ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাবনা ও সান্তাহারে কয়লা সঙ্কট

জ্বলছে না ভাঁটি, পড়ে আছে ইট

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

জ্বলছে না ভাঁটি, পড়ে আছে ইট

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ২৫ ডিসেম্বর ॥ কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় পাবনায় ৮৬ ইটভাঁটি কয়লা সঙ্কটে বন্ধ হওয়ার পথে। ইতোমধ্যে কয়লার অভাবে ৫০ ইটভাঁটি বন্ধ হয়ে গেছে। চাহিদা মতো কয়লা আমদানি করতে না পারলে যে কোন সময় এসব ভাঁটি বন্ধ হয়ে যাবে। এর মধ্যে বেশ কিছু ভাঁটি অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে ইট পোড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে পাবনায় জ্বালানি কাঠের ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভাঁটি মালিক, শ্রমিকসহ পাবনার অবকাঠামো উন্নয়ন মুখ থুবরে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে শত শত কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছে ভাঁটির মালিকরা। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় ৫ মাস ধরে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় জেলার ইটভাঁটিতে ইট তৈরি করে মজুদ করে রাখা হয়েছে। কয়লার অভাবে পোড়াতে পারছে না এসব ইট। জেলায় বর্তমানে ভাঁটির সংখ্যা রয়েছে ৮৬টি। এর মধ্যে জিগজাগ ভাঁটি রয়েছে ৩২টি। এভাঁটি কয়লা ছাড়া চলে না। বাকি ৫৬টি কয়লা ছাড়াও চালানো যায়। এসব ভাঁটিতে দেদার পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে পাবনাজুড়ে ব্যাপক জ্বালানি কাঠের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এসব ভাঁটিগুলো গত বছর পরিবেশ অধিদফতর কাঠ পোড়ানোর দায়ে বন্ধ করে দিয়েছিল। এদের মধ্যে ২৭টি হাইকোর্টে রিট করে ভাঁটি চালানোর অনুমতি পেয়েছে। বাকিগুলো নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেদার কাঠ খড়ি পোড়াচ্ছে। পাবনা জেলা ইট প্রস্তুতকারী সমিতির সভাপতি আলহাজ আবুল কাশেম জানিয়েছেন, তার তিনটি ভাঁটি ছিল। গত বছর থেকে লোকসান হওয়াতে দুটি ভাঁটি ইতোমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে একটি ভাঁটি চলছে। কয়লার আমদানি স্বাভাবিক না হলে যে কোন সময় এটিও বন্ধ করে দিতে হবে। নিজস্ব সংবাদদাতা সান্তাহার থেকে জানান, মৌসুমের এক মাস পেরিয়ে গেলেও বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় কয়লার অভাবে ইটভাঁটিতে এখন পর্যন্ত আগুন দিতে পারছে না মালিকরা। বেকার হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে হাজারো শ্রমিক। জানা গেছে, সময়মতো ভাঁটিতে আগুন দিতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়ছে ভাটার মালিকরা। ইট পোড়াতে না পারার কারণে পুরনো ইটের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। এদিকে ভাঁটিতে আগুন দিতে না পারায় লাখ লাখ তৈরি ইট স্তূপ হয়ে পড়ে আছে। বৃষ্টি হলে লাখ লাখ ইট নষ্ট হয়ে যাবার আশঙ্কা করছে ভাঁটি মালিকরা। এ ব্যাপারে মোতালেব হোসেন ও দস্তগীর হোসেনসহ ভাঁটি মালিকরা জানান, প্রতিবছর কার্ত্তিকের শেষ সপ্তাহ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ভাঁটিতে আগুন দিয়ে ইট পুড়ে তা বাজারে বিক্রি করা হতো। কিন্তু চলতি বছরে কয়লা না থাকার কারণে ভাঁটিতে আগুন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কয়লা যেটুকু মিলছে তা দ্বিগুণেরও বেশি দামে কিনে আশপাশের মালিকরা ইট পোড়ালেও দাম পড়ছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ হাজার টাকা বেশি। বিক্রিও হচ্ছে বেশি দামে। ফলে ভাঁটি মালিক, শ্রমিক ছাড়াও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষসহ সরকারী কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হাতিয়ায় জনবসতিতে ইটভাঁটি সংবাদদাতা, হাতিয়া, নোয়াখালী থেকে জানান, জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠেছে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন জনপদ দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার অনেক ইটভাঁটি। সবগুলো ইটভাঁটিতে কয়লার পরিবর্তে কাঁচা কাঠ পুড়ে ইট তৈরি করার ফলে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। জানা যায়, প্রায় ২৫শ’ বর্গমাইলের হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৯টি ব্রিকফিল্ড রয়েছে। সব ব্রিকফিল্ডে বিভিন্ন ধরনের কাঁচা গাছ পোড়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন গাছ পোড়ানোর ফলে বিরাণ হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির গাছ। একদিকে মেঘনার করাল গ্রাসে গ্রামকে গ্রাম নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে সীমিত হয়ে আসছে গাছ। ইটভাঁটিতে যে হারে গাছ পোড়ানো হচ্ছে আগামী এক দশকে হাতিয়ায় গাছের সংখ্যা কমে ৫ ভাগেরও নিচে নেমে যেতে পারে। এসব ফিল্ডে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে খেজুর গাছ, তাল গাছ, রেইনট্রি, কড়ইসহ সরকারী নানা প্রজাতির গাছ। সরেজমিন, হাতিয়া উপজেলার সবগুলো ইটভাঁটিতে শুধু বিভিন্ন জাতের কাঁচা গাছ পোড়ানোর মহাপ্রস্তুতি চলছে। কোন কোন ভাঁটিতে পোড়ানো হচ্ছে ইট। সব দিকে ট্রলি বোঝাই করে চলছে গাছের গুঁড়ি পরিবহনের ধুমধাম। ইটভাঁটিগুলোর পরিবেশ অধিদফতরের কোন ছাড়পত্র নেই। চিমনিগুলো ছোট এবং গড়ে উচ্চতা ২০ ফুটের মধ্যে। ফসলি ভূমি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে বেশিরভাগ ইটভাঁটি গড়ে উঠেছে। উপজেলার ১৯টি ইটভাঁটিতে রয়েছে ২ শতাদিক শিশু শ্রমিক যাদের বয়স ১২ বছরের নিচে। জাহাজমরার ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন ইটভাঁটিটি স্থানীয় বনবিভাগের সবুজ বেষ্টনীর (কেওড়া বাগান) পাশে অবস্থিত।
×