ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শংকুর মা আজও কোন ভাতা পাননি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

শংকুর মা আজও কোন ভাতা পাননি

মানিক সরকার মানিক, রংপুর ॥ রংপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা শংকু সমাজদারের হতদরিদ্র বৃদ্ধা মা আজও শহীদ কিংবা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। এমনকি রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হয়নি তাকে। বিজয় এবং স্বাধীনতা দিবসের সরকারী আলোচনা সভায় কেবলমাত্র একটি রজনীগন্ধার স্টিক আর দুশ’ টাকার প্রাইজবন্ডই তার সন্তান হারানোর রাষ্ট্রীয় প্রাপ্তি। কেমন আছেন রংপুরের প্রথম শহীদ শংকু সমাজদারের মা-জানতে চাইলে শহীদ মাতা আক্ষেপ করে তার কষ্টজাগা অনুভূতির কথা বললেন এভাবেÑ ‘ছেলেকে হারিয়ে স্বাধীন একটা দেশ পেয়ে সত্যিই ছেলে হারানোর কষ্ট ভুলেছিলাম। এখন স্বাধীনতার এতটা বছর পর সন্তান হারানোর চেয়েও বড় কষ্ট পাচ্ছি রাষ্ট্রের যতসব কীর্তি দেখে। তাইতো ধিক্কার জাগে নিজের প্রতি যে, কেন এদেশে জন্মেছিলাম, আর কেনইবা যুদ্ধে যেতে দিয়েছিলাম ছেলেকে। আসলে সত্যিকারেই মা হয়ে ছেলেদের ওই মিছিলে যেতে দিতে চাইনি। ওদের চেতনাই টেনে নিয়েছিল সেদিন। আর তাই এখন মনে মনে ছেলেকে বলি কী পেলি বাবা, দেশের জন্য মিছিলে যেয়ে শহীদ হয়ে? তোকে নিয়ে, তোর হতভাগিনী মাকে নিয়ে রাষ্ট্রের এই যে টানাহেঁচরা এসব দেখে এখন মনে হয় এর চেয়ে মরণ ভাল’। দিপালী জানান, ’৭১ এর ৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চের পূর্বনির্ধারিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি করার প্রতিবাদে ৩ মার্চ সারাদেশে যে হরতাল ডেকেছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেই হরতালের মিছিলে যায় তার স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলে কুমারেশ সমাজদার বাবু আর শংকু সমাজদার। বড় ছেলে বাবু ফিরে এলেও লাশ হয়ে ফেরে শংকু। শংকুর শহীদ হওয়ার কথা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণেও উল্লেখ রয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর সরকার শহীদ পরিবার হিসেবে নগরীর কামাল কাছনা এলাকায় একটি সরকারী বাড়ি তাকে থাকার জন্য লিজ দিয়েছিল। পরবর্তীতে ওই বাড়ি সরকারীভাবে কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে তার কাছে বিক্রি করে দেয়। তিনি সমুদয় টাকা পরিশোধ করলেও ২০১১ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ‘শংকু গেজেটভুক্ত শহীদ নন’ এই কারণে বাড়ির দলিল রেজিস্ট্রির কাজ আটকে দেয়। বিভিন্ন সময়ে রংপুরের জেলা প্রশাসকগণ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে শহীদ শংকুকে গেজেটভুক্ত করার আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে শহীদ শংকুর আত্মদান আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে আরও বেগবান ও ত্বরান্বিত করায় শহীদ শংকু সমাজদারের নাম গেজেটভুক্তকরণের বিষয়ে অথবা বিশেষ বিবেচনায় শহীদ শংকুর মা দিপালী সমাজদার কর্তৃক সরকারী যাবতীয় প্রাপ্য পরিশোধ করায় সংশ্লিষ্ট বাড়িটি দলিল রেজিস্ট্রি করে দেয়ার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ার জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো, তৎসহ জেলা প্রশাসন রংপুর কর্তৃক বর্ণিত বিষয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করনীয় সম্পর্কে বিহিতাদেশ প্রদানের জন্য সবিনয় অনুরোধ জানানো হলো।’
×