ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও জনজীবন

গাইবান্ধায় কৃষিতে ॥ রাসায়নিক প্রয়োগ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

গাইবান্ধায় কৃষিতে ॥ রাসায়নিক প্রয়োগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৪ ডিসেম্বর ॥ পরিবেশবান্ধব কীটনাশকমুক্ত (সেভ এগ্রিকালচার) কৃষি ব্যবস্থাপনা চালুর লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্যোগ অব্যাহত থাকলেও গাইবান্ধায় কৃষিতে সেক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। উপরন্তু জমিতে এবং উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণে বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। ফলে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও জনজীবন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ইরি-বোরো মৌসুমে কীটনাশকমুক্ত পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার বালাই দমন ব্যবস্থাপনার আওতায় ধানচাষের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সম্প্রতি ইরি-বোরো ধানের জমিতে শক্তিশালী আরগানো ফসফরাস গ্রুপের কীটনাশকসহ বিষাক্ত এবং শক্তিশালী কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া কলা, আম, পেঁপে, টমেটো এমনকি বেলসহ অন্যান্য ফল পাকানো ও সংরক্ষণে ব্রোমাইড, ইথাইলিন, ইথরেনসহ বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে বেগুন চাষে শতকরা ১শ’ ভাগ উচ্চশক্তির কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া আলু, টমেটো ক্ষেতে ৪ থেকে ৫ বার প্রয়োগ করা হচ্ছে বিষাক্ত ছত্রাকনাশক রাসায়নিক দ্রব্য। তেমনি পাটক্ষেতে বিছাপোকা নিধনে ব্যবহার করা হচ্ছে ডাস্টবার্ন ও ক্যারাটে নামীয় বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে জানা গেছে, সবজি, কলা, টমেটো, কফি, লেটুস পাতা, পেঁপেসহ নানান ফল ও সবজিতে কীটনাশক এবং রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করার পর কমপক্ষে ৮ থেকে ১৫ দিন পর তা বাজারজাত করা উচিত। কিন্তু এ জেলার কৃষকরা সে নিয়ম মানছে না। বরং বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগের ১ থেকে ২ দিনের মধ্যেই তা বাজারজাত করা হয়ে থাকে। যা জনস্বাস্থ্যে জন্য অসম্ভব ক্ষতিকর। ফসলের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ পরিবেশবান্ধব কীটপতঙ্গ থাকে। যারা ফসলের জন্য ক্ষতিকর শত্রু কীট পতঙ্গকে ধ্বংস করে। কিন্তু ব্যাপক কীটনাশক প্রয়োগ করার ফলে পরিবেশবান্ধব এ সব কীটপতঙ্গও সমূলে বিনষ্ট হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কীটনাশকমুক্ত নিরাপদ কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গাইবান্ধায় পারচিং পদ্ধতি, আলোর ফাঁদ, প্রয়োগসহ নানা পদ্ধতিতে ফসলের রোগ বালাই দমনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ফসলের ক্ষেতে পাখি বসার মতো কঞ্চে, পাট খড়ি, বাঁশের বাতি পুঁতে পারচিং নামের পদ্ধতিতে পাখির মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে কীটপতঙ্গ নিধন ইতোমধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেননা সেভ এগ্রিকালচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং ফলসহ কৃষি পণ্য সংরক্ষণে বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক ক্রয় অবিলম্বে বন্ধ না হলে পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে। এছাড়া নানা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বিপন্ন হয়ে পড়বে জনজীবন। ভেজাল বীজ সারে বাজার সয়লাব স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, শস্যভা-ার হিসেবে খ্যাত উত্তরের রংপুর ও দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলের কৃষকদের পুঁজি করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী প্রতারক চক্র মাঠে নেমেছে। বিভিন্ন রং বেরঙের আকর্ষণীয় প্যাকেট বানিয়ে এবং গণচীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি লিখে আসন্ন ইরি-বোরো মৌসুমে ভেজাল-বীজ ও সার এবং কীটনাশকে বাজারজাত করায় ছেয়ে গেছে উত্তরের নীলফামারীসহ আট জেলার হাটবাজারগুলো। আর কৃষকদের পদে পদে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ফলে কৃষকরা হয়ে পড়ছেন দিশেহারা। এসব ভেজাল অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধে কৃষি বিভাগের নেই কোন জোরালো পদক্ষেপ। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে জরিমানা দিয়ে এসব ভেজাল বীজ ও সার কীটনাশক ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে শস্যভা-ার এই দুই কৃষি অঞ্চলকে সামনে রেখে নীলফামারীর সৈয়দপুরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভেজাল বীজ ও সার এবং কীটনাশক তৈরির আন্ডারগ্রাউন্ড কারখানা। প্রকাশ্যে এসব পাইকারি ও খুচরাভাবে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে এসব। কৃষকরা বলছেন অভিযোগ করতে গেলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি আমলে নেন না। ফলে তারা (কৃষক) প্রতারিত হচ্ছে। কৃষকরা জানান, সেচনির্ভর ইরি-বোরো মৌসুমে ব্যাপক পরিমাণে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের সুযোগে নিম্নমানের টিএসপি (ফসফেট), এমওপি (পটাশ), দস্তা, ম্যাগনেশিয়াম, সালফার, দানাদার এডিসি বোরন সার। বালাইনাশক ভিরতাকো, ডাসবান, কন্টাফ, কাটাফ, ফুরাডান, একতারা, সফসিন-মিফসিন, ভাটিমেক, ভলিউওম ফ্লাস্কি, সভিক্রম, থিয়োভিট কমুলাস, ফলিকুরসহ বিভিন্ন নামী-দামী পণ্য মোড়ক পরিবর্তন ও বিভিন্ন রং-বেরঙের আকর্ষণীয় মোড়কে প্যাকিং করে অসাধু সার কীটনাশকরা সাধারণ কৃষকের হাতে তুলে দিয়ে ব্যবহারে বাধ্য করাচ্ছে।
×