ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বছরের শুরুতেই চার কোটি ৫২ লাখ শিক্ষার্থী পাবে নতুন বই

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

বছরের শুরুতেই চার কোটি ৫২ লাখ শিক্ষার্থী পাবে নতুন বই

বিভাষ বাড়ৈ ॥ আর মাত্র ছয় দিন। দেশব্যাপী পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর জন্য ৩৩ কোটি পাঠ্যবইও প্রায় প্রস্তুত। ইতোমধ্যেই উপজেলা ও স্কুল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে মোট বইয়ের ৯৫ ভাগ। মাধ্যমিক ও দাখিল স্তরের ৯৮ ভাগ বই চলে গেছে উপজেলা ও স্কুলে। প্রাথমিক স্তরের বই পৌঁছেছে ৯০ ভাগ। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে যাবে বাকি বই। নতুন বছরের শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রতিটি শিক্ষার্থী বিনামূল্যের বই পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আশ্বস্ত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের প্রায় এক কোটি বই ও শিক্ষা উপকরণ পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাক-প্রাথমিক স্তরের বই ও শিক্ষা উপকরণের কোন কপিই এখন পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারেনি কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। আগামী এক জানুয়ারি দেশব্যাপী পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস পালন করা হবে। এ লক্ষ্যে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে এই উৎসবের আমেজ। এই সময়ে প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উৎসবের মধ্য দিয়ে চার কোটি ৫২ লাখ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে নতুন ঝকঝকে পাঠ্যবই। এর আগে আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। ১ জানুয়ারি মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বই উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এই কার্যক্রম শুরু করবেন। জানা গেছে, গেল বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ভালভাবে বই বিতরণ নিশ্চিত করতে ছাপা হয়েছে চাহিদার তুলনায় অন্তত ৫ শতাংশ বেশি বই। অতিরিক্ত এই বই বাফার স্টক হিসাবে (কোথাও জরুরী প্রয়োজনের জন্য) থাকবে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাসেম মিঞা বই বিতরণের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য বই একটু বেশি হলেও এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। বই ছাপা ও সরবরাহের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। বছরের প্রথমদিনই দেশের সব ছাত্রছাত্রী নতুন চকচকে বই পাবে বিনামূল্যে। এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে বই বিতরণ করা হবে। এ উৎসব চলবে নতুন বছরের শুরু থেকে সপ্তাহব্যাপী। উৎসব সফল করার লক্ষ্যে অধিকাংশ বই চলে গেছে উপজেলা ও বিদ্যালয় পর্যায়ে। বাকি বইয়ের জন্য আমাদের আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। কারণ ইতোমধ্যেই অধিকাংশ বই ছাপার কাজও শেষ। দেশের স্বার্থে সরকারের এই পরিকল্পনা সফল করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান। এদিকে কারিকুলাম আধুনিকায়ন ও সংস্কারের কারণে গত বছর যেসব বইয়ে বাক্য গঠন ও বানান, তথ্য-বিভ্রাট ছিল এবার সেসব বই সংশোধন করে ছাপা হয়েছে। এ বিষয়ে এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার জানান, প্রাথমিকের ১১টি এবং মাধ্যমিক স্তরের ৬৭টি বইয়ের পা-ুলিপি সংশোধন করে বই ছাপা হয়েছে। জানা গেছে, ২০১২ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরে যুক্ত হয় আইসিটি শিক্ষা ও গ্লোবাল স্টাডিস এ্যান্ড বাংলাদেশ। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে বাধ্যতামূলক করা হয় এ দুটি বিষয়। পাশাপাশি তিনটি শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে আমূল পরিবর্তন আনা হয়। সময়ের চাহিদা, বিশ্ব বাস্তবতা, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ এবং মাতৃভূমি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের যথাযথ জ্ঞান লাভের সুবিধার্থে প্রণয়ন করা হয় নতুন পাঠ্যসূচী। সব মিলে মাধ্যমিক স্তরের তিনটি শ্রেণীতে মোট যোগ হয় ৬টি বিষয় (সাবজেক্ট)। ব্যাপক সংস্কারের কারণে এসব বইয়ে কিছু ত্রুটিও ছিল। এনসিটিবি জানিয়েছে, ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে মোট চার কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ জন ছাত্রছাত্রী ধরে নিয়ে বই ছাপাচ্ছে সরকার। তাদের প্রয়োজনীয় বই ধরে নিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৩২ কোটি ৫৮ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭৪ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ করা হচ্ছে। আছে আরও প্রাক-প্রাথমিকের বই ও শিক্ষা উপকরণ। এর মধ্যে ইতোমধ্যে ২৭ কোটি কপি বই উপজেলার স্কুল ও উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ কাজ সম্পন্ন করেছে মুদ্রাকররা। ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের মোট বইয়ের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের এক কোটি ২০ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮ কপি, প্রাথমিক স্তরের ১১ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৪ কপি, ইবতেদায়ীর এক কোটি ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার ৪২০ কপি, দাখিল ও দাখিল ভোকেশনালের তিন কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ৯৩৫ কপি, মাধ্যমিকের ১৪ কোটি ৮৫ লাখ ৫৫ হাজার ২৬২ কপি এবং এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের ২১ লাখ ১২ হাজার ১৫৫ কপি বই। বই মুদ্রণ ও সরবরাহ কার্যক্রমের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোশতাক আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, দেশের সব উপজেলায় বই সরবরাহ হয়েছে। যেসব উপজেলায় বই সরবরাহ কিছুটা কম হয়েছে, সেগুলোতেও নিয়মিত বই যাচ্ছে। এ কারণে সময় লাগবে না। বই মুদ্রণ ও বাঁধাই কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটরিং চলছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য বছরের মতো আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এবারও ৫ শতাংশ বই অতিরিক্ত ছাপা হচ্ছে।
×