ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপের ফের দেখা মিলেছে

প্রকাশিত: ০৩:০৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

রাজশাহীতে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপের ফের  দেখা মিলেছে

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় বিষধর সাপ রাসেল ভাইপারের সন্ধান মিলেছে। জেলার তানোর উপজেলার মাঠ থেকে এ প্রজাতির একটি সাপ ইতোমধ্যে ধরা হয়েছে। এ সাপের বিষ নিয়ে ইতোমধ্যে গবেষণা শুরু করেছে জার্মানের আন্তর্জাতিক বিষ গবেষণা কেন্দ্র। গত ৬ মাসে এ সাপের দংশনে রাজশাহী অঞ্চলে তিনজনের মৃত্যুর পর অবশেষে এ প্রজাতির সাপটির অস্তিত্ব মিলেছে। এখন এর নমুনা সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এ সাপের দংশনে মানবদেহে পচন শুরু হয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যু হয়। কোন প্রতিষেধকেই দংশিত রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। এ নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ আজিজুল হক আজাদের অধীনে এখন গবেষণা চালানো হচ্ছে। ডাঃ আজিজুল হক আজাদ জানান, এই সাপ বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত। ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে দেখা মিলেনি। তবে চলতি বছরের জুনে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুণ গ্রামের জামাল নামের কৃষককে প্রথমে কামড় দেয়। সেই দিনই তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর বিভিন্ন এ্যান্টি স্ন্যাক ভেনম দিলে তিনি স্বাভাবিক হয়ে উঠেন। তবে ৩ দিন পর তার পায়ে কামড়ের যায়গায় পচন ধরে। ওই সময় মেডিক্যালে জরুরী টিম করে তার যে পায়ে কামড় দিয়েছিল সেই পা অর্ধেকটা কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু ৮ দিনের মাথায় তার পা থেকে সারা শরীরে পচন ছড়িয়ে পড়লে তিনি মারা যান। বিষয়টি চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তোলে। এর ১ মাস পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বরেন্দ্রা গ্রামের আব্বাস আলীর পুত্র আক্কাসকে (১৮) তার হাতের আঙ্গুলে সাপ কামড় দেয়। তিনিও রামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। এ রোগীকে দেখে সেই প্রথমের সাপে কাটা ব্যক্তির মতোই একই ধরন মনে হয়েছিল। ৬ দিন পর হাত কেটে ফেলে দেয়ার পরও সে মারা যায়। সর্বশেষ গত ২৫ নবেম্বর রাজশাহীর তানোর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের নওসাদ আলীর ছেলে তাজিমুদ্দিনের (২৫) পায়ে সাপ কামড় দেয়। সেই দিনই তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একইভাবে তারও পা কাটার পর সারা শরীর পচন ধরে ৯ দিন পর সে মারা যায়। ডাঃ আজিজুল হক (আজাদ) আরও জানান, রোগীদের প্রাথমিক লক্ষণ দেখে মনে হয়, সাধারণ সাপে কাটা রোগীর মতো তারাও ভাল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, তিনজনের মৃত্যুর পর আমরা আন্তর্জাতিক বিষ গবেষণা কেন্দ্রের সাহায্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। পরিপ্রেক্ষিতে জার্মান থেকে একটি গবেষণা টিম গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরেজমিনে তানোরের শিবরামপুর গ্রামের মাঠে মাঠে গিয়ে সেই বিষধর সাপ ধরে এনেছে। এ সাপের নমুনা সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। তিনি জানান, রাসেল ভাইপার নামের এই সাপটি বরেন্দ্র এলাকায় বিস্তার লাভ করেছে। এই সাপ বছরে ২ বার বাচ্চা দেয় এক সঙ্গে ২০ থেকে ৩০টি। আর লম্বা হয় ২ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত। এই সাপ ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেত।
×