোন লাভ হবে না। এসব আন্দোলন ছেড়ে আগামী নির্বাচনে অর্থাৎ ২০১৯ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের অস্থায়ী মেলা সচিবালয়ে ঢাকা বাণিজ্যমেলা (ডিআইটিএফ) উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে পূর্বাচলে স্থায়ী ও পদ্মার তীরে জায়গা নিয়ে বড় মেলা করারও চিন্তা চলছে। সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন ও ডিআইটিএফ’র ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশিষ বসু উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে পূর্বাচলে স্থায়ী মেলা হবে। এছাড়া পদ্মার তীরে জায়গা নিয়ে বড় মেলা করারও চিন্তা চলছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই সারাবছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশেও সারাবছর মেলা হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে মন্ত্রী জানান। মন্ত্রী জানান, পূর্বাচলের স্থায়ী মেলার জন্য চীন সরকার ২৭০ কোটি টাকা দেবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের ইআরডি বিভাগের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। পূর্বাচলে ২০ একর জায়গা জুড়ে ওই মেলা হবে। তিনি বলেন, এবারের মেলায় সব ধরনের সুযোগ ও নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিগত দিনের অভিজ্ঞতা কাজে লগিয়ে মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা আধুনিক করা হয়েছে। মেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেট পার্কিং এরিয়া এবং চার পাশে ৮০টি সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত আনসার, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি নিয়োজিত থাকবে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২ লাখ ৪৬ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে এবারের মেলা বসবে। গত বছর মেলায় ডিআইটিএফ ৮০ কোটি টাকার রফতানি আদেশ পায়। এবার আরও বেশি রফতানি আদেশ পাওয়া যাবে। পৃথিবীর নানা দেশের মেলায় ঘোরার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, পৃথিবীর যে কোন দেশের চাইতে আমাদের ঢাকার মেলা অনেক বেশি বড়। এই মেলায় বিদেশের যারা আসেন তারা সবাই খুশি হন। আজ বৃহস্পতিবার ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০তম এই মেলার উদ্বোধন করবেন। সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, এবারের বাণিজ্য মেলায় স্টল থাকছে ৫০০টি, যা গতবারের চেয়ে ৩৪টি বেশি। স্টল বরাদ্দে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে অনুসরণ করা হয়েছে প্রকাশ্য নিলাম ও লটারি পদ্ধতি। তিনি জানান, এবারের মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভেলিয়ন হবে ৫৪টি। এছাড়া প্রিমিয়ার মিনি প্যাভেলিয়ন ৩৫টি, জেনারেল প্যাভেলিয়ন ৯টি, মিনি প্যাভেলিয়ন ১০টি, রিজার্ভ প্যাভেলিয়ন ৩টি, রিজার্ভ মিনি প্যাভেলিয়ন ৩টি, বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য প্যাভেলিয়ন ২২টি, বিদেশী মিনি প্যাভেলিয়ন ৩টি, প্রিমিয়ার স্টল ৫২টি, বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রিমিয়ার স্টল ১৯টি, জেনারেল স্টল ২৪৯টি, ফুড স্টল ৩১টি, ফুড রেস্টুরেন্ট ৬টি ও বিদেশী খাদ্যের রেস্টুরেন্টের জন্য ৪টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, দেশীয় নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ২৯টি আলাদা স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধাসহ এবারে আলাদা করে রাখা হচ্ছে মা ও শিশু কেন্দ্র। এছাড়া শিশুদের জন্য আলাদা দুইটি শিশু পার্ক, গতবারের সুন্দরবনের আদলে ইকোপার্কের পাশাপাশি ই-পার্ক (কম্পিউটার গেমস জাতীয় বিনোদন), প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র, ২টি রক্তদান ও সংগ্রহ কেন্দ্র অংশ নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতবার বাণিজ্য মেলায় ১২টি দেশ অংশ নিলেও এবার ৪টি মহাদেশের (এশিয়া, উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ) বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ মেলায় অংশগ্রহণ করছে। মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও অংশগ্রহকারী দেশসমূহ হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং দক্ষিণ কোরিয়া এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করছে। মেলায় যথারীতি গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস, ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স, পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, ক্রীড়া সামগ্রী, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ঘড়ি, জুয়েলারি, সিরামিকস, টেবিলওয়্যার, দেশীয় বস্ত্র, কেবল, মেলামাইন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, আসবাবপত্র ও হস্তশিল্পসহ গৃহস্থালি পণ্যের প্রদর্শন ও বিক্রয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
×