ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় কংগ্রেসের ১৩০ বছর

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

ভারতীয় কংগ্রেসের ১৩০ বছর

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিগুণ বয়সী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৩০ বছরে পদার্পণ করল। এই দীর্ঘপথ পরিক্রমায় এখন তার অবস্থা খুব উজ্জ্বলতর, তা নয়। ২০১৪ সালের ১৬ মে প্রকাশিত ভারতের নির্বাচনের ফলাফলে শাসক দল কংগ্রেস শুধু ক্ষমতাই হারায়নি, বিরোধী দলের মর্যাদাটুকু অর্জন করতেও ব্যর্থ হয়েছে। ‘চা বিক্রেতা’ নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রদায়িক দলের কাছে অসাম্প্রদায়িক দলটি বিপর্যস্ত হয়েছে বলা যায়। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগ পরবর্তী ৬৭ বছরে কংগ্রেস দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিল। সর্বশেষ টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও ভারতীয় ভোটাররা কংগ্রেসকে পরিত্যাগ করেছে কেন, তার এন্তার কার্যকারণ রয়েছে। পরাধীন ভারতবর্ষে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কংগ্রেস নামক বৃক্ষের যে চারাটি রোপিত হয়েছিল তা আজ প্রাচীন মহীরুহে পরিণত। গণতন্ত্রের ধ্যান-ধারণা এই দলকে যেমন উদারতার শিক্ষা দিয়েছে, তেমনই উন্মুক্ত আলো-বাতাসের অফুরান যোগানে বর্ধিত হয়েছিল দলের গ্রহণযোগ্যতা। কিন্তু তা ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ও বিকাশ কংগ্রেসকে ক্রমশ দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেবার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ যে ভারতের বিকাশ ঘটিয়েছিল কংগ্রেস তার এই দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায়, তা ক্রমেই দূরীভূত হয়ে পড়ছে। ‘কংগ্রেসই ভারত, ভারতই কংগ্রেস’- বলে যে আপ্তবাক্য শোনা যেত, তা একসময় ছিল ভারতবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য পথ। বহু ঘটনার সমন্বয়ে অথবা দ্বিজাত বৃহৎ প্রেক্ষাপটে বহু ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেও কংগ্রেস দেশবাসীর হৃদয়ে তার নিজস্ব আধিপত্য খুঁজে নিতে পেরেছিল। ব্রিটিশ ভারতের সিভিল সার্ভেন্ট স্যার এ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের মুখ্য উদ্যোগে তৈরি হওয়া ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নে সংগঠনের প্রথম সভাপতি বাঙালী উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সঙ্কীর্ণ প্রাদেশিক মানসিকতা দূর করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সাধনের পথে অগ্রসর হওয়া ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আজ এক শ’ ত্রিশ বছর পরেও দেখা যাচ্ছে, এই লক্ষ্যে পৌঁছানো কত জরুরী হয়ে পড়েছে। বোঝা যাচ্ছে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মতো একটি জাতীয় সংগঠনে প্রাণসঞ্চার করা। তাকে নতুন যুগের উপযোগী করে গড়ে তোলা কত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। নানাভাষা, নানাধর্ম, নানা প্রাদেশিক মনোবৃত্তির মধ্যে সেতু বাঁধতে প্রশাসন কখনই পারে না। বিশেষত সাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশের এই সময়ে। পারে জাতীয় কংগ্রেসের মতো একটি সর্বভারতীয় দল। উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে আজকের সোনিয়া গান্ধী পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া কংগ্রেস তার সর্বভারতীয় অবস্থানে দাঁড়িয়ে নেই। ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক, আঞ্চলিক দলগুলো ক্রমশ কংগ্রেসের ডালপালা ছেঁটে দিচ্ছে। কংগ্রেসও নতুন করে তার ডালপালা আর বিস্তার করতে পারছে না। প্রতিষ্ঠাকালে বলা হয়েছিল, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে যারা দেশের উন্নতির জন্য কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে পরিচয় ও সৌহার্দ্য স্থাপন করা। এই উপায়ে জাতি, ধর্ম ও প্রাদেশিক মনোবৃত্তির সঙ্কীর্ণতা দূর করে জাতীয় ঐক্যসাধন। দেশের শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে আলোচনার দ্বারা গুরুতর সামাজিক সমস্যার সমাধানের পথ নির্ধারণ করা এবং রাজনৈতিক উন্নতির জন্য পরবর্তী বছরটি কার্য প্রণালী অবলম্বন করা উচিত, সেটা স্থির করা। ১৮৮৫-এর ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইর গোকুলদাস তেজপাল সংস্কৃত কলেজের হলঘরে যে জাতীয় কংগ্রেসের সূত্রপাত, উনিশ শতক থেকে একুশ শতকে এসে তা নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। কিন্তু যত পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই যাক আসমুদ্রহিমাচল ভারতবাসীর মনে এই সংগঠনটিই একমাত্র জাতীয় সংগঠন হিসেবে এক শ’ বছরের বেশি সময় ধরে তার প্রভাব অক্ষুণœ রাখতে পেরেছে। ভারতবাসীর একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পেরেছিল বিশ শতকে। ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। ১৮৮৫-এর যে কংগ্রেস; সেটা ছিল অনেকদিন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ডিবেটিং সোসাইটি’, যার কাজ ছিল, সরকারের কাছে আবেদনপত্র পাঠানো। কিন্তু এ ভাবটা বেশিদিন বজায় রাখতে পারেনি কংগ্রেস। ‘জাতীয় ডিবেটিং সোসাইটি’র চরিত্র বদলে যেতে থাকে একুট একুট করে, জাতীয় কংগ্রেস যেমন যেমন নিজেকে প্রসারিত করতে পারল দেশের লোকের মনে। মডারেট নেতা বাঙালী সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসে ঢুকেই একটা ঝাঁকি লাগালেন। এমনিতেই কংগ্রেসের অধিবেশনে যথেষ্ট নরম সুরে কথা বলা হতো। এমনকি রাজভক্তির স্রোতও বইতো কারও কারও ভাষণে। কিন্তু আলোচনা যা হতো তাতে কংগ্রেসের উদ্দেশ্যবিশেষ লুকিয়ে রাখা যেত না। প্রথমদিকে দাবি ছিল ভারতের রাজনীতিতে ভারতীয়দের অংশগ্রহণ করতে দেয়া হোক। কিন্তু সাবধানী এবং রাজনীতিতে তুখোড় ব্রিটিশ রাজের চোখে ধুলো দেয়া শক্ত ছিল। ভারতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের পরেই, এক শ’ ত্রিশ বছর আগে, লন্ডন টাইমসে এই মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল, ‘কংগ্রেসের দাবি মেটানোর অর্থ ভারতকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে আমাদের দেশে ফিরে আসা। কিন্তু কয়েকজন বাক্যবাগীশের কথায় আমরা ভারত ছাড়ব না।’ ব্রিটিশরা দ্রুত অবধান করতে পেরেছিল। এটা তাদের রাজের পক্ষে বিপদের কারণ হয়ে উঠবে। তবু কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ৬২ বছরের মধ্যেই ব্রিটিশ শাসককে ভারতবর্ষ ছাড়তে হয়েছে এবং তার প্রধানতম হাতিয়ার ছিল কংগ্রেস। এর মধ্যে কংগ্রেসে নানামতের নেতৃত্ব এগিয়ে এসেছে, প্রাধান্য পেয়েছে, আবার মিলিয়ে গিয়েছে বিস্তৃতির অন্তরালে। লালালাজপতে রায়, বালগঙ্গাধর তিলক এবং বিপিনচন্দ্র পাল- চরমপন্থী রাজনীতিক ‘চেঞ্জার আর নো চেঞ্জারের’ দল স্বরাজপন্থী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এবং মতিলাল নেহরুর নেতৃত্ব পার হয়ে অবশেষে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে গান্ধীর আবির্ভাব। চরিত্রে পরিবর্তন এলো আবার কংগ্রেসের। গান্ধী কংগ্রেসকে শিক্ষিত ও অভিজাতদের হাত থেকে বের করে নিয়ে গেলেন দেশের নিম্নস্তরের জনগণের মধ্যে। কংগ্রেস শিকড় পেল সাধারণ মানুষের মনের জমিনে। সেই জোরেই ভারতীয় কংগ্রেস আজও ভারতে একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে। গান্ধীই করে তুললেন কংগ্রেসকে সংগ্রামের হাতিয়ার। জিন্নাহর চোখে গান্ধী ছিলেন একজন ঘোরবিপ্লবী। জিন্নাহর ‘মডারেট’ মন আইন অমান্য আন্দোলনের এতটা বিপ্লবীয়ানা বরদাশ্ত করতে পারেনি। তাই তিনি, কংগ্রেস গান্ধীর নেতৃত্বে চলে গেলে, তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন। স্বাধীন ভারতেও কংগ্রেসের বড় পরিবর্তন হয়েছে। সাংগঠনিক অনৈক্য মতান্তর কলহে বিদীর্ণ হয়েছে কংগ্রেস বিভিন্ন সময়ে। নৈতিক শিথিলতায় আচ্ছন্ন অতীত ও বর্তমানের বহু কংগ্রেসবর্গীয় নেতা জনসংযোগহীন। তবুও দেশমাতৃকার অভিষেকের প্রথম লগ্ন থেকেই বার বার কংগ্রেসকেই বেছে নিয়েছেন ভারতবাসী। পরাধীনতা থেকে মুক্তির লড়াইয়েও যেমন অগ্রণী ভূমিকায় দেখা গেছে কংগ্রেসকে, তেমনই সমাজ গঠনের দায়ভার থেকেও কংগ্রেস নিজস্ব দায়িত্ব এড়াতে পারে না। ছয় দশকের বেশি ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত। অগণিত রাজনৈতিক দল, মঞ্চ, মোর্চার জন্ম হওয়া, পরমুহূর্তে ভেঙ্গে যাওয়া অথবা বিভিন্ন শক্তির পুনর্বিন্যাস এই বহুজাতিক গণতন্ত্রকে প্রায় নৈমিত্তিক বিষয় হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কংগ্রেসের বিকল্প শক্তি সেভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। একদিকে ধর্মের জিগির তুলে যেসব শক্তি এ শতাব্দীর প্রাচীন দলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছে; ঘটনাচক্রে তারা আজ ক্ষমতায়। বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উগ্র প্রাদেশকিতা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভও করে তুলেছে বিভিন্ন সময়ে। গান্ধীর ভাবশিষ্য নেহরু একদিকে যেমন জাতীয়তাবাদী সংগ্রামকে অপেক্ষাকৃত পেছনের সারিতে রেখে অর্থনৈতিক বিপ্লবের দিকে ঝুঁকেছেন, তেমনই অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সুভাষ চন্দের বিদেশী শক্তিকে পর্যুদস্ত করার অভিপ্রায়; কমিউনিস্টদের গান্ধীকে লেনিনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার জিগির ছাপিয়ে গান্ধী স্থিতপ্রজ্ঞ অবস্থানে ছিলেন। তিনিই হয়ে ওঠেন জাতীয় সংহতির মূর্তপ্রতীক থেকে জাতির পিতা। গান্ধীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অবশ্য মুসলিম রাজনীতি আঞ্চলিক নেতৃত্বে নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। স্বাধীন ভারতে কংগ্রেসেরও বিভাজন হয়েছে। ১৯৬৬ সালে দু’টুকরো হলো দলটি। একদিকে পুরনো সব নেতা, অন্যদিকে ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরার আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়ে। সংগঠন হিসেবে তার জননির্ভরতার অবসান ঘটে। ইন্দিরার সময় থেকেই যিনি প্রশাসনের মাথা তিনিই কংগ্রেসের কর্ণধার। রাজীব গান্ধীর আমল পর্যন্ত সেই ব্যবস্থাই চালু ছিল। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনি তাঁর আমলে কংগ্রেসের কর্ণধার ছিলেন না। কংগ্রেস সংগঠন তাঁর গলগ্রহ হয়ে ওঠেনি। আপন শক্তিতে সে প্রধানমন্ত্রীকে মদদ যুগিয়ে গেছে। কিন্তু রাজীব গান্ধীর সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই কংগ্রেসের শক্তি যুগিয়ে যেতে হয়েছে। তবে নেহরু গান্ধীর পরিবারের যে জনআবেদন বা ইমেজ ছিল, তার সুবিধা ইন্দিরার পক্ষেই নেয়া সম্ভব ছিল। তাই তার দিকে সতত ছিল ভারি জনসমর্থনের পাল্লা। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা; আত্মমর্যাদাবোধ ও জিদের ফলেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পথ পেয়েছিল। দল কখনই ইন্দিরার কাছে গলগ্রহ হয়ে ওঠেনি। জরুরী অবস্থা জারি করার মাসুলও তাঁকে গুনতে হয়েছিল; নির্বাচনে পরাজয় বরণ করতে হয়। পর্যুদস্ত হয় তার দল। আবার দলের যাবতীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতেন ইন্দিরা। ফলে দীর্ঘদিন রাজ্যস্তরে কংগ্রেসের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে। গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ কংগ্রেসকে নিয়েই পরবর্তীকালে চলতে হয়েছিল রাজীবকে। সোনিয়া গন্ধীকে সেই অবস্থা থেকে কংগ্রেসকে টেনে বের করতে হয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে গান্ধী পদবি থাকার ফলে কংগ্রেস কার্যত এক সময় অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পেরেছিল। জওহরলাল, ইন্দিরা, রাজীব এঁরা প্রত্যেকেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ব্যালটের রায়ে, বুলেটের মাধ্যমে নয়। তাই বলা যায়, কংগ্রেস কোন পরিবারতন্ত্র চালু করেনি। এরা প্রত্যেকেই গণতন্ত্র সম্মত উপায়ে দেশ শাসন করেছেন। সোনিয়া যখন হাল ধরেন, তখন পরিবারতন্ত্রের তামাদি অভিযোগ মাথা চাড়া দিয়েছিল কংগ্রেসের অভ্যন্তরে। সঙ্গে ছিল আরও এক ইস্যুÑ বিদেশিনী সোনিয়া। কিন্তু যাবতীয় অভিযোগকে রীতিমতো চুপসে যেতে দিয়েছেন সোনিয়া নিজেই। প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দিয়েছেন। দলকে দু’দফায় ক্ষমতায় আনতে পেরেছেন। কিন্তু সরকারের মধ্যে সোনিয়া-রাহুলের অবস্থান ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ থাকায় খেসারত দিয়েছে কংগ্রেস। মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বকালে সিদ্ধান্তহীনতা, অপশাসন, দুর্নীতি, শরীক দলগুলোকে অবিশ্বাস দলকে ক্ষমতায় যেতে দেয়নি। মা-পুত্র জোটের মাধ্যমে মনমোহন সিং কতটা অসহায় ছিলেন, তা পদে পদে প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হবার পর কলকাতায় কাগজে লেখা হয়েছে ‘রাহুল গান্ধী কতটা অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয়তার দলের ও দেশের কাছে, তা আঙ্গুলে আঙ্গুলে প্রমাণিত। দরকার তাঁর দলকে বোঝা, যে দল এহেন রাহুল গান্ধী ছাড়া আর কোন নেতা অতীত-বর্তমানে খুঁজে পায়নি। ভবিষ্যতেও পাবে বলে মনে হচ্ছে না। চল্লিশোর্ধ রাহুল ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ সেøাগান দিয়ে সারা ভারত ঘুরেছেন কিন্তু দলটিকে গোছাতে পেরেছেন তা নয়। ১৩০ বছর বয়সী কংগ্রেস ভারতের রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাবে, কিংবা ক্ষমতা ফিরে আসার পথ রুদ্ধ হতে থাকবে ক্রমাগতÑ এমন ভাবনা হতেই পারে। নেতৃত্বের দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারায় ভারতকে ফিরে পেতে হলে কংগ্রেসের বিকল্প আর নেই। যেমন বিকল্প নেই একই কারণে। এই বাংলাদেশে কংগ্রেসের অর্ধেক বয়সী ৬৫ বছরের আওয়ামী লীগের। উভয় দলই তাদের দেশের স্বাধীনতা এনেছে, জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে এগিয়ে গেছে। সেক্যুলার দেশ গড়তে সচেষ্ট উভয়েই। তাই কংগ্রেস ও আওয়ামী লীগ অনিবার্যভাবে উপমহাদেশের জনগণের আশা-ভরশার স্থল। [email protected]
×