ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাব্বায় নতুন ইতিহাস লিখতে চান ধোনি

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

গাব্বায় নতুন ইতিহাস লিখতে চান ধোনি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ব্রিসবেনে ভারত ও স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার চার ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু আজ। অতিথি ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন চোট কাটিয়ে দলে ফেরা নিয়মিত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। অন্যদিকে এই ম্যাচ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় কনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হওয়া স্টিভেন স্মিথ নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি। গাব্বার বাউন্সি উইকেটে গত ছাব্বিশ বছরে অসিরা যেমন হারেনি, তেমনি কখনও জয়ের মুখ দেখেনি ভারতীয়রাও! সেই ইতিহাস এবার বদলে দিতে চান ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনি। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে প্রথম ম্যাচে হেরে পিছিয়ে পড়লেও এ্যাডিলেডে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলে সফরকারীরা। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার জন্য দুর্ভাগ্য জয়ের দিনে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি ছিটকে দেয় নিয়মিত অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ককে। সমসাময়িক সময়ে দেশটির সেরা ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই খেলতে হচ্ছে অসিদের। ‘পরিসংখ্যান বলে অতীতে এখানে আমরা টেস্ট জিতিনি। কিন্তু এমন পেস সহায়ক কন্ডিশনে ম্যাচ জয়ের নজির ভারতের রয়েছে। অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ, ডারবান অস্ট্রেলিয়ার পর্থে সাফল্য এসেছে, ফাস্ট উইকেট কোন ব্যাপার নয়। তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে এই সিরিজটা চ্যালেঞ্জ, ওরা পারফর্ম করবে, শিখবে, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। সর্বোপরি গাব্বায় জিতে পরিসংখ্যান বদলে দিতে তৈরি সবাই।’ গত দুই-তিনটি বিদেশ সফরে ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের অবস্থা নাজুক। বিশ্বকাপ জয়ের পরপরই ইংল্যান্ডে গিয়ে ও গতবার এই অস্ট্রেলিয়াতেও ৪-০তে হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছিল ধোনির ভারতকে! এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হারলে ভাল খেলার বিষয়টি মানুষ মনে রাখে না। অথচ বিদেশে অনেক অনেক ভাল ম্যাচ আমরা উপহার দিয়েছি! এখানে এ্যাডিলেডের প্রথম টেস্টেও বিরাট কোহলির নেতৃত্বে আমরা জয়ের কাছাকাছি গিয়ে ছিলাম। এখন সেটিকে জয়ে পরিণত করতে হবে। বিরাট ব্যাটসম্যান হিসেবে অসাধারণ, প্রমাণ করল নেতৃত্বেও।’ অধিনায়ক ধোনি ফেরায় নিশ্চিত করেই বাদ পড়বেন উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা, দীর্ঘ বিরতির পর প্রথম ম্যাচে যার প্রত্যাবর্তন হয়েছিল। গাব্বার উইকেট যেহেতু বাউন্সি ও দ্রুতগতির তাই আগের মতো থাকবেন স্পেশাল তিন পেসার মোহাম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা আর বরুণ এ্যারন। তবে এ্যাডিলেডে অভিষেক হওয়া লেগস্পিনার করণ শর্মার পরিবর্তে দেখা যাবে অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন আশ্বিনকে। বিশ্বের অন্যতমসেরা এ অলরউন্ডারের ব্যাটিংটাও ভারতের জন্য কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে ক্লার্কের অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়া দলে প্রত্যাবর্তন হতে পারে শন মার্শের। ভাই অলরাউন্ডার মিচেল মার্শ আগে থেকেই আছেন। সুতরাং ২০০২ সালে স্টিভ ওয়াহ ও মার্ক ওয়াহ ভাতৃদ্বয়ের পর এবার মার্শ ভাইদের দেখতে পাবেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে নজরটা বিশেষ করে থাকবে অধিনায়ক স্মিথের ওপর। ক্লার্ক ইনজুরিতে পড়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন তার ডেপুটি অভিজ্ঞ ব্র্যাড হ্যাডিনকে দায়িত্ব দেয়া হবে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে ২৫ বছর বয়সী অলরাউন্ডার স্টিভেন স্মিথকে বেছে নেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) নির্বাচকরা। নতুন দায়িত্ব নিয়ে রোমাঞ্চিত স্মিথ। ‘আমি খুবই উত্তেজিত, চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছি। এ বছর আমরা স্ট্র্যাটেজির দিক দিয়ে ভাল জায়গায় আছি। খুব বেশি বদলের প্রয়োজন নেই।’ তবে বিষয়টা এত তাড়তাড়ি ঘটবে এমনটা ভাবেননি তিনি। স্মিথ আরও যোগ করেন, ‘এত তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা হবে ভাবিনি। এই নিয়ে আমি বরাবর স্বপ্ন দেখে এসেছি। অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে নেতৃত্ব দেয়া।’ ভাইস ক্যাপ্টেন ব্র্যাড হ্যাডিনের কাছ থেকে পুরো সহযোগিতা পাবেন বলে আশা করছেন স্মিথ। বলেছেন, ‘আমি জানি সিনিয়ররা সবাই আমাকে ১০০ শতাংশ সহযোগিতা করবে। আমার পাশেই থাকবে হ্যাডিন।’ স্মিথকে অধিনায়কত্ব দেয়া থেকে পরিষ্কার, জাতীয় নির্বাচকরা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সামনের দিকে তাকাতে চান। তাঁর দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে খুশি প্রধান কোচ ড্যারেল লেহম্যানও। বলেছেন, ‘ও একজন তরুণ নেতা। আশা করি, দীর্ঘদিন ও দায়িত্বে থাকবে। ওর জন্য আমরা গর্বিত। ৪৫তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ওর চ্যালেঞ্জ হবে, দেশকে গাব্বা টেস্টে একটা জয় এনে দেয়া।’গত এক বছর ধরে সব ধরনের ফরমেটে নিয়মিত রান করে এসেছেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচকদের চেয়ারম্যান রডনি মার্শ বলেন, ‘স্টিভকে আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি। জাতীয় নির্বাচক কমিটি ক্রিকেটার হিসেবে ওকে খুব উঁচু নজরে দেখে। নেতা হওয়ার মতো সব গুণই ওর মধ্যে আছে।’ এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিউসাউথ ওয়েলস ও বিগ ব্যাশ টি২০তে সিডনি সিক্সারসের নেতৃত্ব দিয়েছেন স্মিথ। আইপিএলে ২০১২ সালে পুনে ওয়ারিয়র্সের নেতৃত্ব দেয়ারও অভিজ্ঞতা আছে। মাত্র এক বছর আগেও টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন না স্মিথ। ২০১৩ সালের ভারত সফরে ভাল পারফর্র্র্র্র্মেন্স তাঁর ক্যারিয়ার বদলে দেয়। নিজেই সেটা স্বীকারে করে বলেছেন, ‘গত ১৮ মাস আমার জীবন অনেকটাই ঝড়ের গতিতে এগিয়েছে। এখন ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং।’ আরও বলেছেন, ‘আমি যখন ব্র্যাড হ্যাডিনকে বলি, আমাকে নির্বাচকদের চেয়ারম্যান রড ফোন করেছিলেন, তখনই ব্র্যাড খুশিতে ফেটে পড়ে। ও সব সময় আমার পাশে থেকেছে, এখনও থাকবে। ব্র্যাডের ক্রিকেট মস্তিষ্কটা দারুণ।’ এ মৌসুমে ডেভিড ওয়ার্নারের পর অস্ট্রেলিয়ার সফলতম ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ। বল হাতেও কার্যকর তিনি। ‘আমি সতীর্থদের বলে এসেছি। কোন পরিবর্তন আসবে না। ক্লার্কের নেতৃত্বে গত ১৮ মাস আমরা যেভাবে খেলে এসেছি, এখনও তেমনি আগ্রাসী ক্রিকেটই খেলব।’ ওদিকে সিডনির এক দোকানে বন্ধুকধারীদের সন্ত্রাসী হামলার সূত্র ধরে ইতোমধ্যে সফরকারী ভারতীয় দলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া প্রসাশন। আজ শুরু হওয়া গাব্বা টেস্টসহ সফরের শেষ পর্যন্ত থাকবে বাড়তি নজরদারি।
×