ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শামসুল আরেফিন খান

লাল ইশতেহার ও বাঙালীর স্বাধীনতা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

লাল ইশতেহার ও বাঙালীর স্বাধীনতা

ভাগ কর, শাসন কর। ব্রিটিশের নির্বিঘœ ভারত শাসনের নতুন এই কৌশল প্রবর্তন করেন ভাইসরয় লর্ড কার্জন। বাংলা বিভক্তি কার্যকর হলো ১৬ অক্টোবর ১৯০৫। পূর্ববঙ্গ ও অসম পেল ১.৮০ কোটি মুসলমান এবং ১.২০ কোটি হিন্দু। পশ্চিমবঙ্গ পেল ৪.২ কোটি হিন্দু আর ৯০ লাখ মুসলমান। হিন্দু-মুসলমানের নয় কেবল, বাঙালীর ঐতিহাসিক যৌথ পরিবারের হাজার বছরের মিলন উঠোনে বিভাজনের পাঁচিল উঠল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিজিত ভারতের রাজধানী করেছিল কলকাতায়। বঙ্গভঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী চলে গেল দিল্লী মুঘলদের পরিত্যক্ত স্থাপনায়। ব্রিটিশ বুঝেছিল বাঙালীকে নিয়ন্ত্রণ ও দমন না করলে রাজত্ব টিকবে না। বাঙালীও বুঝে ফেলেছিল পরাধীনতা প্রলম্বিত করার নতুন ছলাকলা ও বিলেতি ফন্দি-ফিকির। বাংলা তখন ছিল ম্যানচেস্টারের তৈরি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। ডান্ডির কাঁচা মালের শীর্ষ যোগানদার। বাঙালী তার বল্লমটা ঠেকিয়ে দিল ব্রিটিশ বেনিয়াদের ঠিক কলিজার গোড়ায়। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯০৫, প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করে পঞ্চাশ হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিল কালীঘাট কালীমন্দিরে। উপলক্ষ ছিল দুর্গা পূজা। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সমবেত বাঙালী হিন্দু- মুসলমান। বিলেতি কাপড় পরবে না কেউ। যেমন কথা তেমন কাজ। বিলেতি কাপড়ের বহ্ন্যুৎসব হয়েছিল। পাট বুনল না কৃষক। ডান্ডির চাকা থেমে যেতে লাগল। ‘অত্যাচারের খড়্গ কৃপাণ’ নেমে এলো ‘ভীম রণভূমে’। ধামা নিয়ে নোংরা দালালিতে নামলেন বাংলার নব্য মীরজাফর ঢাকার নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ। এনামস্বরূপ পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় স্থাপিত হলো। দালালির দাদন হিসেবে নবাব সাহেব স্বল্প সুদে বেশ কিছু টাকা পেলেন আর পেলেন দালালির ঠিকেদারি। ৩০ ডিসেম্বর ১৯০৬ তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হলো নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। ব্রিটিশের তাঁবেদার রাজাকার গোলামদের আখড়া। উদ্দেশ্য, মুসলমানদের রাজভক্তিতে গদগদ করে তোলা। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে একদা সম্প্রীতির অচ্ছেদ্য বন্ধন রচনা করেছিলেন ‘মুঘলে আযম’ সম্রাট আকবর আসমুদ্র হিমাচল বিস্তৃত তাঁর সাম্রাজ্য সুরক্ষার তাগিদে। সেই প্রীতিবন্ধন ছেদনে খড়্গহস্ত হলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য রক্ষার তাগিদে ‘গোলামে আযম স্যার সলিমুল্লাহ’। প্রকাশিত হলো ‘লাল ইশতেহার’। তাতে বলা হলোÑ হিন্দুরা মুসলমানদের সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছে। হিন্দুদের বয়কট করো। সলিমুল্লাহ কুমিল্লা সফরে গেলেন ৪ মার্চ ১৯০৭। মুসলমানরা হামলে পড়ল হিন্দুদের ওপর। দোকানপাট লুট করল। বাড়িঘরে, আড়তে, মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দিল। দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ল জামালপুর এবং অন্যান্য জায়গায়। সংখ্যালঘুরা আর আমানত রইল না। বধ হলো। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার ঘটিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন বোম্বের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি কঠোর ভাষায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার নিন্দা জানালেন। (চলবে)
×