ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেন এই আক্রমণ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

কেন এই আক্রমণ

পাকিস্তানে পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে জঙ্গী হামলায় মঙ্গলবার ১৪১ শিক্ষার্থী নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে কেন স্কুলছাত্ররা এ ধরনের সহিংসতার শিকার হলো। পাকিস্তানী তালেবান এ হামলার দায়ে স্বীকার করেছে। দেশটিতে এর আগেও স্কুল ও মসজিদে হামলা চালিয়ে রক্তপাত ঘটানো হয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন ও ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর অনলাইনের। তবে মঙ্গলবারের হামলা আগের যে কোন হামলার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ। বিশেষ করে মেয়েদের স্কুলে যেতে নিরুৎসাহিত করতে দেশটিতে বহুবার জঙ্গীরা হামলা চালিয়েছে। যেমন হামলা হয়েছিল, স্কুলছাত্রী মালালা ইউসুফজাইয়ের ওপর। যাকে এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের ডেইলি নিউজ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মনির আহমেদ বলেন, তালেবান অধ্যুষিত এলাকা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত এবং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে এখানে কোন স্বচ্ছ ধারণা নেই। তার মতে, ইসলামের নাম ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের হামলা চালাচ্ছে তারা কারণ তারা চায় না সেখানকার ছেলেমেয়েরা আধুনিক শিক্ষা পাক। পাকিস্তান জাতিসংঘ মিশনের দেয়া হিসাব অনুযায়ী ২০১৩ সালে দেশটিতে স্কুল, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের ওপর ৭৮টি হামলা হয়েছে। তবে মঙ্গলবারের হামলা বীভৎসতার দিক থেকে আগের যে কোন হামলাকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এ হামলা কি মালালাকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার প্রতিবাদস্বরূপ করা হয়েছে নাকি তালেবানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চলমানের অভিযানে প্রতিশোধ নিতে করা হয়েছে এ ব্যাপারে বিশ্লেষকরা কোন একটি কারণকে নির্দিষ্ট করতে পারেননি। তবে এর মধ্য দিয়ে তালেবান একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের লড়াই থেকে কোনক্রমেই পিছু হটবে না। তালেবান এটাও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছে যে তাদের আঘাত হানার সামর্থ্য একটুও কমে যায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে স্কুল কেন বারবার জঙ্গী হামলার ফ্রন্ট লাইনে চলে আসছে। এর একটি উত্তর হতে পারে যেহেতু এটি হামলার জন্য সহজ টার্গেট। এখানে হামলা চালিয়ে সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ান অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নটরডেমের ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক ইবরাহিম মুসার মতে, ‘তারা (জঙ্গীরা) একে দেখে থাকে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশেষ করে পশ্চিমা সংস্কৃতির ধারক হিসেবে।’ তার কথা অনুযায়ী, তালেবান বা তাদের মতাদর্শের লোকদের দৃষ্টিতে সমাজে পশ্চিমাকরণের সূত্রপাত হয় স্কুল থেকে। উগ্রপন্থীরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী আধুনিক শিক্ষার স্কুলকে একটি আঘাত হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। পাকিস্তানী তালেবান খুব দ্রুত এই আক্রমণের দায় স্বীকার করে তেহরিক ই তালেবান পাকিস্তান বলেছে, দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী গত ছয়মাস ধরে যে অভিযান অব্যাহত রেখেছে তার জবাব দিতে মঙ্গলবারের হামলা ঘটানো হয়েছে। হামলার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে তারা বলেছে, সেনা বাহিনীর আক্রমণে বহু বেসামরিক লোক ও শিশু নিহত হয়েছে। সংঘাত ও লড়াইয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে সাড়ে ৫ কোটি শিশু শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। পাকিস্তান ছাড়াও আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, নাইজিরিয়া, সোমালিয়া, লিবিয়া এসব দেশে শিশুরা চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। বন্ধ হবে কি জঙ্গীদের মদদদান? পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরে সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে তালেবান হামলার মধ্য দিয়ে একটি প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। প্রশ্নটি হলো, পাক আর্মির কি এখনই ঘুরে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে? এই নিষ্পাপ শিশুদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কি তালেবান সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করে দেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী? প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে কি উস্কানি বন্ধ করে দেবে পাকিস্তান? মঙ্গলবারের এই সন্ত্রাসী হামলার পর অন্যান্য বিশ্ব নেতার পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও হতাহত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান। টুইটার পোস্টে পেশোয়ারের ঘটনাকে কা-জ্ঞানহীন নৃশংস কাজ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারা তাদের প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন তাদের জন্য আমার হৃদয় ভেঙ্গে যাচ্ছে।
×