ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিয়ানমারের প্রতি সাধারণ পরিষদের সর্বসম্মত প্রস্তাব

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মিয়ানমারের প্রতি এর রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের পূর্ণ নাগরিকত্ব এবং বিভিন্ন সেবা পাওয়ার সমান সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার ১৯৩ সদস্যের ঐ পরিষদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত বাধ্যতামূলক নয় এমন এক প্রস্তাবে এ আহ্বান জানানো হয়। এর এক মাস আগে এটি পরিষদের মানবাধিকার কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছিল। খবর হিন্দু ও বাহারনেট নিউজডেস্ক অনলাইনের। প্রস্তাব রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের দুরবস্থা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেখানে ২০১২ সালে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে সহিংসতা দেখা দেয়ার পর জরাজীর্ণ শিবিরগুলোতে ১ লাখ ৪০ হাজার লোক বাস করছে। মিয়ানমারের ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে জাতীয় আইনের অধীনে নাগরিকত্ব প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো হয় এবং তারা কার্যত রাষ্ট্রবিহীন। তাদের কোন অধিকার নেই বললেই চলে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সরকারীভাবে তাদের ‘বাঙালী’ বলে শ্রেণীভুক্ত করতে চায়। এদিয়ে বোঝানো হয় যে, তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আগত অবৈধ অভিবাসী। বস্তুত মিয়ানমার সরকারের অনেকেই এবং স্থানীয় বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের সেরা অভিবাসী হিসেবেই দেখে থাকে। কিন্তু রোহিঙ্গারা মত ব্যক্ত করে যে, তাদের পূর্ব পুরুষরা দেশটিতেই বসবাস করত। সরকার-সমর্থিত এক বিতর্কিত পরিকল্পনার আওতায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হলে নিজেদের অবশ্যই বাঙালী বলে পরিচয় দিতে হবে। যারা এতে অস্বীকার জানবে তাদের শিবিরগুলোতে বসবাস করতে বাধ্য করা হবে। রোহিঙ্গরা নিজেদের বাঙালী বলতে অপমান রোধ করে। ২০১১ সালে মিয়ানমারে একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু হলে নবপ্রতিষ্ঠিত বাক-স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে থাকে। বৌদ্ধ বিক্ষুব্ধ বৌদ্ধ জনতার সহিংসতায় ২৮০ জন নিহত হয় এবং নিহতদের বেশিরভাগই ছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিম। এ ঘটনায় আরও ১ লাখ ৪০ হাজার মুসলিম তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘ প্রস্তাবে রাখাইন রাজ্যের সব বাসিন্দার মানবাধিকার রক্ষা করতে এবং রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের পূর্ণ নাগরিকত্ব লাভের সময় সুযোগ, আত্মপরিচয়দানের অনুমতি এবং বিভিন্ন সেবা লাভের সমান অধিকার দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের প্রতি সরকারের আচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করা হয়। এটি ১৯৩-সদস্যের বিশ্ব সংস্থার এ জোরালো সতর্কবার্তা যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংখ্যালঘুদের প্রতি মিয়ানমারের আচরণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখতে ঐক্যবদ্ধ। সাধারণ পরিষদ মুসলিম সংখ্যালঘুদের নিজেদের রোহিঙ্গা বলতে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। ঐ প্রস্তাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সেবাগুলো পেতে রোহিঙ্গাদের জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে এবং তাদের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের মূল কারণ দূর করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। রোহিঙ্গদের নিরাপদে তাদের বাড়িঘরে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতকল্পে ব্যবস্থা গ্রহণ, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত অনুষ্ঠান এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রসার ঘটাতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের খসড়া করা প্রস্তাবটি নিয়ে ভোট গ্রহণ করতে মিয়ানমার অনুরোধ না করায় সেটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয়। যদি সে দেশকে লক্ষ্য করে কোন প্রস্তাব আনা হয়, সেই দেশ ভোটগ্রহণের অনুরোধ জানায় তাহলেই প্রস্তাবটি সম্পর্কে ভোট নেয়া হয়।
×