ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরছে না যে কারণে-

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরছে না যে কারণে-

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ট্রাফিক আইন ভঙ্গের দায়ে বছরে মামলা হচ্ছে প্রায় সাড়ে সাত লাখ। জরিমানা আদায় করা হচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তবুও রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরছে না। আইন ভঙ্গের প্রবণতা বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র ঢাকায় চালকসহ পথচারী ৯০ ভাগ মানুষ আইন ভঙ্গ করে চলেন। তাছাড়া ট্রাফিক আইনে মোটর ড্রাইভিং সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিধানসমূহ জানে না বেশিরভাগ ট্রাফিক সার্জেন্ট। এ সংক্রান্ত কোন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেই তাদের। পুলিশের প্রশিক্ষণের সূতিকাগার সারদাতেও এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না। এমন বাস্তবতায় ট্রাফিক আইনে গুরুত্বপূর্ণ যে ১৬টি অপরাধ রয়েছে, প্রত্যেকটি অপরাধের জন্য পৃথক পৃথক শাস্তি থাকলেও তা উপেক্ষিত। আইন প্রয়োগে যেমন অজ্ঞ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তেমনি চালকরাও কিছুই জানেন না। সাধারণ আইন অর্থাৎ ১৩৭ ধারায় বেশিরভাগ মামলা করে থাকেন সার্জেন্টরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এজন্য একদিকে পুলিশে প্রশিক্ষণ টিম গঠন জরুরী। পর্যায়ক্রমে তারা মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্টদের প্রশিক্ষণ দেবে। অন্যদিকে বিআরটিএর পক্ষ থেকে চালকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরবে না। কমবে না সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা। আইনের প্রতি বাড়বে না শ্রদ্ধাবোধ। বছরে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মামলা ॥ ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অপরাধে বছরে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মামলা দায়ের করা হচ্ছে। বছরে গড় জরিমানা আদায় করা হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬০ হাজার মামলা হয়। এই হিসাবে বার্ষিক মামলার সংখ্যা সাত লাখ ২০ হাজার। আর্থিক জরিমানা আদায় হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। প্রশিক্ষণ নেই ট্রাফিক সার্জেন্টদের ॥ চালকরা কোন আইন ভঙ্গের কারণে কি ধরনের শাস্তি হবে এ সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা বা প্রশিক্ষণ নেই ট্রাফিক সার্জেন্টদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহনে তিনটি ‘ই’ সবার আগে বাস্তবায়ন জরুরী। এগুলো হচ্ছে এডুকেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং ও এ্যানফোর্সমেন্ট। বাস্তবতা হলো তিনটি ক্ষেত্রেই আমাদের ত্রুটির শেষ নেই। এমন বাস্তবতায় পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে না। কমছে না সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা। ১৩৭ ধারায় মামলার সংখ্যা বেশি ॥ আইন অমান্য করার অপরাধে পুলিশ সার্জেন্টরা যেসব মামলা করে থাকেন এগুলোর মধ্যে ১৩৭ ধারার মামলা সবচেয়ে বেশি। জরিমানা করা হয় ২০০ টাকা। কোন ধারায় অপরাধ না পারলে এই ধারায় মামলা করা যাবে-ট্রাফিক আইনে তা বলা আছে। কোন চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও এই ধারায় মামলা হচ্ছে অহরহ। অথচ এজন্য ট্রাফিক আইনে এই অপরাধের ক্ষেত্রে ১৩৮ ধারা প্রযোজ্য রয়েছে। অপরিকল্পিত ইন্টারসেকশন ॥ সড়ক মহাসড়কের বেশিরভাগ ইন্টারসেকশন অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৌশলগত ত্রুটির কারণেই এই অবস্থা। এতে দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়ছে। ঢাকায় আইন ভঙ্গ করেন ৯০ ভাগ মানুষ ॥ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও পুলিশ কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীতে প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ আইন ভঙ্গ করে রাস্তায় চলাফেরা করেন। পথচারী থেকে শুরু করে যারা গাড়ি চালান তাদের প্রত্যেকেই আইন ভঙ্গের জন্য দায়ী। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একজন আইন ভঙ্গ করলে তাকে দেখে আরেকজন আইন ভঙ্গ করছেন নিয়মিত।
×