ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইতালিতে আবার মৌসুমী কাজের সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশের কর্মীরা

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪

ইতালিতে আবার মৌসুমী কাজের সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশের কর্মীরা

ফিরোজ মান্না ॥ আবার ইতালিতে মৌসুমী কাজের (সিজনাল জব) সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশের কর্মীরা। সুযোগটি ’১৩ সালের এপ্রিলে হারিয়েছিল দেশ। তবে ভারত-পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সুযোগটি ভালভাবে কাজে লাগাচ্ছে। তারা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়নি। মৌসুমী কাজে ইতালি বিশ্বের ২৪ দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে। মৌসুমী কাজের জন্য বাংলাদেশের কর্মীদের বিষয়ে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ দুই দফায় কালো তালিকাভুক্ত করেছিল। দেশটি এবার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার অনুমতি দিয়েছে। তবে মৌসুমী কাজে গিয়ে নির্ধারিত সময় শেষে তাকে অবশ্যই দেশে ফিরতে হবে। সূত্র জানায়, ইতালিতে মৌসুমী কাজের জন্য আবার অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশের কর্মীরা। দেশটি সম্প্রতি এ ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার পর একশ্রেণীর দালাল ইতালি যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের কাছ থেকে ৮ থেকে ৯ লাখ করে টাকা নিয়ে ভাল চাকরির প্রলোভন দেখাচ্ছে। লোকজন দালালদের পাতা ফাঁদে পাও দিচ্ছে। বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানলেও তাদের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছে। কারণ এভাবে কর্মী গেলে মন্ত্রণালয় থেকে কোন অনুমতি নিতে হয় না। তাই তারা জানতে পারে না কত কর্মী অবৈধ পথে বিদেশ যাচ্ছেন। বিষয়টি মনিটর করার কোন ব্যবস্থাও নেই। একমাত্র ইমিগ্রেশন যদি ইচ্ছা করে তাহলে এ ধরনের কর্মী শনাক্ত করতে পারে। এরপরও এটা করা কঠিন হয়ে পড়বে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের ২৪ দেশ থেকে ১৫ হাজার সিজনাল কর্মী নেয়ার অফিসিয়াল গেজেট এ বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়েছিল। ঘোষিত তালিকায় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নাম থাকলেও বাংলাদেশ নেই। অন্য ২০ দেশ হচ্ছে আলবেনিয়া, আলজিরিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, মিসর, ফিলিপিন্স, গাম্বিয়া, ঘানা, জাপান, কসোভো, মেসিডোনিয়া, মরক্কো, মরিশাস, মলদোভিয়া, মন্টিনিগ্রো, নাইজার, নাইজিরিয়া, সেনেগাল, সার্বিয়া, ইউক্রেন ও তিউনিশিয়া। ইউরোপজুড়ে মন্দা, সেই সঙ্গে দেশে দেশে বেকারত্ব সত্ত্বেও ইতালি এমন একটি দেশ, নানান পারিপার্শ্বিক কারণে এখানে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী কাজের জন্য প্রতিবছরই দক্ষ-অদক্ষ হাজার হাজার কর্মীর প্রয়োজন হয়। উত্তরে আল্পস পর্বতমালা থেকে শুরু করে দক্ষিণের সেসেলস দ্বীপ তথা দেশজুড়ে কৃষিখামারগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। মূলত কৃষি কাজের জন্যই ইতালি বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে। কাজ শেষে তাদের আবার দেশে ফিরে আসতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক কর্মী দেশে না ফিরে দেশটিতে থেকে যান। এ কারণে দেশটি তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছিল। এবার আবার বাংলাদেশের নাম তালিকা করা হয়েছে। অন্যদিকে, পর্যটন এলাকাগুলোতে লাখ লাখ পর্যটকের ভিড় সামাল দিতেই সুনির্দিষ্ট দেশ থেকে সিজনাল ভিসায় কর্মী নিয়ে আসার প্রথা প্রচলিত রয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন পলিসিতে। মৌসুমের শুরুতে বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মীরা আসে ইতালিতে, মৌসুম শেষে তারা যার যার দেশে ফিরে যায়। একবার ফিরে গেলে পরেরবার ভিসার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেয় ইতালি ইমিগ্রেশন। কিন্তু বাংলাদেশের কোন কর্মীই সেখান থেকে ফিরে আসে না। তারা ইতালিতে কাজ না পেলে অন্য দেশে কাজের সন্ধানে চলে যান। ২০০৮ থেকে ’১২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ইতালি সরকার প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশীকে সিজনাল ভিসা দিলেও তার মধ্য থেকে ফেরত আসে মাত্র ৫১। এ কারণে মাঝখানে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছিল ইতালি। প্রায় দুই বছর বাংলাদেশ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকার পর আবার আবেদনের সুযোগ পাচ্ছে। সূত্র মতে, বাংলাদেশের কর্মীরা যদি থেকে না যেত তাহলে মৌসুমী কাজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর্মীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকত। ইতালি ইমিগ্রেশন আবার বাংলাদেশকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় দালালরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ কম হওয়ার কারণে দালালরা নানাভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে। দালালদের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষ পাচার হয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, ২০১২ সালের শ্রম অভিবাসনের গতি ও প্রকৃতি মিলে ’১৩ সালে সবচেয়ে বেশি মানব পাচার হয়েছে। বিভিন্ন দেশে অভিবাসী কর্মী গমনের হার ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১১ সালে জনশক্তি রফতানি ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬২। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা ৬ লাখ ১৮৪। পুরুষের তুলনায় নারীর অভিবাসন হার বেশি, ১১ দশমিক ৪৪ ভাগ। একই হারে অবৈধ পাচারও বেড়েছে। পাচার হওয়া নারী-পুরুষের প্রকৃত সংখ্যা কত তা সরকারী-বেসরকারী কোন সংস্থার কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সরকারী-বেসরকারী সংস্থাগুলো সংবাদ মাধ্যম থেকে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তারই হিসাব রাখা হয়। এর বাইরে আর কোন কাজ হচ্ছে না। দেশে লোকসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এ বিষয় নিয়ে সরকারের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। বেসরকারী সংস্থাগুলো মাঝে মধ্যে মানব পাচার প্রতিরোধ নিয়ে বছরে দু’চারটি সেমিনার করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। পাচার হওয়া পরিবারের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। এভাবেই বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
×