ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নদীতে মাছ নেই- সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

নদীতে মাছ নেই- সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি

মোঃ খলিলুর রহমান ॥ মাছ ধরা গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য দিন দিন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নদী নালা খাল বিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মৎস্য সম্পদ। শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে দেশের অনেক এলাকার নদী নালা খাল বিল। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী শীতলক্ষ্যা নদী এখন মারাত্মক দূষণের কবলে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কেমিক্যাল ও বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি শীতলক্ষ্যায় ফেলা হচ্ছে। ফলে এ নদীর পানি এখন কালচে রং ধারণ করেছে। এ বিষাক্ত পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। আগের মতো শীতলক্ষ্যার নদীর বুকে মাছ ধরার সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। মাছ শিকার করা কারও সখ, কারও পেশা। মাছ শিকার করা যাঁদের পেশা, তারাও এখন অলস সময় কাটাচ্ছে। ছেড়ে দিচ্ছেন বাপ-দাদার পেশা। আজকাল নদী খাল বিলে মাছ মিলে না। তবু নেশার বসে শুকনো খাল বিলে নেমে মাছ ধরার চেষ্টা চালানো অনেকেÑ যা তাঁদের অতীত স্মৃতিকেই শুধু নাড়া দেয়। সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুরের ফরমান আলী (৩৫)। মাছ ধরা তার সখ। পুত্র বেলায়েত হোসেনকে (১২) সঙ্গে নিয়ে শীতলক্ষ্যার সিদ্ধিরগঞ্জের আঁটি এলাকায় এসেছেন মাছ শিকার করতে। মাছ ধরা তাঁদের নেশা। ফরমান আলী একটি ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। যখন সুযোগ পান তখনই ছুটে আসেন মাছ ধরতে। তিনি মশারি দিয়ে মাছ ধরেন। ফরমান আলী জানান, আগের মতো নদীতে আর মাছ নেই। সারাদিন কষ্ট করেও একদিন খাওয়ার মতো মাছ পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে তার জালে বাইম, টাকি, সিং, পুঁটি মাছ ধরা পড়ে। নিজেদের জালে ধরা মাছ খেতেও স্বাদ। ফরমান আলী কাঁচপুরই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তিনি জানান, কচুরিপানা ও নদীর ঝোঁপ-ঝাড়ে মাছ পাওয়া যায়। তবে আগের মতো মাছ না পাওয়ার পিছনে ফরমান আলী দায়ী করেন শিল্প কারখানাকেই। শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি নদীতে ফেলায় মাছের অভাব দেখা দিয়েছে। আঁটি এলাকার শিশু রফিকুল ইসলাম পান্থ (১২), তানভির (৮) ও শান্ত (৬) ওড়না নিয়ে শীতলক্ষ্যায় মাছ ধরতে এসেছে। তাদেরও মাছ ধরা সখ। পান্থ ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে, তানভির শিশু শ্রেণিতে ও শান্ত প্লে শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। মাছ ধরতে এসে তাদের সারা শরীরে কাঁদা লেগেছে। তাকে কি? তবুও মাছ ধরার আনন্দে তারা ছিল বিভোড়। স্কুল ছুটির পর ও বন্ধের দিনে তারা তিনজন শীতলক্ষ্যায় ছুটে আসে মাছ ধরতে। অবুঝ শিশুরাও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক দিন খাওয়ার মতো মাছ ধরতে পারেনি। তারা বলে, শুনতাম নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু এখন আর জালে (ওড়নায়) মাছ ওঠে না। শিমরাইল এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন, মামুন, তাহের, নুর হোসেন ও সুজন একত্রে মাছ ধরতে এসেছে শীতলক্ষ্যায়। সবারই বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তারা মশারী দিয়ে মাছ শিকার করতে এসেছে। তাদেরও মাছ ধরা সখ, পেশা নয়। তারা কাঁচপুর ব্রিজের এলাকায় কচুরিপানার নিচ থেকে প্রতিনিয়ত মাছ শিকার করে। তারা চাকরি করে। অবসর পেলেই তারা শীতলক্ষ্যায় ছুটে আসে মাছ ধরতে। কিন্তু আশার গুড়ে বালি। সারাদিন কষ্ট করেও একদিনের খাবারের মাছ শিকার করতে পারেনি। আল-আমিন জানায়, শুনেছি স্বাধীনতার পর পর এ শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ পাওয়া যেতো। শীতলক্ষ্যার তীরবর্তীর বাসিন্দাদের মাছ কিনে খেতো হতো না। এখন আর নদীতে আগেকার দিনের মতো, মাছের দেখা মেলে না। কাঁচপুরের জেলে সুনীল সাহা জানায়, এখানকার জেলেরা এখন অলস সময় কাটাচ্ছেন। জালে মাছ না ওঠায় তাঁরা হতাশ। গোদনাইলের হাজারীবাগের জেলে নিলয় বর্মন জানান, শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দিন দিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে ওঠায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরও বিলুপ্তি ঘটছে।
×