ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলার সবজি ভারতে পাচার

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

বাংলার সবজি ভারতে পাচার

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২৩ ডিসেম্বর ॥ পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। এক সময় ভারত থেকে ধান, চাল, গম, চিনি, লবণ, আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা খাদ্যদ্রব্য বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসত। এখন এসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলোতে। লালমনিরহাট সীমান্ত ঘেঁষা ধরলা নদীর ৮-১০টি দ্বীপচরে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। এসব দ্বীপ চর ভারতের জেলা শহর, মহকুমা শহর, থানা শহর ও পঞ্চায়েত থেকে বহু দূরে। দুর্গম ভারতীয় গ্রামগুলোতে প্রতিদিন ভারতীয় জনগণের চাহিদা মেটাতে কাঁচা সবজি, আলু, চাল, গম ও খাদ্যশস্য বাংলাদেশের হাটবাজারগুলো থেকে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। জেলার মোগলহাট ও দুর্গাপুর সীমান্তের প্রায় ২শ’ কিলোমিটারে কোন কাঁটাতারের বেড়া নেই। ঢিল ছোড়া দূরত্বে লাগোয়া বাংলাদেশ ও ভারতের গ্রাম। এছাড়াও ধরলা নদীর শুষ্ক মৌসুমে তিনটি শাখা নদী হয়ে কয়েক কিলোমিটার ব্যাসার্ধে বয়ে চলছে। জেগে ওঠা চরে রয়েছে ছোট বড় ৭-১০টি দ্বীপচর। ভারতের বিএসএফ দ্বীপ চরগুলো থেকে অনেক দূরে। ভৌগোলিক কারণে ভারতীয় গ্রামগুলো লাগোয়া এই সীমান্তে, সেখানে সর্বক্ষণিক বিজিবি মোতায়েন করাও সম্ভব নয়। আবার ভারতীয় বিএসএফের সর্বক্ষণিক পাহারা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ইচ্ছে করলে যখন তখন যে কেউ ভারত বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে যাতায়াত করতে পারে। তবে অনায়াসে ঝক্কি ঝামেলা ছাড়া বাংলাদেশের উপজেলা, জেলা এমনকি প্রধান প্রধান শহরে খুব সহজে ভারতীয়রা যাতায়াত করতে পারে। বাংলাদেশীরা ভারতীয় সীমান্ত গ্রামগুলোতে প্রবেশ খুব সহজে করতে পারলেও থানা, মহকুমা ও জেলা শহরে প্রবেশ করা একটু কঠিন। কারণ সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোর ৫-৭ কিমি দূরে শহরে ভারতীয় বিএসএফ সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমান শীত মৌসুমে এ বছর ভারতে শীতের সবজি তেমন ফলন হয়নি। ফলে ভারতে নতুন পুরনো শীল বিলাতি আলু (দেশী জাতের আলু), ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচামরিচসহ নানা জাতের সবজি বস্তায় বস্তায় ভারতে যাচ্ছে। সবজির দাম পাওয়ায় ভারতে যেতে বাধা নেই বলে স্থানীয় প্রশাসন মনে করে। এদিকে চোরাচালানি চক্রের একটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ও ভারতের মধ্যে চোরাই ও অবৈধ ব্যবসায় অর্থের বিনিময় হয় হুন্ডির ও পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে। মাদকদ্রব্যসহ যে পরিমাণ পণ্য ভারত হতে পাচার হয়ে আসে তার দাম বাংলাদেশে থেকে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া পণ্য দিয়ে পরিশোধে সমতা আনতে পারছে না। তাই চোরাকারবারিরা কৃষি পণ্যের ভারতে চাহিদা থাকায় চোরাচালানির পণ্যের অর্থ বিনিময় হার হিসেবে এই বছর শীতের সবজি আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা কৃষি ফসল ভারতে পাচার করছে। চোরাইপথে কৃষিপণ্য ভারতে বস্তায় বস্তায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সামনে দিয়ে গেলেও কোন বাধা দেয়া হয় না। কারণ সীমান্তের ভারতীয় গ্রামে ভারতীয় কৃষক এই ফসল চাষ করেছে বলে চালিয়ে দেয়া হয়।
×