ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেলবোর্ন টেস্ট ॥ স্মিথের ব্যাটে এগোচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

মেলবোর্ন টেস্ট ॥ স্মিথের ব্যাটে এগোচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মেলবোর্নে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টের প্রথম দিন কাদের? উত্তরটা সহজ নয়! টস জিতে ব্যাটিং নেয়া অস্ট্রেলিয়ার স্কোরবোর্ডে কোন রান যোগ হওয়ার আগেই স্বাগতিকরা হারায় মারকাটারি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে। এরপর ক্রিস রজার্স ও শেন ওয়াটসনের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ১শ’ পেরোনো, দিন শেষে আবার ৯০ ওভারে ২৫৯ রানে নেই ৫ উইকেটÑ আপাতদৃষ্টে মনে হবে প্রথম দিন সফরকারী ভারতেরই। কিন্তু ৭২ রান নিয়ে যে ব্যাট করছেন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ, সম্প্রতি যিনি ফর্মের তুঙ্গে। ২৩ রানে সঙ্গী অভিজ্ঞ ব্র্যাড হ্যাডিন। সুতরাং ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণ বলে, স্মিথ অরপাজিত বলেই দিনটি ভারতের নয়! চার টেস্টের লড়াইয়ে ২-০তে পিছিয়ে থাকায় সিরিজ বাঁচাতে মেলবোর্নে জয়ের বিকল্প নেই ক্রিকেট মোড়লদের। ‘বক্সিং ডে’ তে শুরু হওয়ায় মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে উপস্থিত সত্তর হাজার দর্শক। স্বাগতিকদের এমন উৎসবের আবহে অতিথি ভারতলীয়দের শুরুটা ছিল দারুণ। পেসার উমেশ যাদবের বলে দ্বিতীয় ওভারেই সিøপে শিখর ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ডেভিড ওয়ার্নার। মারকাটারি ওপেনারকে ফিরিয়ে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দেয় সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে নামা মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। এরপর রজার্স-ওয়াটসনের দ্বিতীয় উইকেটে ১১৫ রানের চমৎকার জুটিতে সে ধাক্কা সামাল দেয় স্বাগতিক শিবির। কিন্তু লাঞ্চের পর পর আরেকটা বড় ধাক্কা খায় অসিরা। ১১৫/১ থেকে সহসা ১১৫/৩Ñ এ পরিণত হয় অস্ট্রেলিয়া। শন মার্শকে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬৯ রান তুলে এবার সামাল দেন অধিনায়ক স্মিথ। প্রথম সেশনে ১ উইকেটে ৯২ রান তোলা অসিরা দ্বিতীয় সেশনে ২ উইকেটে ৮২ ও শেষ সেশনে আরও ২ উইকেট হারিয়ে ৮৫। মেলবোর্ন ওয়াটসনের প্রিয় মাঠ, এখানে তার গড় চমৎকার। সেটি অব্যাহত থাকে কাল। দিনের শুরুতে যে ধাওয়ান দুর্দান্ত ডাইভে আলোচনায় আসেন, তারই বদান্যতায় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন অসি তারকা অলরাউন্ডার! লাঞ্চের ঠিক আগে ওয়াটসনের সহজ ক্যাচ ছাড়েন ধাওয়ান, যখন ৩৭ রান নিয়ে খেলছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের ২৩ নম্বর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিলেও অবশ্য খুব বেশিদূর যেতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৫২ রানে স্পিনার রবিচন্দ্রন আশ্বিনের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হন ওয়াটসন। ৮৯ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি চারের মার। তার আগেই অবশ্য ১২৬ বলে ৫৭ রানে ওপেনার রজার্সের ধৈযশীল ইনিংসটির সমাপ্ত ঘটে উইকেটের পেছনে ধোনির হাতে ক্যাচ দিয়ে। তাকে তুলে নেন মোহাম্মদ শামি। মেলবোর্নে নিজের শেষ তিন ইনিংসেই পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস খেললেন ‘ইংলিশ কাউন্টির অস্ট্রেলিয়ান আবিস্কা’ রজার্স। দিনের বাকি গল্পটা কেবলই স্মিথের। কে বলবে বয়স ২৫ বছর, তরুণ কাঁধে বইছেন অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের ভার? ধীরস্থির-নিখুঁত এক ইনিংস খেলে ভারতের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা তুখোর প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যান। অপরাজিত আছেন ৭২ রান নিয়ে। চলতি বছর খেলা ৯ টেস্টেই অবিশ্বাস্য রকমের ধারাবাহিক পিচ্চি স্মিথের ব্যাট। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে হ্যাডিনের সঙ্গে ৪৩ রান তুলে অবিচ্ছিন্ন তিনি। ১৫৮ বলে ক্যারিয়ারের দশম হাফ সেঞ্চুরিরর ইনিংসটি সাজান ৪টি চার ও ১টি ছক্কা দিয়ে। ৬৫তম ওভারে ভারতীয় পেসার শামির সঙ্গে স্মিথের হালকা বাক্য বিনিময় হলেও বক্সিং ডে’র প্রথম দিনে দুই দলের মধ্যে উস্কে যাওয়ার মতো কোন ঝামেলা হয়নি! আগের দুই টেস্টের তুলানায় মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার রান তোলার গতি ছিল যথেষ্টই শ্লথ। পুরো ৯০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৫৯Ñ গড় ২.৮৭, কখনই তা ৩ ছাড়িয়ে যায়নি। স্মিথকে তুলে নিতে পারলে কোণঠাসা ম্যাচের প্রথম দিনটা হয়ত ভারতীয়দের পক্ষেই লেখা হতো। আজ সকালের শুরুতেই ফের বড় ধাক্কা দিতে না পারলে উল্টো চাপে পড়ে যাবে ধোনির দল! সেই শঙ্কা যথেষ্টই থাকছে। ব্রিসবেনের দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অধিনায়কত্বের অভিষেকেই ম্যাচসেরা হন ফর্মের তুঙ্গে থাকা স্মিথ। এ নিয়ে বছরে নয় টেস্টের আটটিতেই কম পক্ষে হাফ সেঞ্চুরি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। ধীরস্থির অভিজ্ঞ হ্যাডিনও নিশ্চই কম যাবেন না। টেলএন্ডে মিচেল জনসন তো এখন পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার! ভারতের হয়ে ২ করে উইকেট নেন পেসার উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ শামি। ১ শিকার স্পিনার অশ্বিনের। অবশ্য মিশ্র দিনে উইকেটের পেছনে ২৫০ ক্যাচের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন অতিথি অধিনায়ক। ৯০ টেস্টে ২৫১ ক্যাচ নেয়া ধোনির ডিসমিসাল ২৮৮টি। সর্বোপরি ইতিহাসের পঞ্চম স্থানে তিনি। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ২৫৯/৫ (৯০ ওভার; স্মিথ ৭২*, রজার্স ৫৭, ওয়াটসন ৫২, শন মার্শ ৩২, হ্যাডিন ২৩*; শামি ২/৫৫, যাদব ২/৬৯, অশ্বিন ১/৬০) ** প্রথম দিন শেষে
×