ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পার্বতীপুরে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে কিচক রাজার গড়

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

পার্বতীপুরে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে কিচক রাজার গড়

শ.আ.ম হায়দার, পার্বতীপুর থেকে ॥ পার্বতীপুর শহর থেকে ৪ কি.মি.পূর্বে রংপুরগামী রেল লাইনের দক্ষিণ পাশে লাগোয়া গড়ের পাড় নামক স্থানে প্রাচীন আমলের প্রাচীনকীর্তি কিচক রাজার গড়টি কেটে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। গড়টির আয়তন প্রায় ১ বর্গ কি.মি.। সমতল ভূমি থেকে ৩০ ফুট। চারপাশে ৫০০ ফুট পরিখা পরিবেষ্টিত। জায়গায় জায়গায় ধসে গেলেও গড়ের স্বরূপ এখনও অক্ষত। সরেজমিনে এসে দেখা গেল গড়ের বেশি অংশ কেটে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে আন্জুমানে তারাককী ইসলাম নামে এতিমখানা ও বেশকিছু স্থানীয় লোকজন ঘরবাড়ী নির্মাণ করেছে। জনৈক খোরশেদ গড়ের উঁচু ঢিবির বাকি অংশের মাটি কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। খবর পেয়ে পার্বতীপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহেনুল ইসলাম মৌখিক নির্দেশ দিয়ে আপাতত গড়ের মাটিকাটা কাজ বন্ধ করেন। সংশ্লিষ্ট রামপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে গড়টি রঘুনাথপুর মৌজায় অবস্থিত। দাগ নম্বর ৭২৭৫, খতিয়ান ১৩২৪, ১৩২৫ ও মোট জমির পরিমান ১৩.৪৭ একর। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী রেকর্ডে মৃত হাজী রজিবুল্লাহ, সোনাউল্লাহ ও আনিতুল্লাহ তিন ভাইয়ের ৭ একরের মালিকানা দেখা যায়। ওয়ারিশ অনুযায়ী এই অংশের মালিকানা কৃর্ষিবিদ ড. আফসার আলীসহ অন্যান্য শরিকের। বাকি অংশেরও অসংখ্য মালিক। গড়ের পরিখাটি এখনও খাস খতিয়ানভুক্ত। যোগাযোগ করলে ড. আফসার আলী জানান, এই গড়টিসহ চারপাশে যেসব প্রাচীন কীর্তি রয়েছে তা তিনি ইতিহাসে পড়েছেন। তার জানা মতে ব্রিটিশ আমল ও তার পূর্বে এসব জমি বিভিন্ন জনে পত্তন নিয়ে পরবর্তীতে তারা নিজ নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। তারপর বহু হাতবদল হয়েছে। তার অংশের উঁচু ঢিবি এখনও অক্ষত রেখেছেন। পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করা হোক তিনি তা চান। এই গড়ের পূর্বপাশে খোলাহাটি নামক স্থান। ইতিহাস বিস্মৃত করতোয়া নদী খোলাহাটির ওপর দিয়ে প্রবাহিত। এ নদী আজ মৃত হলেও এক সময় ছিল খরস্রোতা। ইতিহাসবেত্তা মি. মার্টিনের ইস্টার্ন ইন্ডিয়া পুস্তকের বিবরণ ও বেল সাহেবের মৌজার ম্যাপে এ স্থানে অসংখ্য প্রাচীন কীর্তির উল্লেখ থাকলেও এখন তা নিশ্চিহ্ন। গড়ের সামান্য পশ্চিমে উষাহার ও কাসাহার নামে রয়েছে দুটি প্রাচীন পুকুর। তার ১ কি.মি. উত্তরে ইট পাটকেলের স্তূপ পরিবেষ্টিত স্থানের নাম হিরা-জিরার ভিটা। এখানে পরিখার চিহ্ন দেখা যায়। এতে অনুমান করা যায় স্থানটি গড়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। রেললাইন জায়গাটিকে দ্বিখ-িত করেছে। এই ভিটার আয়তন প্রায় ২ বর্গ কি.মি.। চারপাশের সমতল ভূমি থেকে বেশ উঁচু। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর বর্তমানে মাটি সমান করে কৃর্ষিকাজ করা হচ্ছে। প্রতœতত্ত্ববিদ আ.কা. মোঃ যাকারিয়া ১৯৮৪ সালের দিকে এ স্থানে এসেছিলেন। গড়ের আকৃতি ও গঠন প্রকৃতি ছাড়াও চারপাশের সংখ্যাহীন প্রাচীনকীর্তি ও ধ্বংসস্তূপ দেখে তিনি ধারণা করেছেন রংপুর-দিনাজপুর বড় রাস্তার মধ্যবর্তী স্থান এবং করতোয়া নদীর উভয় তীরে একদা সমৃদ্ধ জনপদ ও বন্দর নগরীর অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রাচীনত্বের বিষয়টি ঐতিহাসিক গবেষণার ওপর নির্ভরশীল।
×