ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেইপিজেডকে দেয়া জমির ২ হাজার একর ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত

উচ্চ আদালতে মামলায় পুরো প্রক্রিয়া থমকে গেছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

উচ্চ আদালতে মামলায় পুরো  প্রক্রিয়া থমকে গেছে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় সংলগ্ন পশ্চিম পটিয়া ও আনোয়ারায় কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনকে (কেইপিজেড) ইতোপূর্বে বিনামূল্যে প্রদত্ত প্রায় আড়াই হাজার একর জমি থেকে প্রায় ২ হাজার একর ফিরিয়ে নেয়ার সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়েরের পর পুরো প্রক্রিয়া থমকে গেছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে প্রদত্ত জমি থেকে ৫শ’ একর রেজিস্ট্রেশন নেয়ার পত্র দেয়। এ ৫শ’ একর জমির উন্নয়ন ফলপ্রসূ হিসেবে চিহ্নিত হলে পরবর্তীতে আরও ৫শ’ একর দেয়ার আশ্বাস প্রদান করা হয়। এ ধরনের পত্র পাওয়ার পর কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে প্রদত্ত পুরো জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়া ও এ সংক্রান্ত কোন ধরনের হয়রানিমূলক আচরণ না করার প্রতিকার চেয়ে মামলা করে দেয়। তবে আদালত এ আবেদনের প্রেক্ষিতে কোন ধরনের নির্দেশনা প্রদান না করলেও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ সংক্রান্ত তাদের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রেখেছে। পুরো বিষয়টি এখন প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে সোমবার জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৬ বছরেরও বেশি আগে বাংলাদেশে একক বৃহৎ পুঁজি বিনিয়োগকারী কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ইয়ং ওয়ান কর্পোরেশনকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে প্রায় আড়াই হাজার একর (২,৪৯২ একর) জমি বিনামূল্যে লিজ প্রদান করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য শুধু তাদের কাছ থেকে ৫৪ কোটি টাকা জমা নেয়া হয়। ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে প্রদান করে অবশিষ্ট ১০ কোটি টাকা। ১৯৯৬ সালে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে জমি বরাদ্দ ইস্যু করে। ১৯৯৯ সালে অধিগ্রহণ খাতে নির্ধারিত অর্থ পাওয়ার পর তাদের জমি বুঝিয়ে দেয়া হয়। এ সংক্রান্তে সম্পাদিত সমঝোতা পত্রে সরকার শর্ত প্রদান করেছিল ইপিজেড প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা বেপজার আইনকানুনে ১৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পাদন করবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পর শিল্প প্লট স্থাপনের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে শিল্প জোন গড়ে তুলবে। আর এ ইপিজেডে সাড়ে ১৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান ঘটাতে হবে। কেইপিজেড কর্তৃপক্ষও ঘোষণা দিয়েছিল তারা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে বিভিন্ন ধরনের রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে। পরিবেশের আইন মেনে চলবে। এলাকার পাহাড়, লেক, ধর্মীয় স্থাপনা, কবরস্থান অক্ষত রাখা হবে। ১৯৯৯ সালের ৩১ অক্টোবর কেইপিজেডের গ্রাউন্ড ব্রেকিং হয়। লিজ দেয়ার দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ উক্ত ভূমিতে যথাযথ উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নানা কর্মকা- চালাতে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে দফায় দফায় বিরোধ ও সংঘর্ষ এবং হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের চলাচল রাস্তা থেকে শুরু করে হাটবাজার, উপাসনালয় বন্ধ হয়ে গেছে। ঐ এলাকায় এ পর্যন্ত ৪৭ একর ভূমির পাহাড় কেটে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। এতে করে এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়ে আছে। এছাড়া পরিবেশের কোন ছাড়পত্র না নিয়ে পাহাড় কর্তন করে পরিবেশ নষ্ট করার দায়ে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে জরিমানাও করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে তাদের একাধিক ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি। সমঝোতা শর্ত অনুযায়ী কার্যক্রম না হওয়ায় ২০১২ সালে প্রাইভেট ইপিজেড সেলের সভায় কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিপূর্ণভাবে করার জন্য আরও ২ বছর সময় দেয়া হয়, যা গত ৮ জুলাই উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ ৫শ’ একর জমিতে ইয়ং ওয়ান কর্পোরেশনের মালিকানা জুতা ও পোশাকের ৮টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে মাত্র। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশী বিভিন্ন রাষ্ট্র বিশেষ করে চীন, জাপান, ভারত বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন (ইইজেড) চেয়েছে। এতে সরকারও সায় দিয়েছে। এ অবস্থায় কেইপিজেডকে ইতোপূর্বে প্রদত্ত আড়াই হাজার একর জমি থেকে ৫শ’ একর দিয়ে অবশিষ্ট জমি ফেরত নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এ সরকার। সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে ৫শ’ একর জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়ার পত্র দেয়। এরপর তাদের উন্নয়ন কর্মকা- শর্ত অনুযায়ী আশাব্যঞ্জক হলে পরবর্তীতে তা আরও ৫শ’ একর জমি দেয়ার আশ্বাস প্রদান করা হয়। এ ধরনের পত্র প্রাপ্তির পর কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করে দিয়েছে। তারা তাদের প্রদত্ত পুরো আড়াই হাজার একর ভূমির রেজিস্ট্রেশন দাবি করেছে এবং উন্নয়ন কর্মকা-ে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা না ঘটানোর প্রতিকার চেয়েছে। মামলাটি আদালতে পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে আপাতত না এগুনোর নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। সোমবার তিনি জনকণ্ঠকে জানান, পুরো বিষয়টি এখন প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় নিয়ন্ত্রণ করছে। উল্লেখ্য, কেইপিজেডকে প্রদত্ত লিজ জমির এখনও কোন রেজিস্ট্রি হয়নি। এছাড়া এ মুহূর্তে ৫শ’ একরের বেশি জমি রেজিস্ট্রি দেয়ার সরকারী ক্লিয়ারেন্সও নেই। কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের দাবি আগের মতোই। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে শর্ত অনুযায়ী যে পরিমাণ বিদ্যুত ও গ্যাস দেয়ার কথা ছিল তা তারা পায়নি।
×