ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাজীপুরে খালেদার সমাবেশ নিয়ে টান টান উত্তেজনা

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

গাজীপুরে খালেদার সমাবেশ নিয়ে টান টান উত্তেজনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাজীপুর, ২৪ ডিসেম্বর ॥ আগামী ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) গাজীপুরে একইস্থানে ছাত্রলীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ আহ্বান ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জেলার সর্বত্র এখন টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। উভয়পক্ষের কর্মীরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে স্ব স্ব কর্মসূচী যে কোন মূল্যে সফল করতে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছে। নিজেদের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে উভয় পক্ষই এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। যে কোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে নগরবাসী। বিএনপি ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজ মাঠে যে কোন মূল্যে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে। অপরদিকে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগও জনসভা প্রতিহত করার ঘোষণায় অনড় রয়েছে। তারাও যে কোন মূল্যে খালেদা জিয়ার গাজীপুরে আগমন প্রতিহত করবে বলে প্রচার চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে আগামী ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) আয়োজিত ২০ দলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনে জনসমর্থন আদায়ে দেশব্যাপী গণসংযোগের অংশ হিসেবে গাজীপুরে এ জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তারেক জিয়ার কটূক্তির প্রতিবাদে ইতোমধ্যে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার আগমন ও জনসভা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে একই দিন একই স্থানে সমাবেশ আহ্বান করেছে গাজীপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। অপরদিকে খালেদা জিয়ার জনসভায় বাধা দেয়া হলে ওই দিনই সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচী ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা ২০ দলীয় জোট। ইতোমধ্যে (গত রবিবার) গাজীপুর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার আগমন ও ২০ দলীয় জোটের জনসভা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে গাজীপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়া কটূক্তির জন্য ক্ষমা না চাইলে কিংবা দল থেকে তাকে বহিষ্কার না করলে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার ওই জনসভা প্রতিহতের ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ একই দিন (শনিবার) একই মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন ও আল্টিমেটাম ঘোষণা করেছে ওই সংবাদ সম্মেলনে। তাদের এ কর্মসূচী সফল করতে ইতোমধ্যে তারা গণসংযোগ, মিছিল, সমাবেশ ও প্রচারণা করছে। খালেদা জিয়ার সমাবেশ বন্ধের দাবিতে বুধবার ছাত্রলীগ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এবং ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশ করে। এ সময় খালেদা জিয়ার সমাবেশকে সফল করতে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে ভাওয়াল কলেজের মাঠের পাশে টানানো বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতার্কীদের ব্যানার ও ফ্যাস্টুন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। তারা এ সময় গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। মাঠের যে প্রান্তে খালেদা জিয়ার জনসভার মঞ্চটি স্থাপন করার কথা ছিল ঠিক সেই স্থানটি মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দখল করে সেখানে কাপড়ের সামিয়ানার সামনে বড় ব্যানার সাঁটিয়ে দিয়েছে। ভাওয়াল কলেজ মাঠটি কার্যত ছাত্রলীগ দখল করে রেখেছে। এ নিয়ে জেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে ছাত্রলীগের কর্মকা-ের প্রতিবাদে ও ২০ দলীয় জোটের জনসভাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার দুপুরে গাজীপুর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আসম হান্নান শাহ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিটি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল। উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি মীর হালীমুজ্জামান ননী, বিএনপি নেতা ডাঃ মাজহারুল আলম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহেন শাহ আলম প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে হান্নান শাহ বলেন, গাজীপুরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যগতভাবে শিষ্টাচারের রাজনীতি করে আসছে। এখন যদি বাচ্চারা ভুল করে মুরব্বিদের উচিত তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। না হয় প্রশাসনকে এর দায়ভার নিতে হবে। পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে শপথ নিয়ে যদি একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন তাহলে আইনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জানি সরকারের যা সিদ্ধান্ত পুলিশ সুপার তাই করবেন, ১৪৪ ধারাও জারি করতে পারেন। বিএনপিও আইন জানে। পুলিশকে বলব, যদি সমাবেশ করতে না দেন তাহলে কারণ দেখিয়ে আমাদের লিখিত দেন। এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা সব রকম চেষ্টা চালাব। জনসভা নিয়ে দু’পক্ষের সমঝোতা হলে যে কোন বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব হবে। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, জনসভাকে নিয়ে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি হয়ে আইনগতভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। গাজীপুরে খালেদা জিয়ার জনসভাকে ঘিরে দু’পক্ষের উত্তেজনা ও কঠোর অবস্থানের ব্যাপারে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। কাউকে অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দেয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ওই পুলিশ সুপার বলেন, গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভা করতে দেয়া হবে না এমন বক্তব্য আমি কোথাও বলিনি।
×