ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজয় দিবসে বেতারের হীরক জয়ন্তীর বর্ণিল অনুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

বিজয় দিবসে বেতারের  হীরক জয়ন্তীর  বর্ণিল অনুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ জাতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ বেতার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালীর অস্তিত্বের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রেখেছে তৃণমূল মানুষের সবচেয়ে কাছের এই সম্প্রচার মাধ্যমটি। সময়ের বহমানতায় পথচলার ৭৫ বছরে পদার্পণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। আর এই হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে চার দিনের বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা। বৈচিত্র্যময় নানা পরিবেশনায় সাজানো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এসব অনুষ্ঠান চলছে আগারগাঁওয়ের জাতীয় বেতার ভবনে। মঙ্গলবার বিজয় দিবসে বেলা আড়াইটায় শুরু হয় অনুষ্ঠানসূচী। ভরপুর শ্রোতা-দর্শকের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সম্মিলিত কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি পরিবেশন করেন বেতারের ঢাকার শিল্পী ও কলকাকলির শিশু শিল্পীবৃন্দ। এক সময়ের খুবই জনপ্রিয় দুর্বার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা পরিবেশন করে রণসঙ্গীত। অংশ নেন সামরিক বাহিনীর ঢাকার শিল্পীরা। যন্ত্রসঙ্গীতের সুর মূর্ছনায় উপস্থাপিত হয় ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানটি। পরিবেশন করেন বেতারের ঢাকার শিল্পীরা। হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে রচিত সঙ্গীত সম্মিলিত কণ্ঠে গীত হয় বেতারের ঢাকার শিল্পীদের কণ্ঠে। এদিনের আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নিয়ে উপস্থাপিত পটগানের পরিবেশনা। এটি উপস্থাপন করেন খুলনা বেতারের রূপান্তর থিয়েটার গ্রুপের শিল্পীরা। রাজশাহীর ঐতিহ্যভিত্তিক গম্ভীরা ও টমটমের গান পরিবেশন করে রাজশাহী বেতারের শিল্পীবৃন্দ। শ্রোতাদের অনেকের কাছে ভিন্নতার স্বাদ দেয় পুুঁথি পাঠ। এটি উপস্থাপন করেন ঢাকার পুঁথিপাঠক মীর আশফাক হোসাইন। ‘তুমি রহমতের নদীয়া’ শীর্ষক হযরত শাহজালালের গান পরিবেশন করেন সিলেট বেতারের শিল্পীরা। হাসন রাজার গান শোনান সিলেট বেতারের শিল্পী জামাল উদ্দিন হাসান বান্না। বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমের গান শোনান সিলেট বেতারের শিল্পীদ্বয় বিজন রায় ও লাভলী দেব। রাধা রমন ও দীনহীনের গানের পরিবেশনায় অংশ নেন লাভলী দেব ও তাঁর সঙ্গীরা এবং জামাল উদ্দিন হাসান বান্না ও মরিয়ম বেগম। মনিপুরী নৃত্য পরিবেশন করেন সিলেটের অনিল কিষণ সিংহ ও তাঁর দল। সান্ধ্যকালীন সংবাদ উপস্থাপক-উপস্থাপিকাদের পরিবেশনাটি ব্যতিক্রমী হিসেবে ধরা দেয় শ্রোতাদের কাছে। মাটির সুরমাখা ভাওয়াইয়া গান শুনিয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে হিল্লোল তোলেন নাদিরা বেগম এবং রংপুরের দুই শিল্পী রঞ্জিত কুমার ও মনোয়ারা পারভীন। মজাদার বিয়ের গীত পরিবেশন করেন রংপুরের মোঃ সিরাজ উদ্দীন ও তাঁর দল। ধামের গান শোনান ঠাকুরগাঁও বেতারের শচীন্দ্রনাথ ও তাঁর দল। চাকমা জুম নাচ পরিবেশন করে রাঙ্গামাটি বেতারের সাগরিকা চাকমা ও তাঁর দল। মেউফ্রু মার্মা ও তাঁর দল উপস্থাপন করে ত্রিপুরা বোতল নাচ। লুসাই ব্যাম্বু নাচ পরিবেশন করে রাঙ্গামাটি বেতারের এনি ও তাঁর দল। সুমধুর সুরে বেহালা বাজিয়ে শোনান আলমাস উদ্দিন ও তাঁর সঙ্গীরা। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন খ্যাতিমান দুই শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও সাদী মোহাম্মদ। লালনগীতির পরিবেশনা দিয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন। এমন নানা পরিবেশনার মাঝে রাতের নির্জনতায় অনুষ্ঠানস্থলে ভেসে বেড়ায় কবিতার দোলায়িত ছন্দ। খ্যাতিমান কবিদের কবিতা আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজী আরিফ, ডালিয়া আহমেদ, ফেরদৌসী আবেদীন লীনা ও শিরিন খাতুন। দেশবরেণ্য সঙ্গীত, নাট্য ও বেতার ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সেলিব্রেটিদের আড্ডা।। আড্ডা শেষে সুরেলা শব্দধ্বনি ছড়িয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আবদুল জব্বার, মনোরঞ্জন ঘোষাল, রফিকুল আলম, শাম্মী আক্তার ও সুবীর নন্দী। শাস্ত্রীয় যন্ত্রসঙ্গীতের হৃদয়স্নাত পরিবেশনা দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানমালা। শ্রোতার হৃদয়ে প্রশান্তি ছড়িয়ে বাঁশি ও সেতারের যুগলবন্দী পরিবেশনায় অংশ নেন বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকীম ও সেতারশিল্পী ফিরোজ খান।
×