ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাক হানাদার আর সিআইএ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

পাক হানাদার আর সিআইএ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

একাত্তরে ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, ভাষার নামে পাকিস্তানী বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। পুরো নয় মাস তারা সারাদেশে তা-বলীলা চালায়। তাদের ‘টর্চার সেলে’ অমানুষিক নির্যাতনে কতজনের প্রাণবায়ু নির্মমভাবে নির্গত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এ দেশকে তারা পরিকল্পিতভাবে শ্মশান ও বধ্যভূমিতে পরিণত করতে সক্রিয় ছিল। পাকিস্তানীরা বাঙালী নিধন করেছে ইসলাম ধর্ম ‘রক্ষার’ নামে। তারপর অনেকটা সময় পার হয়েছে। এতদিন বাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একুশ শতকে এসে ৯/১১ পরবর্তী নিরাপত্তাব্যবস্থা বা ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটির’ দোহাই দিয়ে বন্দীদের ওপর বর্বরতর নির্যাতন ও হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। তেতাল্লিশ বছর আগে এই বাংলাদেশ দখলে নিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বর্বরতার চূড়ান্তসীমায় পৌঁছেছিল। তাদের সেসব বর্বরতাকে সেদিন বৈধতা দিয়েছিল মার্কিন সরকার। তারা সর্বার্থে সহযোগিতা করেছিল বাঙালী নিধনকারী পাকিস্তানীদের। বাঙালীর বিজয়ের চূড়ান্তলগ্নে তারা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। উদ্দেশ্য একটাই, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে রক্ষা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। কিন্তু তাদের সে অপচেষ্টা; সবই নিষ্ফল হয়েছে। একাত্তরের ২৫ মার্চ গণহত্যা দিয়ে পাকিস্তানী জান্তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করাসহ বাঙালী নিধনে যখন মত্ত হয় তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে ছায়ার মতো দাঁড়িয়েছিল। এবং বিষয়টি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে প্রকাশ্যে এড়িয়ে গেলেও পরোক্ষ মদদদান অব্যাহত রাখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানী হানাদারদের পথ ধরে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া দখল করে সেখানে গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে। তারও আগে গত শতকে ভিয়েতনামে তারা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে। কিন্তু পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ফিরে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তারও আগে একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের সহযোগী এবং সমর্থক মার্কিনীরা পরাজয় বরণ করে। মার্কিনীরা সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল ১৯৭৪ সালে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালী জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। অবশ্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ষাট, সত্তর ও আশির দশকে তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করিয়েছে। চিলির আলেন্দে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। সেসব তথ্য আজ আর অপ্রকাশিত নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে যে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছিল পাকিস্তান তা তদন্তে গঠন করেছিল, ‘হামুদুর রহমান কমিশন’। হানাদার বাহিনীর মদদদাতাদের জবানবন্দী ও শুনানি শেষে কমিশন যে প্রতিবেদন পেশ করে, প্রেসিডেন্ট ভুট্টো তা ফাইলবন্দী করে রেখেছিলেন। পরবর্তীকালে খ-িত আকারে যা প্রকাশ হয়েছে তাতে পাকিস্তানী হানাদারদের নির্যাতনের সঠিক তথ্য না থাকলেও তারা যে গণহত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছে তার নমুনা মেলে। হানাদার সেনা কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী ভাষ্যে এটা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, পাকিস্তানীরা পৈশাচিকতার কোন্্ স্তরে এবং তাদের কোথায় বসবাস। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার দেশ যুক্তরাষ্ট্র। একথা বলতে কেউ কেউ বেশ পুলক অনুভব করেন। সম্প্রতি সেই দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ যে নির্যাতন চালিয়েছে তার ওপর মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব বর্বরতম নির্যাতনের চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। মার্কিনীরা আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়াতে একুশ শতকে যে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের নামে, তাতেও কত প্রাণ যে হয়েছে বলি, কত নির্যাতন যে ঘটেছে তার ইয়ত্তা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণগত বৈষম্য এবং নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন কোন নতুন বিষয় নয়। ৯/১১ এর বহু আগে থেকেই বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গসহ সংখ্যালঘুরা। এখানে মার্কিনীদের সঙ্গে পাকবাহিনীর আশ্চর্য মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীও একাত্তরপূর্ব সময় থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা, গুমসহ দেশত্যাগে বাধ্য করে আসছিল। একাত্তরেও সংখ্যালঘুদের হত্যা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট সবই করেছে হানাদার ও সহযোগীরা। মার্কিন সমাজ মানসের গভীরে একটি বর্ণবাদী চেতনা ও বৈষম্যের অস্তিত্ব প্রকট হয়ে পড়েছে। পাকিস্তানীরাও সচেতনভাবে বাঙালী বিদ্বেষ, হিন্দুবিদ্বেষের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈষম্যকে প্রলম্বিত করেছিল। বাঙালীরা ছিল তাদের চোখে ‘হিন্দু’। তাই বাঙালীদের ওরা ‘নওমুসলিম’ বানাতে চেয়েছিল। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিজ জনগণের ওপর নির্যাতন এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। অনুরূপভাবে পাকিস্তানীরা এক সময় বাঙালী আর বর্তমানে নিজ দেশের সংখ্যালঘু জনগণের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদাররা দেশজুড়ে ‘টর্চার সেল’ চালু করেছিল। বাঙালীদের ধরে নিয়ে সেই সেলে নির্যাতন চালানো হতো। দিনের পর দিন নির্যাতন, ধর্ষণ, পীড়ন ও নগ্ন করে ঝুলিয়ে রাখার মতো নির্মম শাস্তির শিকার হয়েছে বাঙালীরা। সুরকার আলতাফ মাহমুদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে কিংবা ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের ‘টর্চার সেলে’ শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীদের যে পদ্ধতিতে নির্যাতন করা হয়েছে, তা বর্ণনার ভাষা নেই। ভয়াল নির্যাতনের হাত থেকে যাঁরা ফিরতে পেরেছেন, তাঁরা যেসব বর্ণনা দিয়েছেন, তা হিটলারের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বন্দী শিবিরের অত্যাচারের মাত্রাকেও হার মানায়। যুবকদের ধরে নিয়ে টর্চার সেলে নখ উপড়ে ফেলা, চোখ তুলে ফেলা, চোখে কালো কাপড় বেঁধে রাখা, সিলিংয়ে পা ঝুলিয়ে রাখা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা, বেয়নেটে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করাসহ মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। আর বাঙালীর অনিবার্য বিজয়ের সঙ্কেত পেয়ে তারা নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। নির্যাতনে কারও মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে, কেউ স্মৃতিভ্রম কিংবা অনিদ্রার শিকার হয়েছে। কেউ আত্মহত্যারও চেষ্টা চালিয়েছে নির্যাতন সইতে না পারায়। কেউ কেউ দীর্ঘদিনেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি। তথ্য উদ্ধারের জন্য হানাদাররা নির্যাতনের নানা কৌশল বেছে নিয়েছিল। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর গুয়ানতানামো শিবিরে সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের আটক করা হয়, তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ে সিআইএ নানা ধরনের নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছিল; যা পাকিস্তানী হানাদারদের অনুরূপ। সন্দেহভাজন আল-কায়েদা জঙ্গীদের ওপর বর্বর নির্যাতনের নীতি নিয়েছিল সিআইএ। আটকদের কাছ থেকে তথ্য বের করে আনার জন্য নিষ্ঠুর সব কৌশল ব্যবহার করেছে তারা। বিশেষ করে বন্দী যদি হয় সন্দেহভাজন। তবে তাদের সেসব কৌশলের মাত্রা ছাড়িয়ে যেত। কোন তথ্য না পেয়েও বন্ধ হয়নি নির্যাতন। সদ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া আফগানিস্তানের বাগরাম কারাগারে বন্দীদের অন্ধকার কক্ষে শেকল পরিয়ে মুখ ঢেকে রাখা হতো এবং নানাভাবে নির্যাতন করা হতো। দিনের পর দিন মারো মারো চোখ বেঁধে রাখা হতো। সিআইএ’র এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর ফলে মার্কিন শাসকরা এক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়ে। এ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও মুখ খুলতে হয়েছেÑ ওবামা অবশ্য সিআইএ’র পক্ষ নিয়ে কথা বলেননি। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন। সিআইএ’র নির্যাতন সম্পর্কে সিনেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দীকে উলঙ্গ করে ফেলে রাখা হতো খোলাস্থানে, নিম্নমানের খাদ্য, ঠা-ায় ফেলে রাখা, ঠা-া পানিতে চুবানো বা কাপড় বেঁধে মুখে পানি ঢালা হতো। বন্দীদের রক্তনালীতে চাপ প্রয়োগ করা, মুখের ওপর জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা, ঘুমাতে না দেয়াসহ নানা অমানবিক সাজা দিত সিআইএ। নির্যাতনের ক্ষেত্রে কখনও বন্দীর কক্ষে ছুটে গিয়ে তাকে একেবারে উলঙ্গ করা, চড়-ঘুষি-লাথি মারতে মারতে বিশাল হলরুমের ভেতর তাকে তাড়া করে বেড়ানো, নোংরা আবর্জনার স্তূপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা, টানা ১৮০ ঘণ্টা পর্যন্ত জাগিয়ে রাখা হতো। এ অবস্থায় পুরো সময়টাই দাঁড়িয়ে থাকতে হতো বন্দীকে। অনেক সময় তাদের হাত শেকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মাথার ওপর ঝোলানো থাকত। মুখে কাপড় বেঁধে পানি ঢালার মতো নিষ্ঠুরতাও চলত। শেকলবন্দী অবস্থায় কানে শ্রুতিযন্ত্র বেঁধে ২৪ ঘণ্টা গান শুনতে বাধ্য করা হতো। ডায়াপার পরিয়ে রাখা হতো টয়লেটে যাবার সুযোগ না দিয়ে। বন্দীর পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশ বা মা-বোনদের যৌন নির্যাতন করা হবে বলে হুমকি দেয়া হতো। কোন কোন বন্দীর পায়ুপথে বিভিন্ন বস্তু ঢোকানো হতো। ডিম থেরাপিও চলত। জিজ্ঞাসাবাদের নামে নানা আগ্রাসী, নানা কৌশল অব্যাহতভাবে নেয়া হতো। সিআইএ’র নির্যাতনের ওপর ৬ হাজার পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের মধ্যে মাত্র ৪৫০ পৃষ্ঠা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে নির্যাতনের বীভৎসতা যে মাত্রা প্রকাশিত হয়েছে বাকি পৃষ্ঠা প্রকাশিত হলে এই অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে বলে বিশ্ববাসীর বিশ্বাস। যেমন এক হাতকড়া পরানো বন্দীকে উলঙ্গ করে ৭২ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে তার পুরুষাঙ্গে একটানা পানি ঢালা হয়েছে। ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনী কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জের এক টর্চার সেলে এক তরুণ যুবকের পায়ে গুলি করে তার দুই পা খোঁড়া করে দেয় হানাদার সিপাহি। বুলেটবিদ্ধ পায়ের চিকিৎসার তো প্রশ্নই ওঠে না। বরং তাকে নির্দেশ দেয়া হয় দাঁড়িয়ে থাকতে। উলঙ্গ করে দু’হাত বেঁধে ভাঙ্গা পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। টানা পাঁচ দিন ঘুমহীন রেখে পালাক্রমে চালানো নিষ্ঠুর অমানবিক নির্যাতনে যুবকটি মারা যায়। ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমর্থন পাওয়া পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের হানাদার সৈনিকরা বাংলায় যে নির্মম হত্যাযজ্ঞসহ নির্যাতনের মোড়কে বাঙালী নিধনে মত্ত হয়েছিল তাতে অজস্র বাঙালী প্রাণ হারালেও হানাদাররা বিজয় লাভ করতে পারেনি। নয় মাসের যুদ্ধে বাঙালীরা তাদের পরাজিত করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের নামে মূলত সন্ত্রাসবাদকে আরও উস্কে দিয়েছে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কায়দায় তারা নির্যাতনের নিত্যনতুন কৌশল বেছে নিয়েছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ। সিআইএ’র বর্বর নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেছেন স্বয়ং জাতিসংঘ মহাসচিব। একাত্তর সালে বাংলাদেশে গণহত্যা চালানো মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জাতিসংঘ একপাও এগিয়ে আসেনি। বরং যুদ্ধাপরাধীদের জন্য তাদের মায়াকান্না প্রশান্ত হয়েছে; তাদের ফাঁসি না দেয়ার জন্য জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র সুপারিশ ও তদ্বির করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাদের মায়াকান্না, সুপারিশকে আমলে নেননি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তার সহযোগী আলবদর, রাজাকার, আলশামস বাহিনীর নির্মমতা সচেতন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ কখনওই ভুলে যাবে না। ৪৩ বছর পর হলেও বাংলাদেশ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করছে এবং তা কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীদের গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচারে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ সহায়তা করেনি বরং বাধা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত দেশ পাকিস্তান। তাই বর্তমানে তারা পরস্পর পরস্পরের কায়দাকানুন অনুসরণ করছে। মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করছে। কিন্তু তাতে কোন কাজ হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান একই কাতারে অনেক দিন ধরে অবস্থান করছে নির্যাতন ও গণহত্যার বিষয়ে। দু’টি দেশই মানবতার বিপরীতে তাদের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে সকল বাঙালীর একটাই দাবি, বিশ্বজুড়ে মানবতাবিরোধী যত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার বিচার ও শাস্তি অবশ্যই হতে হবে।
×