ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১ নং গ্রেডের কর্মকর্তারা সর্বসাকল্যে পাবেন প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা ;###; সর্বনিম্ন ১৬ নং গ্রেডের কর্মচারীরা পাবেন সাড়ে ১৬ হাজার টাকা

নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নে বছরে বাড়তি ব্যয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নে বছরে বাড়তি ব্যয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা

তপন বিশ্বাস ॥ বেতন কমিশনের সুপারিশ শতভাগ বাস্তবায়ন করতে সরকারের বছরে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রজাতন্ত্রের এই কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মেটাতে সরকারের খরচ হবে প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় বাজেট থেকে এই ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত বেতন স্কেল অনুযায়ী ১নং গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত কোন কর্মকর্তা সর্বসাকল্যে পাবেন প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা। তবে ১নং গ্রেডভুক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা সাধারণত সরকারী বাড়ি পেয়ে থাকেন। সে হিসাবে বাড়িভাড়া ৪০ হাজার টাকা কম পাবেন। সচিবদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে থাকে সার্বক্ষণিক গানম্যান এবং বাসার জন্য দুইজন চাকর। এছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন সুবিধাদি পেয়ে থাকেন। সরকারী বাড়িতে থাকলে কোন সচিব সাকল্যে পাবেন ৮৩ হাজার টাকা। এছাড়া সর্বনিম্ন ১৬ নম্বর গ্রেডের কর্মচারীরা পাবে সর্বসাকল্যে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঝুঁকি ভাতা কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নামাতে, আর অবসরে যাওয়া চাকরিজীবীদের উৎসব ভাতা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার সুপারিশ রয়েছে নতুন বেতন কাঠামোয়। বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দেয়া কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাতে বর্তমানে বাড়িভাড়া বাবদ বিভিন্ন গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে টাকা পান, এবার তার চেয়ে বেশি হারে দেয়ার সুপারিশ রয়েছে। সে অনুযায়ী, মূল বেতন আট হাজার ২০০ থেকে ১২ হাজার ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত হলে (১৬-১১ গ্রেড পর্যন্ত) তাঁরা ঢাকায় মূল বেতনের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন। তবে কোন ক্ষেত্রেই এই ভাতার পরিমাণ ছয় হাজার ৫০০ টাকার কম হবে না। এই পর্যায়ের কর্মচারীদের চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন এবং কক্সবাজার ও ঢাকা জেলার সাভারের ক্ষেত্রে বাড়িভাড়া ভাতা হবে মূল বেতনের ৬৫ শতাংশ। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাতা ছয় হাজার টাকার কম হবে না। ১৬ থেকে ১১তম গ্রেডের কর্মচারীরা দেশের অন্যান্য জেলা শহরে কর্মরত থাকলে মূল বেতনের ৬০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া পাবেন। আর অন্যান্য স্থানের ক্ষেত্রে এই ভাড়া সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার অথবা মূল বেতনের ৫৫ শতাংশ হবে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে বাড়িভাড়া পেতে হলে ‘সরকারী বাসস্থান বরাদ্দ করা যায়নি’ মর্মে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন জমা দিতে হবে। মূল বেতন ৮০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থাৎ ১, ২ ও ৩নং গ্রেডের জন্য (ঢাকার ক্ষেত্রে) বাড়ি ভাড়া ৫০ শতাংশ সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ৪নং গ্রেডের জন্য ৫৫ শতাংশ, ৫ ও ৬নং গ্রেডের জন্য ৬০ শতাংশ, ৭নং গ্রেডের জন্য ৬৫ শতাংশ এবং ৮নং-১৬নং গ্রেড পর্যন্ত বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৭০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে বাড়ি ভাড়া কোন অবস্থায় সাড়ে ৬ হাজার টাকার কম হবে না। ১, ২ ও ৩নং গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও রংপুরের মেট্রোপলিটন/পৌর এলাকার জন্য মূল বেতনের ৪০ শতাংশ। অনান্য স্থানে মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ বাড়িভাড়া প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ৪নং গ্রেডের ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও রংপুরের মেট্রোপলিটন/পৌর এলাকার জন্য মূল বেতনের ৫০ শতাংশ। অনান্য স্থানে মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ বাড়িভাড়া প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। ৫ ও ৬নং গ্রেডের ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও রংপুরের মেট্রোপলিটন/পৌর এলাকার জন্য মূল বেতনের ৫৫ শতাংশ। অনান্য স্থানে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। ৭নং গ্রেডের ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও রংপুরের মেট্রোপলিটন/পৌর এলাকার জন্য মূল বেতনের ৬০ শতাংশ। অনান্য স্থানে মূল বেতনের ৫৫ শতাংশ বাড়িভাড়া প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ৮নং-১৬নং গ্রেড পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও রংপুরের মেট্রোপলিটন/পৌর এলাকার ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৬৫ শতাংশ। অনান্য স্থানে মূল বেতনের ৬০ শতাংশ বাড়িভাড়া প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যমান বেতন কাঠামোয় প্রত্যেক গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক সন্তানের জন্য ২০০ এবং দুই সন্তানের জন্য ৩০০ টাকা করে শিক্ষা ভাতা পান। কমিশনের সুপারিশে এবার তা পাঁচ থেকে সাত গুণ পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করে এক সন্তানের জন্য শিক্ষা ভাতা এক হাজার টাকা ও দুই সন্তানের জন্য দুই হাজার টাকা করতে বলা হয়েছে। এখন সবার চিকিৎসা ভাতা মাসে ৭০০ টাকা। কমিশন এখন তা ১৫শ’ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। প্রত্যেক কর্মচারী যাতায়াত ভাতা পান ১৫০ টাকা। কমিশন তা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। রয়েছে পাহাড়ি ও হাওর এলাকার চাকরিজীবীদের জন্য ‘দুর্গম ভাতা’র সুপারিশও। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন চাকরিতে যোগদান করলে প্রথম মাসে তাঁদের খরচ বেশ বেড়ে যায়। কর্মস্থলে আবাসনের ব্যবস্থা করা, অফিসে নিয়মিত যাতায়াত ব্যয়- এগুলো মেটাতে হয় প্রথম মাসের বেতন পাওয়ার আগেই। ফলে তাঁদের ওপর আর্থিক চাপ পড়ে। এ অবস্থায় চাকরিতে যোগদানকালেই স্থিতি ভাতা নামে একটি ভাতা বরাদ্দের পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। তাতে গ্রেড-১ থেকে ৮ম পর্যন্ত স্থিতি ভাতা ১০ হাজার এবং ৯ম থেকে ১৬তম গ্রেড পর্যন্ত তা সাত হাজার টাকা নির্ধারণের পক্ষে কমিশন। সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম যুগ্ম সচিব পর্যায় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তাদের আপ্যায়ন ভাতা দেড়গুণ বাড়ছে। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব তিন হাজার, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব দুই হাজার ৪০০, সচিব দেড় হাজার, অতিরিক্ত সচিব এক হাজার ৪৫০ এবং যুগ্ম সচিব ও অন্যান্য প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তাদের ৯০০ টাকা করে আপ্যায়ন ভাতা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আর ৯ম থেকে ১৬তম গ্রেড পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাসে ৩০০ টাকা করে টিফিন ভাতা পাবেন। অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একমাত্র আয়ের পথ পেনশন ভাতা। বর্তমান কাঠামোয় এ ভাতার পরিমাণ ৮০ শতাংশ। তা বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ নির্ধারণের পক্ষে সুপারিশ করেছে কমিশন। তবে পেনশনারদের প্রতিটি উৎসব ভাতা দ্বিগুণ করার পক্ষে মত দিয়েছে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিদ্যমান বেতন কাঠামোর বাইরেও বিভিন্ন হারে ঝুঁকি ভাতা নামে অতিরিক্ত অর্থ পেয়ে থাকেন। র‌্যাবের ক্ষেত্রে এটি ৭০ শতাংশ। পুলিশ, কারা পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জনবল এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য সদস্য ৪০ শতাংশ হারে ঝুঁকি ভাতা পান। প্রস্তাবিত বেতন স্কেল অনুযায়ী গ্রেড মুল বেতন সাকূল্যে/বেতন-ভাতা ১. ৮০,০০০/- ১,২৩,০০০/- ২. ৭০,০০০/- ১,০৭,৪৫০/- ৩. ৬০,০০০/- ৯২,৯০০/- ৪. ৫২,০০০/- ৮৫,০০০/- ৫. ৪৫,০০০/- ৭৪,৩০০/- ৬. ৩৭,০০০/- ৬১,৬০০/- ৭. ৩২,০০০/- ৫৫,২০০/- ৮. ২৫,০০০/- ৪৪,৯০০/- ৯. ১৭,০০০/ ৩০,৭০০/- ১০. ১৩,০০০/ ২৪,৯০০/- ১১. ১১,৫০০/- ২১,৩৫০/- ১২. ১০,৫০০/ ১৯,৮০০/- ১৩. ১০,০০০/ ১৮,৮০০/- ১৪. ৯,৫০০/- ১৭,৯৫০/- ১৫. ৯,০০০/- ১৭,৩০০/- ১৬. ৮,২০০/- ১৬,৫০০/- এ ছাড়া রয়েছে শিক্ষা সহায়ক ভাতা, ঝুঁকিভাতা, ধোলাই ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা, যা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
×