ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক মাসের মধ্যেই শেষ হবে এ কাজ

মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে খাল খনন শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে খাল খনন শুরু

বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে ॥ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাগেরহাটের মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলসংলগ্ন খালের বাঁধ অপসারণ ও ২৩ খাল পুনর্খননের কাজ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রামপাল উপজেলা সদরের ওড়াবুনিয়া খালের বাঁধ কেটে এই কাজের উদ্বোধন করেন রামপাল-মংলার সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক। এ সময় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুস সামাদ, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মু: শুকুর আলী, পুলিশ সুপার মোঃ নিজামুল হক মোল্যা, রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মোঃ আরিফ, রামপাল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। গত ৯ ডিসেম্বর শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কারডুবির ঘটনার পর থেকে ওই নৌরুট বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে মংলা বন্দরে। তাই মংলা বন্দরকে সচল রাখার দাবিতে শ্যালা নদী চালুসহ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল দ্রুত পুনর্খননের দাবি জানান এলাকাবাসী। এরপর প্রধানমন্ত্রী মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলসহ সংলগ্ন খালের বাঁধ অপসারণ ও খাল পুনর্খননের নির্দেশ দেন। খুুলনা বিভাগীয় কমিশনার এ কাজের সার্বিক সমন্বয় এবং বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন তত্ত্বাবধায়ন করছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘১৯৮০ সাল থেকে খালে বাঁধ দিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ অবৈধভাবে চিংড়ি চাষ করে আসছিল। আমি সব সময় এর বিরোধী ছিলাম। ১৯৯১ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণের উদ্যোগ নিলেও তখন প্রশাসনের সহযোগিতা পাইনি।’ খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুস সামাদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে মংলায় ১০টি ও রামপালের ১৩টি খালের বাঁধ অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এসব খালের বাঁধ অপসারণে ৭ দিন সময় লাগবে। এছাড়া আগামী ১ মাসের মধ্যে খালের পুনর্খনন কাজ শেষ হবে আশা করছি। তবে এ কাজের ফলোআপ রাখতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ-ভারত প্রটোকলভুক্ত আন্তর্জাতিক নৌরুটের বাগেরহাটের মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল দ্রুত খননের দাবিতে চ্যানেলের কুমারখালী এলাকায় নদী তীরে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠনসহ এলাকাবাসী। গত রবিবার বিকেলে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেয়। এলাকাবাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিপিডি, ওয়াকার্স পাটি, বাংলাদেশ বিকল্পধারা, কারিতাসসহ অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এলাকাবাসী জানায়, আন্তর্জাতিক নৌরুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি মনুষ্য সৃষ্ট ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আজ সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে। ইতোপূর্বে এই চ্যানেলে দেশ বিদেশের ভারি নৌ-জাহাজ, স্টিমার, কার্গো, রকেটসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করত। ব্যবসা প্রসার ঘটেছিল। মংলা বন্দর সচল ছিল। এই চ্যানেলে মংলা-কুমারখালী নদীর ২২ কি.মি. অকেজো হওয়ায় বর্তমানে হেঁটে এলাকার জনগণ নদী পার হচ্ছে। অথচ এটি দেশের অন্যতম একটি নৌপথ। মংলা বন্দরে যাতায়াতকারী নৌযানের দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে ঘষিয়াখালী ও বেতবুনিয়া খালটি ১৯৬৯-১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএ এর অধীনে খনন করা হয়। মংলা-ঘষিয়াখালী নৌরুটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও উজানে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এবং স্বার্থান্বেষী মহল চ্যানেলের সঙ্গে সরাসরি ৩২টি খালে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষ করার ফলে অতি দ্রুত শেষ হয়ে যায় এবং নাব্য হারিয়ে ফেলে। তারা দ্রুত সরকারী রেকর্ডীয় খালের বাঁধ অপসারণ ও পুনর্খননসহ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ২২ কিলোমিটার নদী খননের দাবি জানান।
×