ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা হতাশ

ঢাকা নগর কমিটি নিষ্ক্রিয় ॥ আন্দোলনে যেতে সাহসও পাচ্ছে না বিএনপি

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

ঢাকা নগর কমিটি নিষ্ক্রিয় ॥ আন্দোলনে যেতে সাহসও পাচ্ছে না বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। একদিকে আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং অপরদিকে নেতাকর্মীদের মাথার ওপর মামলার খ—গ থাকায় দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা মহানগরে বিএনপির এ বেহাল দশা। রাজধানীতে দলের এই দুরবস্থা থাকায় বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেতে সাহস পাচ্ছে না। জানা যায়, সাদেক হোসেন খোকাকে মাইনাস করে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে নতুন কমিটি ঘোষণার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মনে করেছিলেন রাজধানীতে দলীয় কর্মকা- চাঙ্গা হবে। কিন্তু এ কমিটি ঘোষণার ৫ মাস পরে এসে খালেদা জিয়ার আশার গুড়ে বালি পড়েছে। তিনি এখন ঢাকা মহানগর বিএনপির কার্যক্রম নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। সূত্র মতে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে যেখানেই ইউনিট কমিটি গঠনের প্রস্ততি নেয়া হয় সেখানেই স্থানীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে গত কয়েক মাসে ঢাকা মহানগরীতে ইউনিট কমিটি গঠন উপলক্ষে ডাকা অন্তত ২০টি সম্মেলন বাতিল করতে হয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কোথাও কোথাও মারামারিও হয়েছে। বহু জল্পনাকল্পনার পর রাজধানীতে দলীয় কর্মকা- চাঙ্গা করতে গত বছর ১৮ জুলাই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আব্বাস-সোহেলের নেতৃত্বাধীন ৫৩ সদস্যের ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে এক মাসের মধ্যে প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের সময়সীমা বেঁধে দিলেও এখন পর্যন্ত ৫মাসে অধিকাংশ কমিটিই গঠন করতে পারেনি তারা। আরও ৫ মাস সময় দেয়া হলেও ঢাকা মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটি সকল থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পর মহানগরের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারবে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে মহানগর বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে সাদেক হোসেন খোকা ও আবদুস সালামের নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে মির্জা আব্বাস ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কিন্তু এভাবে নতুন কমিটি করায় আগের কমিটির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সদস্যসচিব আবদুস সালামের অনুসারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তবে সাদেক হোসেন খোকা বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকায় তারা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ না করলেও চুপি চুপি নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকে। এদিকে মির্জা আব্বাস ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের দ্বন্দ্বের কারণে খোকা-সালাম বিরোধী ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরাও এখন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর এসব কারণেই এখন ঢাকা মহানগর বিএনপি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। জানা যায়, ৩ বছর ৭ মাস আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও আবদুস সালামকে সদস্যসচিব করে ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার পর থেকেই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস তার অনুসারীদের নিয়ে এ কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করেন। মির্জা আব্বাসের অসহযোগিতার কারণেই খোকার নেতৃত্বাধীন কমিটি সংশ্লিষ্ট থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো পুনর্গঠন করে মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। যেখানেই থানা বা ওয়ার্ডের কাউন্সিল করার চেষ্টা চালানো হয়েছে সেখানেই গ্রুপিং-কোন্দল সৃষ্টি করে অচলাবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলন কর্মসূচী পালনকালেও মির্জা আব্বাস ও তার অনুসারীরা মাঠে নামেননি। আবার তারাই নির্বাচনের পর আন্দোলনে ব্যর্থতার দায় খোকা-সালাম নেতৃত্বাধীন কমিটির ওপর চাপিয়েছেন। তাদের নানামুখী প্রপাগান্ডার কারণেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এ বছর ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তবে যাদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের সঙ্গে এখন মহানগর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তাই তারা থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের আস্থায় এনে কমিটি গঠন করতে পারছেন না। নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপি জোটের হরতালের দিনে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ছাড়া আর কোন নেতা মাঠে নামেননি। আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস দিনভর শাজাহানপুরের বাসায় বসে থাকলেও একা বাসার বাইরে এসে রাজপথে নামার চেষ্টা করেননি। এই হরতাল ফ্লপ হওয়ার পর এখন বিএনপি নেতাকর্মীরাই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন- দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলনে খোকা-সালামের ব্যর্থতার জন্য যদি তাদের বাদ দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়ে থাকে তাহলে নতুন কমিটির নেতাদেরও তো হরতালে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। তাহলে নতুন কমিটি করে কি লাভ হলো? এ ছাড়া রাজধানীতে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতেও মহানগর বিএনপির তেমন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ২০১১সালের ১৪ মে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের ভাইস -চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামকে সদস্যসচিব করে ২১ সদস্যের ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। এ কমিটিতে ১৯ যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে মাত্র ৪ জন ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অনুসারী। বাকি সবাই ছিলেন সাদেক হোসেন খোকার পছন্দের লোক। আব্বাস অনুসারী ৪ যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেনÑ কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, সবুজবাগ থানা বিএনপির সভাপতি সামসুল হুদা ও মতিঝিল থানা বিএনপির সভাপতি সাজ্জাদ জহির। আর খোকার অনুসারী যুগ্ম আহ্বায়করা হলেন-সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী আবুল বাশার, এম এ কাইয়ুম, আবদুল লতিফ, এম এ মজিদ, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, আলী আজগর মাতব্বর, নূরজাহান মাহবুব, মোঃ আতিক উল্লাহ, মোঃ আজিজ উল্লাহ, আনোয়ারুজাজামান, আবদুল আলীম নকি, বজলুল বাছিত আঞ্জু, মোহাম্মদ মোহন সাবেক সংসদ সদস্য এস এ খালেক ও আবু সাঈদ খান খোকন। এ বছর ১৮ জুলাই স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে ঘোষিত ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৩ সদস্যের কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তার মধ্যে মির্জা আব্বাস অনুসারীদের পাল্লা ভারি হলেও কমিটির বাইরে থাকা নেতাকর্মীদের অসহযোগিতার কারণে সুবিধা করতে পারছেন না তিনি। কমিটিতে থাকা ৬ যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে রয়েছেনÑচেয়াপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, দলের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহম্মেদ, কারাবন্দী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী আবুল বাশার, এমএ কাইয়ুম ও আবু সাঈদ খান খোকন। আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন-গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমান উল্লাহ আমান, এসএ খালেক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরকত উল্লাহ বুলু ও ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, শাহাবুদ্দীন আহম্মেদ ও আব্দুল লতিফ (কলাবাগান), আব্দুল মজিদ (রমনা), আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার (তেজগাঁও), শামছুল হুদা (সবুজবাগ), সাজ্জাদ জহির (শাজাহানপুর), একরামুল হোসেন (শাজাহানপুর), ইউনুস মৃধা (খিলগাঁও), বজলুল বাসিত আনজু (মিরপুর), সাদেক আহম্মেদ (মুক্তিযোদ্ধা), আলী আজগর মাতবর (কাফরুল), নিতাই চন্দ্র ঘোষ (সূত্রাপুর), আহসান উল্লাহ হাসান (পল্লবী), বোরহানুজ্জামান ওমর (পল্টন), হারুন অর রশিদ হারুন (মতিঝিল), সিরাজুল ইসলাম সিরাজ (কলাবাগান), গোলাম হোসেন (সবুজবাগ), তানভীর আদেল বাবু (পল্টন), আবুল হাসান তালুকদার ননী (শাহবাগ), আবু মোতালিব (চকবাজার), আলী ইমাম আসাদ (পল্লবী), আবদুল মহিন (মোহাম্মদপুর), আব্দুস সামাদ (কোতয়ালী), হাজী আলতাফ হোসেন (লালবাগ), ফরিদ আহম্মেদ ফরিদ (দয়াগঞ্জ), আনোয়ার পারভেজ বাদল (চকবাজার), আক্তার হোসেন (খিলক্ষেত), নবী উল্লাহ নবী (যাত্রাবাড়ী), হাজি মীর হোসেন মীরু, ফখরুল ইসলাম (রামপুরা), ফেরদৌস আহম্মদ মিষ্টি (শাহ আলী), তানভীর আহমেদ রবিন (কদমতলী), শেখ রবিউল আলম (ধানমণ্ডি), কফিল (উত্তরা), আরিফুর রহমান নাদিম (আরমানিটোলা), জাফরুল (বংশাল) ও এসএম জিলানী।
×