ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ডিসেম্বর প্রায় শেষ। শেষের পথে। আর মাত্র ক’দিন পর পুরনো হয়ে যাবে ২০১৪। এই পুরনো নিয়ে কেউ পড়ে থাকবেন না। সময় কই? নতুন করে শুরু হবে। সারাদেশের মতো বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা স্বাগত জানাবে ২০১৫ সালকে। না, এখনও খুব মাতামাতি শুরু হয়ে যায়নি। তবে প্রস্তুতি চলছে। রাজধানীতে এবারও থাকছে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির থার্টি ফার্স্ট। জাঁকজমপূর্ণভাবেই বছর বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা সারবেন নগরবাসী। অভিজাত হোটেল, কর্পোরেট হাউসগুলো পরিকল্পনা মোটামুটি চূড়ান্ত করে ফেলেছে। নতুন বছরে নতুন করে দিনক্ষণ গণনা করারও ব্যাপার আছে। এ কাজ জরুরীও বটে। আর তাই অনেক আগেভাগেই ছাপাখানাগুলো ব্যস্ত হয়ে যায়। এরই মাঝে নতুন বছরের ক্যালেন্ডার, ডায়েরি, শুভেচ্ছা কার্ড ইত্যাদি ছাপার কাজ শেষ হয়ে গেছে। চলে এসেছে বাজারে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশের ফুটপাথে জমে উঠেছে বেচাবিক্রি। হকাররা এখানে আকর্ষণীয় সব পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানেই বাড়তি ভিড়। ডায়েরি ক্যালেন্ডার একটির চেয়ে অন্যটি আকর্ষণীয়! হাতে নিয়ে দেখলে সব কিনে ফেলতে ইচ্ছে করে। কেউ কেউ ভাবতে পারেন, ফুটপাথ যেহেতু, অতো ভালো কিছু হবে না। আসলে নামীদামী প্রায় সব ব্র্যান্ডের কালেকশন আছে এখানে। দোকানি মোঃ হাকিম জানালেন, নবেম্বর মাস থেকেই কম বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখন সবচেয়ে বেশি। যার যেটা পছন্দ, ফেলে রেখে যায় না। দামাদামিও কম করেন। নিয়ে যান। পাশের একটি ব্যাংকে কাজ করেন শরিফুল ইসলাম। ভিড় ঠেলে চমৎকার কয়েকটি ডায়েরি কিনেছেন। বললেন, নতুন বছরে জুনিয়রদের গিফট হিসেবে দেব। ওরা এগুলো পেলে এতো খুশি হয় যে, টাকা দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারাও ক্যালেন্ডার ডায়েরি হাতে শহর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পাবলিক বাসে হকাররা নিজস্ব কায়দায় ডায়েরি ক্যালেন্ডারের উপকার বর্ণনা করছেন। বৃহস্পতিবার পল্টনের প্রধান সড়কে নেমে দেখা গেল অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। এক কিশোরী হকার ক্যালেন্ডার হাতে দৌড়চ্ছে। কোন গাড়ি থামলেই, সেখানে গিয়ে হাজির। বন্ধ গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। চোখের সামনে মেলে ধরছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রকাশিত ২০১৫ সালের ক্যালেন্ডার। মেয়েটি যেমন মিষ্টি দেখতে, মুখে তেমনি ভুবন ভোলানো হাসি। কেউ ক্যালেন্ডার কিনছিলেন। কেউ ওর হাসির দিকে তাকিয়ে মনে মনে হয়তো বলছিলেন, এমন হাসি রাশি আনন্দের হোক নতুন বছরটা। এবার শুদ্ধসঙ্গীত উৎসবের কথা। মাত্র কিছুদিন আগে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজনে দারুণ মেতেছিল আর্মি স্টেডিয়াম। অসংখ্য শ্রোতা রাতভর শুনেছেন বিখ্যাত শিল্পীদের পরিবেশনা। কণ্ঠসঙ্গীত যন্ত্রসঙ্গীত ছিল। সেইসঙ্গে ধ্রুপদী নৃত্য। আর তার পর ছায়ানটের শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব। গত কয়েক বছর ধরে এই শিরোনামে ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করে আসছে ছায়ানট। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো এবারের উৎসব। ধানম-ির ছায়ানট ভবনে সন্ধ্যায় এর উদ্বোধন করেন সঙ্গীতগুণী আজাদ রহমান। ছায়ানটের বলেই উৎসবটির আলাদা আবেদন। শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ অনেক সাধারণ শ্রোতারা এসেছিলেন। গম গম করছিল গোটা মিলনায়তন। প্রথম অধিবেশনে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেন সতীন্দ্রনাথ হালদার, বিজন মিস্ত্রি ও প্রিয়াংকা গোপ। ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল বৃন্দ কণ্ঠসঙ্গীত। যন্ত্রসঙ্গীত পর্বে কলকাতার অম্লান হালদার বাজিয়ে শোনান বেহালা। সেতার বাজান এবাদুল হক সৈকত। হলভর্তি শ্রোতা তাঁদের পরিবেশনা উপভোগ করেন। প্রথম দিনের উৎসব চলে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত। আজ শুক্রবার শেষ দিন। উৎসব চলবে সারা রাত।
×