ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসনে ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনুন

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

আবাসনে ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনুন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ১৫ বছর আগে ঝিলমিল ও উত্তরা প্রকল্পে প্লটের পাশাপাশি ফ্ল্যাটের পরিকল্পনা করা হলেও আজ পর্যন্ত কোন এ্যাপার্টমেন্টের কাজই হয়নি। রাজউকের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ফ্ল্যাটের ব্যবসায় রাজউকের আগ্রহ নেই। রাজউক নিজেদের রাজকীয় সংস্থা মনে করে। তারা প্লটের ব্যবসাকে মনে করে জমিদারী ব্যবসা। তাই সরকারীভাবে রাজউকসহ অন্যান্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্লটের ব্যবসা করা হবে না। এখন থেকে সব এ্যাপার্টমেন্টের প্রকল্প নেয়া হবে। এজন্য অবশ্যই সরকারী প্রণোদনা দিতে হবে। একই সঙ্গে আবাসন খাতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার আহ্বান জানান মন্ত্রী। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) আয়োজনে শীতকালীন আবাসন মেলা-২০১৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, বেসরকারী আবাসন খাতে এখন আর আগের জৌলুস নেই। অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। এই খাতে অবশ্যই সরকারী প্রণোদনা দেয়ার জন্য আমি সরকারকে আহ্বান জানাব। প্রণোদনা না দিলে এই খাত গতিশীল হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আবাসন খাতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর দাবি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে সরকারীভাবে আবাসন খাতে সহায়তা দেয়া হয়। কোন দেশেই ব্যাংক ঋণে সুদের হার ৩ থেকে ৪ শতাংশের উপরে নয়। কিন্তু আমাদের দেশে সুদের হার অত্যন্ত বেশি। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দাবি জানাব এই বিষয়টিতে যেন নজর দেয়া হয়। মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন থেকে সরকারীভাবে রাজউকসহ অন্যান্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্লটের প্রকল্প করা হবে না, এ্যাপার্টমেন্টের প্রকল্প নেয়া হবে। ১৫ বছর আগে আমি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম। তখন আমি ঝিলমিল ও উত্তরা প্রকল্পে প্লটের পাশাপাশি ফ্ল্যাটের পরিকল্পনাও করেছিলাম। কিন্তু ১৫ বছর পর এই মন্ত্রণালয়ে এসে দেখি কোন এ্যাপার্টমেন্টের কাজ হয়নি। রাজউক নিজেদের রাজকীয় সংস্থা মনে করে। তাই তারা প্লটের ব্যবসাকে মনে করে জমিদারী ব্যবসা। ফ্ল্যাট ব্যবসায় তাদের আগ্রহ নেই। রাজধানীর বিস্তর অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) সমালোচনা করে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ড্যাপের কলম এমনভাবে চলছে, যেখানে জমি পাচ্ছে সেটাকেই বন্যাপ্রবণ অঞ্চল বলছে। সবই যদি বন্যাপ্রবণ হয় তাহলে মানুষ বাস করবে কোথায়। যদি কোন আবাসন প্রকল্পে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা থাকে তাহলে তো কোন সমস্যা নেই। খুলনার বয়রা ও রাজধানীর মিরপুরে বস্তিবাসীর জন্য স্বল্পমূল্যে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হবে তথ্য জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি খুলনার বয়রা ও ঢাকার মিরপুরে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বস্তির নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের ব্যবস্থা করছি। এখানে একটি পরিবার প্রতিদিন ২৭৫ টাকা কিস্তির মাধ্যমে ২০ বছর মেয়াদে সাড়ে চারশ’ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারবে। মন্ত্রী জানান, সরকার এরই মধ্যে এক লাখ ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে উত্তরায় ১৮ হাজার, ঝিলমিল প্রকল্পে ৫০ থেকে ৬০ হাজার ও পূর্বাচলে প্রায় আট হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। মন্ত্রী আরও জানান, নগরীর মিরপুরে ১৮৭ একর জমির ওপরে ৪০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। আমরা এমন একটা আইন করতে চাই যেখানে কেউ ফ্ল্যাট কিনলে যাতে পরবর্তী পর্যায়ে কোন জবাবদিহিতা না করতে হয়। বিশ্বের উন্নত দেশেও ফ্ল্যাট ক্রেতার জবাব দিতে হয় না যে, ফ্ল্যাট কেনার টাকা কিভাবে এসেছে। মন্ত্রী বলেন, আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী আমার মন্ত্রণালয়ে আসবেন। আমি মন্ত্রী হতে পারি কিন্তু আমিও রিহ্যাবের সদস্য। আমি আপনাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব দাবি-দাওয়া পেশ করব। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব আবাসন খাতের জন্য স্থগিত হওয়া ১৯ বিবিবি আইন যেন আবার চালু করা হয়। যেন কোন গ্রাহক ফ্ল্যাট কিনলে কেউ তার টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞেস না করে। আগামীতে সব এ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে ডেভেলপারদের জন্য তাদের প্রকল্পে এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কারণ ঢাকার খাল ও নদ-নদীগুলোর নষ্ট হচ্ছে স্যুয়ারেজ লাইনের বর্জ্যরে জন্য। একই সঙ্গে এ্যাপার্টমেন্টগুলোতে কিছুটা সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা গেলে বিদ্যুতের চাহিদার ওপর চাপ কম পড়বে। অনুষ্ঠান শেষে ফিতা কেটে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব মেলার উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ৫ দিনব্যাপী এ মেলা শেষ হবে ২৮ ডিসেম্বর। তবে, সমাপনী অনুষ্ঠান হবে ৩০ ডিসেম্বর। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলা চলবে। এবারের মেলায় থাকছে মোট ১৫০ স্টল। এদের মধ্যে ১১৩টি আবাসন প্রতিষ্ঠান আরও ২২ ভবন নির্মাণ সামগ্রী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া কো-স্পন্সর হিসেবে ১৩ প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশ নেবে। মেলায় প্রবেশ টিকেটের মূল্য ধরা হয়েছে (একক) ৫০ টাকা ও (একাধিক ব্যক্তি) ১০০ টাকা।
×