ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাবি ক্যাম্পাসে লাল শাপলার বুকে অতিথি পাখির কলকাকলি

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪

জাবি ক্যাম্পাসে লাল শাপলার বুকে অতিথি পাখির কলকাকলি

দীপঙ্কর দাস, জাবি সংবাদদাতা ॥ শীতের বার্তা নিয়ে আসা অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ নৈসর্গিক ক্যাম্পাসে কুয়াশায় ঘেরা জগতের মাঝে শিক্ষার্থীর পদচারণার সঙ্গে তাল রেখে মুখর হয়ে ওঠে অতিথি পাখিও। সগৌরবে জানান দেয়, অতিথি হলেও চিরচেনা এই্ সবুজের বুকে আমরা বুনো ছন্দ জাগাতে ফিরে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় লেক আর জঙ্গলে চলে তাদের অহর্নিশে খুনসুঁটি। ক্যাম্পাসবাসীর ঘুম ভাঙানির দায়িত্ব এখন যেন তাদের কাঁধে বর্তেছে। আর এ দৃশ্য দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগরে। অতিথি পাখির আগমনে শীতের এই সময়টায় দেশী-বিদেশী অসংখ্য পাখিপ্রেমী পর্যটক ভিড় জমায় ক্যাম্পাসে। বাংলাদেশের মধ্যে জাবি ক্যাম্পাসে তুলনামূলক বেশি শীত হলেও তা উপেক্ষা করেই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই অতিথি পাখি দেখতে দর্শনার্থী ও পর্যটক আসছে। এ বছরও অতিথি পাখির উচ্ছ্বাস দেখতে ক্যাম্পাসে পর্যটকের ভিড় বেড়ে গেছে। বিদেশী পর্যটকের আনাগোনাও চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে হাসছে লাল শাপলা। আর লাল শাপলার ফাঁকে ফাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে অতিথি পাখিরা। পাখিদের সারাদিন অবিরাম ক্যাম্পাসজুড়ে উড়ে বেড়ানো আর লেকের পানিতে খুনসুঁটি খুবই উপভোগ্য হয়ে উঠেছে পর্যটকের কাছে। অবিরত ডুবসাঁতার পাখি প্রেমীকে আরও পুলকিত করে বার বার। অতিথি পাখির মোহে পড়ে তাদের খুনসুঁটি আর ডুবসাঁতার দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে তা পাখি প্রেমিকরা বুঝতেই পারে না। পাখি দেখার পাশাপাশি এদের ক্যামেরাবন্দী করতে ভোলেন না পর্যটকরা। তবে ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ করে শুক্রবার দর্শনার্থীর ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়। লেকে ফুটে থাকা লাল শাপলা আর পাখির সৌন্দর্য তাদের মন ভরিয়ে দেয়। পাখি দেখতে আসা এসব মানুষের আপ্যায়নের জন্য ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে এবং ট্রান্সপোর্ট এলাকায় ‘খালা-মামা’রা বিভিন্ন রকম পিঠার দোকান খুলে বসেছে। পাখিদের নির্ভেজাল ভালবাসার জালে আবদ্ধ করতে আন্তরিকতার কমতি নেই ক্যাম্পাসবাসীর। লেকগুলো পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে লাউড স্পিকার, আতশবাজি, পটকা, মাইকিং, গাড়ির হর্ন বাজানো প্রভৃতি নিষিদ্ধ করাসহ নিরাপত্তার জন্য নেয়া হয়েছে নানাবিধ ব্যবস্থা। প্রতিবছর উত্তরের শীতপ্রধান দেশ সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, সিনচিয়াং ও ভারত থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের যে কটি জায়গায় অতিথি পাখি অবস্থান নেয় তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। বাংলাদেশে আসা পাখির এক-চতুর্থাংশ অবস্থান নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। অতিথি পাখি সাধারণত নবেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ক্যাম্পাসের লেকগুলো মুখোর করে রাখে। এ বছর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পরিব্রাজক পাখির মধ্যে রয়েছে ফ্লাইপেচার, গার্গেনি, সরালি, পচার্ড, ছোট জিড়িয়া, লালমুড়ি, বামুনিয়া হাস, মুরহেন, খঞ্জনা, পিনটেইল, নাকতা, জলপিপি, চিতাটুপি, পাতারি , ছোট নগ , লাল গুরগুটি , কোম্বডাক , বেলেহাস পানকৌড়িসহ ভিনদেশী বক।
×