ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জয়ের স্বপ্ন দু’দলেরই

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

জয়ের স্বপ্ন দু’দলেরই

রুমেল খান ॥ দেশের মাটিতে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার পর এবার জাপানের বিরুদ্ধেও ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। এটি অবশ্য জাপানের সিনিয়র বা জাতীয় দল নয়, অনুর্ধ-২১ জাতীয় দল। আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল ৫টায় তাদের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল নাইন। সরাসরি ধারাবিবরণী শোনাবে রেডিও ভূমি। মঙ্গলবার বাংলাদেশে আসে জাপান দল। এ উপলক্ষে বুধবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, নির্বাহী সদস্য শেখ মোঃ মারুফ হাসান, জাতীয় ফুটবল দলের কোচ সাইফুল বারী টিটু, অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম, ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু; জাপানের কোচ মাকোতো তেগুরামোরি ও অধিনায়ক কেন মাতসুবারা। সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে কোচ সাইফুল বারী টিটু বলেন, ‘বল পজেশন ধরে রাখতে চাই। ৮/৯ দিনের ট্রেনিং করিয়েছি দলকে। সমস্যা ছিল শুরুর দিকে কিছু প্লেয়ারের পুরোপুরি ফিটনেস ছিল না। তবে এখন সেদিক দিয়ে দল ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আছে। আমরা চেষ্টা করব ভাল খেলতে। তবে মাঠে নেমে না খেললে বোঝা যাবে না আমরা কেমন খেলব।’ সেই সঙ্গে টিটু যোগ করেন, ‘নিজেদের মাঠ ও দর্শক হচ্ছে আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।’ জাপানের এই দলটি থাইল্যান্ড যুব দলের সঙ্গে সর্বশেষ যে ম্যাচটি খেলে এসেছে, সে ম্যাচের হাইলাইটস দেখেছেন টিটু। ওই ম্যাচে জাপানের ভুলত্রুটিগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি, আজকের ম্যাচে সেগুলোকেই কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন তিনি। সেই সঙ্গে এই ম্যাচ থেকে কিছু শেখারও চেষ্টা করবে আমার প্লেয়াররা। টিটু জানান, ‘ম্যাচের গতি-প্রকৃতি বুঝে ঠিক করব, দলকে কোন ফর্মেশনে খেলাব।’ দলের দুর্বলতা নিয়েও বলেছেন টিটু, ‘আমাদের দুর্বলতা হচ্ছে দ্রুত আক্রমণ করতে গিয়ে আমরা বল হারিয়ে ফেলি। এটা কাটিয়ে উঠতে হবে। খেলবে ডিফেন্ডিং স্টাইলে, কেননা ওরা শক্তিশালী দল। লক্ষ্য থাকবে রক্ষণভাগ সুদৃঢ় রেখে দ্রুত পাল্টা আক্রমণ করার। ফ্রি কিক, কর্নার ... এগুলো নিয়ে কাজ করেছি। এখন দেখা যাক, ম্যাচে কি হয়।’ অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম দলের সঙ্গে শুরুর দিকে থাকতে পারেননি। কেননা ইন্ডিয়ান সুপার লীগ (আইএসএল) খেলতে কলকাতায় গিয়েছিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘আইএসএল খেলতে গিয়ে এ্যাটলেটিকো ডি কলকাতার হয়ে ১৫ দিন ট্রেনিং করেছি। এর মধ্যে ৩/৪ দিন বিশ্রামে ছিলাম। ক্লাবটির হয়ে কোন ম্যাচ না খেললেও নিজের ফিটনেস নিয়ে কোন সংশয় নেই।’ অধিনায়ক হিসেবে এই দল নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট? ‘এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের যে দলটি ছিল, সে দলের চেয়ে আমার এখনকার দলটিকে বেশি ভাল মনে হচ্ছে। আমি দলের সঙ্গে একদিন অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছি। তাতেই মনে হয়েছে এই দলের ওপর আস্থা রাখা যায়।’ কোচের মতো মামুনুলও জানান, ‘বিজয়ের মাস, নিজেদের মাঠে খেলা, স্থানীয় দর্শক সমর্থন ... সবমিলিয়ে এগুলো আমাদের ভাল খেলতে উৎসাহ যোগাবে।’ জাপানের কোচ মাকোতো তেগুরামোরি বলেন, ‘এবার আমরা বাংলাদেশে এসে সবার কাছ থেকে যেভাবে উষ্ণ অভিবাদন এবং আতিথেয়তা পেয়েছি সে জন্য আমি বাংলাদেশের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে আমাদের এ দল অলিম্পিকের প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে। আসলে আমরা যেভাবে খেলি কালও (আজ) সেই একইভাবে খেলার চেষ্টা করব। এই টিম এখন প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে রয়েছে। এখান থেকে যারা ভাল খেলবে তারাই আগামী বছর অলিম্পিকের বাছাইপর্বে খেলবে। বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার জন্য আমরা উন্মুখ হয়ে আছি।’ দুই দলের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মাকোতো বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন অনেক ঠা-া, কিন্তু এখানে অনেক গরম। তারপর ফুটবলে যে জোয়ার সেটা জাপানে এতটা প্রতাপশালী না যেটা বাংলাদেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রতিপক্ষের দেশের এসে খেলা কঠিন কাজ। এটা আমরা উপভোগ করছি। এশিয়ার ফুটবল দল হিসেবে আমরা একই ধাঁচের ফুটবল খেলি। জনসংখ্যাও বেশি, সেদিক থেকে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বোধ হয় কাছাকাছি।’ বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন ধারণা? ‘বাংলাদেশ সর্ম্পকে আমরা আসলে এখন কিছুই জানি না। আজকে ম্যাচের ভিডিও দেখব। আমাদের টিমে দুজন না, আরও কয়েকজন খেলোয়াড় আছেন যারা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। কুবো এবং সুজোকি ভাল, আরও আছেন মিনোমি এবং নাকাজিমা। এদের টেকনিক খুব ভাল। আশা করি গোল করার পাশাপাশি তাদের ক্রীড়াশৈলীও সবাইকে মুগ্ধ করবে।’ জাপান অনুধ-২১ দলটি এ বছরের জানুয়ারিতে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। এরপর সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে অংশ নেয়। জাপানের অধিনায়ক মাতসুবারা বলেন, ‘এবারের ম্যাচটি আমাদের অলিম্পিক বাছাইয়ের প্রস্তুতিমূলক শেষ বিদেশী ম্যাচ। সেভাবেই আমরা নিজেদের প্রস্তুত করছি। আমাদের সেরাটাই এখানে প্রদর্শন করতে চাই। আমার নিজের লক্ষ্য যদি বলি অবশ্যই এই টিমের একজন হয়ে টিমে অংশগ্রহণ করা এবং টিমের সাফল্য অংশীদার হওয়া। ফুটবল ম্যাচে জেতা ছাড়া অন্য কোন লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠে নামি না। জাতীয় টিমের সঙ্গে খেলছি অবশ্যই আমরা তাদের সমীহ করছি। আমরা আমাদের নিজেদের খেলাটা খেলব এবং একটা জমজমাট ম্যাচ উপহার দিত পারব।’ ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে জাপান ৫৩, এশিয়াতে ১, একাধিকবার খেলেছে বিশ্বকাপ। আর বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ১৬৩, এশিয়াতে ৩৩। বিশ্বকাপ তো দূরের কথা, সাফ অঞ্চলেই এখনও ভালভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। দ্বৈরথে সুস্পষ্ট ফেবারিট নিঃসন্দেহে ‘ব্লু সামুরাই’ বাহিনীরাই। তারপরও নিজেদের মাটিতে খেলা হচ্ছে বলে স্বাগতিক বাংলাদেশের লক্ষ্য ম্যাচটা অন্তত ড্র করা। সিনিয়র পর্যায়ে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত জাপানের সঙ্গে ৫ ম্যাচ খেলেছে। প্রতিটিই হেরেছে বাংলাদেশ। করেছে ১ গোল, খেয়েছে ২২ গোল। এর মধ্যে দুটি ম্যাচ হচ্ছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। ১৯৯৪ সালে সেই বাছাইপর্বের ম্যাচে দুবাইয়ে ৪-১ এবং টোকিওতে ৮-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। বাকি ৩ ম্যাচ হচ্ছে প্রীতি। প্রতিটিতেই জয়ী হয় জাপান। ১৯৭৫ সালে কুয়ালামপুরে ৩-০, ১৯৮৬ সালে দায়েজেয়নে ৪-০ এবং ১৯৯০ সালে বেজিংয়ে ৩-০ ব্যবধানে জয় পায় তারা। এখন দেখার বিষয়, জাপানের বিরুদ্ধে আজ কেমন খেলে বাংলাদেশ।
×