ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘষিয়াখালী খালের চিংড়িঘের বন্ধের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

ঘষিয়াখালী খালের চিংড়িঘের বন্ধের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভারত-বাংলাদেশ নৌ-প্রটোকল রুট ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের নৌবাণিজ্য যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়া পথ ঘষিয়াখালী চ্যানেল উদ্ধারে ওই খালের মুখে থাকা চিংড়ি ঘেরগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনায় বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেল সরাতে এবং ক্ষতি যাতে আর না বাড়েÑ তা নিশ্চিত করতে বিষয়টি ‘ভালোভাবে’ পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। এছাড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক কাজী গোলাম রসুলের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহিত হয়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর গোপালগঞ্জ ও যশোরের জেলার প্রশাসক এবং ঢাকা ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন। ভিডিও কনফারেন্সের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অন্য জেলা থেকে গোপালগঞ্জ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জেলাটি ছিল অবহেলিত। এখানে খাল, বিল, নদী, নালায় পূর্ণ থাকায় মানুষ অনেক কষ্ঠে থাকে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বড়ই দুর্বল। আগে এ জেলাকে অন্য চোখে দেখা হতো। তিনি বলেন, তার মানে শুধু গোপালগঞ্জ নয়। আমরা সারাদেশের উন্নয়ন করতে চাই। তার মধ্যে অবহেলিত, বঞ্চিতদের কাজ আগে করতে চাই। তিনি গোপালগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর বেশি জোর দেন। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশের প্রত্যেকটি মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানোর। দেশের ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য কমিয়ে আনা। দেশে বর্তমানে দারিদ্রের হার ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এ হার আরও ১০ ভাগ হ্রাস করতে চাই। এ জন্য গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের একটি মানুষও যেন গৃহহারা না থাকে। গৃহহীনদের আমরা গৃহ দেব। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য আমরা কাজ করি। এটা অব্যাহত থাকবে। আমাদের মানসিকতা জেনে আপনারা সে মোতাবেক কাজ করবেন। যশোর জেলাকে ডিজিটাল জেলা আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের জন্য সকলকে অবদান রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যে সকল প্রত্যন্ত অঞ্চল বা চরাঞ্চলে বিদ্যুত পৌঁছায়নি, সেসব এলাকায় সোলার প্যানেল তৈরির মাধ্যমে বিদ্যুত চাহিদা মেটাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ। ঢাকায় বসে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি। বরং ওখানে গেলে ব্যস্ততার কারণে এভাবে অনেক কথা বলতে পারতাম না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কারণে ঢাকায় বসে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি। আপনাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে পারছি। এখানে বসে তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশনা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে বলেন, সুন্দরবনের এ ঘটনা নিজে তদারকি করবেন। ভবিষ্যতে এ জাতীয় ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। স্থানীয় গ্রামবাসীদের তেল অপসারণের কাজে লাগানো হয়েছে এটা ভাল উদ্যোগ। পাশাপাশি আর কী উদ্যোগ নেয়া যায় তাও দেখবেন। সুন্দরবনের নদী ও খালে ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহে গত তিনদিন ধরে স্থানীয় গ্রামবাসী, জেলে ও শ্রমিকদের নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে সেখানে কাজ চলছে হাঁড়ি-পাতিল ও চটের বস্তা নিয়ে স্থানীয় পদ্ধতিতে। প্রথমে রাসায়নিক ব্যবহার করে তেল দূষণ কমানোর কথা ভাবা হলেও পরে সুন্দরবনের ক্ষতির আশঙ্কায় তা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে বৈঠক থেকে খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী তেল অপসারণে স্থানীয়দের অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে এ তেল সরিয়ে নিচ্ছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে এরই মধ্যে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ায় ইরাবতী ডলফিনের (শুশুক নামে পরিচিত) সবচেয়ে বড় এই অভয়াশ্রম মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে পরিবেশ ও প্রাণিবৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এছাড়া শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের গাছপালা ও জলজ সম্পদেরও মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে তাদের আশঙ্কা। এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের বিষয়টি ভাল করে মনিটরিং করা দরকার, তেল সরানো এবং আর ক্ষতি যাতে না হয়। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মংলা বন্দরের কাজ বন্ধ করে দেয়ায় বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ঘষিয়াখালী খাল অনেকদিন ড্রেজিং করা হয়নি। সিলড হয়ে গিয়েছিল। বিএনপির সময় মংলা বন্দরের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। সেজন্য এ দিকটায় কেউ আর খেয়াল করেনি। ঘষিয়াখালীর যে শাখা খালগুলো ছিল, তার মুখে চিংড়ি ঘের করে পানি আসার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। এই ঘেরগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। মংলার নালা ও রামপালের কুমার নদী ভরাট হয়ে ভারত-বাংলাদেশ নৌ-প্রটোকল রুট ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের নৌবাণিজ্য যোগাযোগ পথ হিসেবে ব্যবহৃত ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। তখন থেকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে শ্যালা নদীকে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষÑ বিআইডব্লিউটিএ। পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকির কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে এই নৌপথ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে দাবি এসেছে। শ্যালা নদীর ঘটনার পর পরিবেশ ও বনমন্ত্রণালয়ও ওই পথে নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধের সুপারিশ করেছে। তবে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান তা নাকচ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে এই ঘষিয়াখালী খাল চালুর কথা বলেছি। এর মুখ থেকে চিংড়ি ঘের সরিয়ে দিতে হবে, যাতে খালগুলো বন্ধ না হয়। দুই জেলার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে সম্মেলন আয়োজনের প্রশংসা করেন। গত ২০ নবেম্বর ওই সম্মেলন হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ডিসি-ডিএম সম্মেলন একটি ভাল উদ্যোগ। মাদক, চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার বন্ধে একটি ভাল উদ্যোগ। কারও একার পক্ষে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব না। এজন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগ দরকার। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে এ ধরনের সম্মেলন করা যায় কি না সে ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
×